শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বর্ণবাদীদের ব্যাপারে নমনীয় অবস্থান নিয়ে বিপাকে ট্রাম্প

আগস্ট ১৩, নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, গার্ডিয়ান : শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের বর্ণবাদী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘নমনীয় অবস্থান’ নিয়েছেন বলে তার দলের ভেতরে-বাইরে অভিযোগ উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, ভার্জিনিয়ার সাম্প্রতিক উত্তেজনায় সরাসরি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়বাদীদের দায়ী করতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প।
গত শনিবার শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের একটি মিছিল বর্ণবাদবিরোধীদের সমাবেশস্থলে এলে সংঘর্ষের সূচনা হয়। সে সময় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলে পড়ে একটি চলন্ত গাড়ি। ঘটনাস্থলে ১ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হন। পরে ঘটনা পর্যবেক্ষণে ভার্জিনিয়া পুলিশের মোতায়েনকৃত একটি হেলিকপ্টার শহরটির কাছে বিধ্বস্ত হলে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। এতে মোট ৩৭ জন নিহত হন।
শনিবার নিউ জার্সিতে দেওয়া ভাষণে ভার্জিনিয়ার ঘটনাকে সংঘর্ষ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘অনেক পক্ষের বিদ্বেষ, গোঁড়ামি এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছি।’ পরে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র  ট্রাম্পের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলেন, ‘ প্রেসিডেন্ট যেকোনও উৎস ও যেকোনও পক্ষ থেকে সৃষ্ট বিদ্বেষ, গোঁড়ামি এবং সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারী ও বিক্ষোভবিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।’
তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর দল-মত নির্বিশেষে তার সমালোচনা চলছে। ট্রাম্পের এ নিন্দাকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না তারা। ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও ট্রাম্পকে নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে সরাসরি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্প ভার্জিনিয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার ‘বহু পক্ষ’ কথাটির ওপর জোর দেন। ট্রাম্প দাবি করে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কেবল ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা বারাক ওবামার সময় থেকে নয়, আরও আগে থেকে এইসব চলছে। এখন যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তাহল দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ একে অপরকে ভালোবাসতে এবং শ্রদ্ধা করতে আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানান ট্রাম্প।
রুবিও টুইটারে লিখেছেন: ‘শার্লটসভিলেতে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে তা সরাসরি প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে শোনাটা জাতির কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
কোলোরাডোর রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডনার টুইটারে লিখেছেন: ‘হে প্রেসিডেন্ট, আমরা অবশ্যই শয়তানদেরকে তাদের নামেই ডাকব। ওই ঘটনাটি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ ছিল এবং শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাধীরা সে হামলা চালিয়েছে।’
একইভাবে ইউটার সিনেটর অরিন হ্যাচও টুইটারে লিখেছেন, ‘শয়তানকে তার নামেই ডাকা উচিত। দেশের ভেতরকার নাৎসী ধারণাকে চ্যালেঞ্জহীন রেখে কেবল হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রাণ দেননি।’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভাইকে হারিয়েছেন অরিন।
 বেশ কয়েকজন ডেমোক্রেট সদস্য ট্রাম্পের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যেসব ঐতিহ্যের জন্য আমেরিকান পতাকা মাথা সমুন্নত রেখেছে তার পরিপন্থী শার্লটসভিলের ওই মিছিল ও সমাবেশ। ট্রাম্পের উচিত অবিলম্বে এবং কঠোরভাবে এর নিন্দা জানানো।’
হাওয়াইয়ের সিনেটর ব্রায়ান শাটজ টুইটারে লিখেছেন: ‘প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নাৎসীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট নিন্দা প্রকাশের আশা করাটা খুব বেশি চাওয়া নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো দাস প্রথা টিকিয়ে রাখার পক্ষে লড়েছিল। অনেক অঙ্গরাজ্যেই এখনো দাস প্রথার পক্ষের কনফেডারেটপন্থীদের মূর্তি রয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় সরকারি ভবনে পর্যন্ত এখনও কনফেডারেট পতাকা উড়ানো হয়। তবে সম্প্রতি বর্ণবাদবিরোধীদের আন্দোলনের মুখে অনেক জায়গাতেই কর্তৃপক্ষ এ ধরনের মূর্তি অপসারণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীরা ক্ষুব্ধ হয়। তার প্রতিবাদে আয়োজিত একটি মিছিল যখন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থমাস জেফারসনের মূর্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন সেখানে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ