শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তনে সরকার চাপ সৃষ্টি করছে

গতকাল রোববার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের উদ্যোগে গুম, খুনের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্টের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তনে সরকার প্রধান বিচারপতির ওপরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার সকালে এক দোয়া মাহফিলের আগে দেয়ার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা তো এখন প্রধান বিচারপতির ওপরে চাপ সৃষ্টি করছেন, জোর করে তাকে দিয়ে এখন রায় পরিবর্তন করানোর জন্য আপনারা প্রকাশ্যে বলছেন। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ কী করবেন আমরা জানি না, প্রধান বিচারপতি কী করবেন আমরা জানি না। বাংলাদেশের জনগণ কখনো আপনাদের এই অন্যায়কে মেনে নেবে না। বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাদের সকল দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। গত ৮ অগাস্ট লন্ডনের মুরফিল্ড আই হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ডান চোখে অস্ত্রোপচারের পর তার আরোগ্য কামনায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল।

সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এখনো বলি, এভাবে কথা-বার্তা না বলে, এভাবে গণতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস না করে, বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে সোজা রাস্তায় আসুন, সোজা পথে ফিরে আসুন, সিদা পথে চলুন। নির্বাচনের জন্য একটা সহায়ক সরকারের মাধ্যমে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় আপনাদের (আওয়ামী লীগ) সাধারণ সম্পাদক সাহেবই বলেছেন যে, পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। 

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে (রোববার) আওয়ামী লীগের নেতারা, সরকারের মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিষোধগার করছেন। অপরাধ কী? সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে, একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে- ষোড়শ সংশোধনীতে আওয়ামী লীগ সরকার বিচারপতিদের অভিসংশন করবার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে দিয়েছিলো। কোন সংসদ? যে সংসদ নির্বাচিত নয়, যে সংসদে জনগণের ম্যান্ডেট নেই, যে সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৫ জন মানুষও ভোট দিতে যায়নি। যৌক্তিকভাবে তারা (সুপ্রিম কোর্ট) সেই সংসদের হাতে সেই অধিকার দেননি। তারা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছেন যা অতীতে ছিলো, তাদের কাছেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা যে ভাষায় কথা বলছেন, এটা কোনোভাবে গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না।

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গমনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে গেছি, আমরা শঙ্কিত হয়ে গেছি পত্রিকার খবর দেখে। খবর এসেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল (শনিবার) রাতে প্রধান বিচারপতির বাসায় গেছেন। কখন গেছেন? তার আগে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করে তারপরে তিনি প্রধান বিচারপতির বাসাভবনে গেছেন। আমি আরো বিস্মিত হলাম, সেখানে তিনি নৈশ ভোজ করেছেন। শুধু তাই নয়, গতকাল (শনিবার) একজন মন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে তুই-তোকারি করেছেন, অশালীন ভাষায় কথা বলেছেন। এমন কথা বলেছেন যে হাত এতো লম্বা হয়ে গেছে, হাত কেটে দেয়া হবে। এই যে সন্ত্রাসের ভাষা, এই যে সহিংসতার ভাষা, এই যে অসংসদীয় ভাষা- এটা একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখেই শোভা পায়।

মির্জা ফখরুল শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা দুঃখিত হই, লজ্জিত হই, শঙ্কিত হই যে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবার জন্য আবার কী নতুন কী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে? একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে এই অপশক্তিকে যদি আমরা পরাজিত করতে না পারি, এই দুঃশাসনকে সরাতে না পারি তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না, দেশের মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পাবে না। 

দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের প্রয়োজন, জনগণের প্রয়োজন, সময়ের প্রয়োজন আজকে মুখ খুলতে হবে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, এই পাশবিক নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে। ভুলে গেলে চলবে না যে, তারা আমাদের ভাইদেরকে এক এক করে মেরেছে, ভুলে গেলে চলবে না যে, তারা আমাদের সহকর্মীদের গুলী করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে আমরা মহানগর বিএনপি উত্তরের উদ্যোগে কয়েকটি পরিবারের হাতে কিছু সহযোগিতা দিয়েছি। আপনাদের মনের মধ্যে সবসময় আগুন থাকা উচিৎ যে, আপনাদের সহকর্মীদের এভাবে হত্যা করা হয়েছে, গুম করে ফেলা হয়েছে। সেই আগুনকে প্রশমিত করতে দিলে চলবে না। এই অন্যায়কে পরাজিত করতে হলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

 ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের পরিচালনায় ছাত্র দলের সভাপতি রাজিব আহসানও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন। দোয়া মাহফিলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মহানগর বিএনপির মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, যুব দলের এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শোকবার্তা: শনিবার দিবাগত রাতে বরগুনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান কামালের (৬৪) মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনে বিশ্বাসী মরহুম আক্তারুজ্জামান কামাল বরগুনা জেলা বিএনপি ও আমতলী পৌর বিএনপি-কে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তা এলাকার নেতাকর্মীদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে তার সাহসী ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। মরহুমের পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসীর মতো আমিও তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় মরহুম আক্তারুজ্জামান কামাল এর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ