শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

টানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

শাহজালাল শাহেদ, চকরিয়া : চকরিয়ায় টানা ৩দিনের ভারী বর্ষণে ফের পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। সৃষ্টি হয়েছে দ্বিতীয় দফা বন্যার। নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘরগুলো তলিয়ে গেছে গলা পরিমাণ পানিতে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বীজতলাসহ ফসলি জমির। 

উজান থেকে গতি নিয়ে নেমে আসা পানির ¯্রােতে মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসতবাড়ি ও দোকানঘরসহ ৫টি আধাপাকা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চকরিয়া পৌরশহরের ১নং শহররক্ষা বাঁধটি। যে কোন মুহূর্তে এ বাঁধটি বিধ্বস্ত হওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসী।

মৎস্য সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল মজিদ জানান, উজান থেকে নেমে আসা মাতামুহুরী নদীর পানি, কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও সাগরে জোয়ারের প্রভাবে উপজেলার ৪৫ হাজার একর চিংড়ি ও মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শত’কোটি টাকার।

এদিকে দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়া পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণের চাউল ছুটে যান চকরিয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক। তিনি কৈয়ারবিলের সংখ্যালঘু পরিবারসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানান। 

মণিরামপুর (যশোর)

ভারী বর্ষণে যশারের মণিরামপুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে শ্যামকুড়, হরিহরনগর, মনোহরপুর, চালুয়াহাটী, মশ্মিমনগর, কুলটিয়া, ঝাপা, নেহালপুর, খানপুর, ও দূর্বাডাংগা ইউনিয়নের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। অতি বর্ষণের ফলে নদী, খাল, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত একাকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পরিবার তাদের বাড়ী-ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। টানা ৬ দিনের ভারী বর্ষণ, কপোতাক্ষ নদের উজানের পানি এবং ভবদহের সমস্যার কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতা রূপ নিতে চলেছে। এর ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রমসহ নিম্নাঞ্চলের জনবসতিরা তাদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইয়ারুল হক জানিয়েছেন, গত সোমবার পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান ২০ কোটি টাকার উপর রেকর্ড করা হয়েছে। যা সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দপ্তরে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত কুমার তরফদার জানিয়েছেন, ৬ দিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ৩শ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ন বিনষ্ট হতে চলেছে। ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ার কবির জানিয়েছেন, ৩শ ৮০ হেক্টর জমির মাছের ঘের তলিয়েছে। বিশেষ করে পান চাষিরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। হরিহরনগর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুর সাত্তার জানিয়েছেন, কপোতাক্ষের উজানের পানিতে তার ইউনিয়নের ৯/১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। মশ্মিমনগর ইউপি চেয়ারম্যার আবুল হোসেনও একই কথা বলেছেন। শ্যামকুড় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি জানিয়েছেন, টানা এ বর্ষণের ফলে এই ইউনিয়নটি সব চাইতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ইউনিয়নের চিনাটোলা, হাসাডাঙ্গা, শ্যামকুড় ও আমিনপুরসহ ৯/১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) লিংকন বিশ্বাস জানিয়েছেন, গত ৬ দিনের বৃষ্টিপাতে প্রায় অর্ধশতাধিক কাচা-পাকা বাড়ী-ঘর ধ্বসে পড়েছে। বাড়ী-ঘর ছাড়া শতাধিক পরিবার ২টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়াসহ যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের চিনাটোলা অঞ্চলে প্রধান সড়কের উপর টোং ঘর বেঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রকল্প কর্মকর্তা ইয়ারুল হক জানিয়েছেন, জমে থাকা পানি নিষ্কাশন না হওয়ার ফলে জনগণ আতংকিত হয়ে পড়েছেন। কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বলেন, তার ইউনিয়ন ভবদহ লাগোয়া ১৮টি গ্রামের মধ্যে ১০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের প্রায় অধিকাংশ মাছের ঘের বিলের জলের সাথে একাকার হয়ে গেছে। সরকারী হিসেবে টানা ৬দিনের বৃষ্টিপাতে ১১টি ইউনিয়নের সাড়ে ৪ হাজার পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।  

অভয়নগর (যশোর)

গত ৪ দিনের টাকা বৃষ্টিতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসত বাড়ি ঘরে পানি উঠায় ঠাই হচ্ছে অন্যের বাড়ির বারান্দায় কিংবা সড়কের উপরে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বেশি। তাছা চারিদিকে পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিষাক্ত সাপ-পোক বাড়িতে প্রবেশ করছে। যে কারণে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে ওই সব পরিবারের। বেশি বিপাকে রয়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। তাদেরকে নিরাপদ স্থানে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গৃহকর্তাদের। তাছাড়া একমাত্র উপার্জনের স্থান মৎস্য ঘের তাও পানিতে তলিয়ে গেছে আগেই। দায়-দেনা হয়ে সারা বৎসর কষ্ট করে মৎস্য ঘেরে মাছ উৎপাদন করে আশায় বুক বেধেছিল যারা তাদের চোখেও ধুয়াশা ছাড়া কিছুই নেই। তাদের জিজ্ঞাসা এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়? 

খোজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড চেঙ্গুটিয়ার যে সমস্ত বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করে তাদের দুর্ভোগ দেখতে এখনও কেউ যায়নি বলে তাদের অভিযোগ। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ ওয়ার্ডে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি মৎস্য ঘের ও প্রায় শতাধিক পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। 

পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে মৎস্য ঘের কম থাকলেও বাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুরাবস্থার অন্ত নেই তাদের। তবে এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক পুকুর তলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

ঝালকাঠি

লঘুচাপের প্রভাবে ঝালকাঠিতে গত ৬ দিন ধরে কখনো হালকা, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে শ্রমজীবী মানুষদের রোজগারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় অফিসগামী কর্মজীবী মানুষ ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। যা রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্বদিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ কারণে দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। বরিশাল আবহাওয়া অধিদফরের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. মিলন হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ৮ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুই এক দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। লঘুচাপের প্রভাবে পায়রা, মংলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত এবং অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরের জন্য ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ পরিচালক আজমল হুদা সরকার গণমাধ্যমকে জানান, বরিশাল নদী বন্দরের জন্য ১ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় অভ্যন্তরীণসহ সকল রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ৬৫ ফুটের নিচের লঞ্চগুলো চলাচলে আগে থেকেই নিষেধ করা হয়েছে এবং সেগুলো বন্ধ রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ