বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ক্ষমতাসীন আ’লীগের বিদায়ের সুর ধ্বনিত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার : চারদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদায়ের সুর ধ্বনিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশব্যাপী এখন একটাই আওয়াজ। দুর্নীতিবাজ ও অত্যাচারী সরকারকে বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, পরিবর্তনের বাতাস বইছে সর্বত্র। এটি ঠেকানো যাবে না। জুলুম-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোন স্বৈরাচার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামী লীগও পারবে না। এ সময় তিনি দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে সরকার ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ প্রণয়ন করেছে বলে অভিযোগ করেন। গতকাল বুধবার দুপুরে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রিজভী বলেন, চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন যাবার পর বর্তমান সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কতই না প্রলাপ বকছেন। প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতারা বললেন তিনি (খালেদা জিয়া) মামলার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, এখন তারা বলছেন ষড়যন্ত্র করতেই লন্ডন গেছেন। এরপরে হয়ত তারা আরেক নতুন তত্ত্ব দেবেন।

ষড়যন্ত্রে লাভ হবে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন জোটের মন্ত্রী ও নেতারা মুনাফা, নগদ লাভ ইত্যাদির জন্যই প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে লন্ডনে দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বে মেতে উঠেছেন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এসব অপপ্রচারে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে সরকার তার এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়েছে। তিনি বলেন, কিভাবে দুঃশাসনকে আরো দীর্ঘায়িত করা যায়, কীভাবে আরেকটি একদলীয় পাতানো নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় আসা যায়, সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই কারণে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করে দলের সিনিয়র নেতাদের নামে বদনাম ও কুৎসা রটনার অপচেষ্টার ধারাবর্ষণ চলছে।

রিজভী বলেন, আমরা বলতে চাই, এতে কোনো লাভ হবে না, চক্রান্ত ও নীলনকশা করে পার পাওয়া যাবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। জুলুম, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো স্বৈরাচার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, ইতিহাসে তাদের যে পরিণতি লিপিবদ্ধ আছে, সেটা পাঠ করুন। অচিরেই আপনাদের মাত্রাহীন দম্ভোক্তি জনগণের ক্ষোভের চিতায় আত্মাহূতি হবে।

সরকারের এজেন্সিগুলো দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খানসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের নাম উদ্ধৃতি করে কয়েকটি ওয়েভসাইটে চেয়ারপার্সন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে ‘ভিত্তিহীন, নোংরা ও বানোয়াট কল্পকাহিনী’ প্রচারের নিন্দা জানান রিজভী। তিনি বলেন, ১/১১ এর সরকারও তো কত অপচেষ্টা করেছিল কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আপনারাও পারবেন না। অপপ্রচার ও কুৎসা রটনাকারীদের মানুষ ঘৃণা করে, এরা ইতিহাসের ঘৃণ্য চরিত্র। এরা অসভ্যতা এবং নোংরা সংস্কৃতির ধারক। 

রিজভী বলেন, কিভাবে দুঃশাসনকে আরো দীর্ঘায়িত করা যায়, কিভাবে আরেকটি একদলীয় পাতানো নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় আসা যায় সেই ষড়যন্ত্রেই লিপ্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। আর সেই কারণে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিগুলোকে মাঠে নামিয়ে মিথ্যা কল্পকাহিনী প্রচার করে যাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রমূলক রটনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করা। তাতে কোন লাভ হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী সাধারণ নির্বাচন হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ইস্পাতকঠিন মনোবলে ঐক্যবদ্ধ। কাজেই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র-নীলনকশা করে আর পার পাওয়া যাবে না। চারদিকে আপনাদের বিদায়ের সুর ধ্বনিত হচ্ছে। পরিবর্তনের বাতাস বইছে সর্বত্র। এটি ঠেকানো যাবে না। জুলুম-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোন স্বৈরাচার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, ইতিহাসে তাদের যে পরিণতি লিপিবদ্ধ আছে সেটা পাঠ করুন নইলে আপনাদেরকেও তাদের মতোই ভাগ্য বরণ করতে হবে। 

রাজধানীসহ দেশব্যাপী জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, কার্যালয়ের ভেতরেও পানি ঢুকে গেছে। এই দুর্যোগের মধ্যে আমাকে রিকসা নিয়ে পানি ডিঙিয়ে আসতে হয়েছে। এটা হচ্ছে উন্নয়নের নমুনা। যে উন্নয়ন আপনারা দেখছেন যে, পল্টনের সড়ক এখন যমুনা, এটা শেখ হাসিনার উন্নয়নের নমুনা।

তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ‘মণিকাঞ্চন’ হিসেবে অভিহিত করছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই, বিএনপি নয় ষড়যন্ত্র করছেন আপনারা। তার উপর আপনাদের সাথে মনিকাঞ্চন হিসেবে যুক্ত আছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেব। এদেশে যত ষড়যন্ত্র তার জনকই হচ্ছেন এই তথ্যমন্ত্রী। এখন চালাচ্ছেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে উদ্দেশ করে কুৎসা রটনা। এদেশে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো, ভারতীয় হাইকমিশনে আক্রমণ- এসব করে বাংলাদেশে একটি আগ্রাসনের পরিবেশ সৃষ্টি কারার এই মহাচক্রান্ত সৃষ্টির সাথে যে ব্যক্তিটা জড়িত সেই ব্যক্তিটাই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যমন্ত্রী। সুতরাং সরকার ও ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে কী বীভৎস চক্রান্ত হতে পারে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর, বিরোধী দলের ওপর, গণতান্ত্রিক শক্তির প্রধান সিপাহশালার বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং বিএনপির ওপর এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়। 

গতকাল বুধবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ৪ যুবকের বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের ঘটনারও নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশজুড়ে যে ভয়াল দুঃশাসন চলছে সেটির ভয়াবহতার মাত্রা বর্তমানে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার, নির্যাতনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ওপরও সরকারের নির্যাতনের খড়গ চলছে বিরামহীনভাবে। মানুষ ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নামলেই চালানো হচ্ছে গুলী আর টিয়ারশেল। আর সরকারি দমনমূলক এই আচরণের মাত্রা যতোই বাড়ছে ততই সরকার আরো বিতর্কিত হচ্ছে। আর তাদের বিতর্কিত অপকর্ম ঢাকতে একটার পর একটা নতুন নতুন ঘটনার অবতারণা করছে। শাহবাগে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ যেভাবে নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলী ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে তাতে মেধাবী ছাত্র সিদ্দিকুরের দু’চোখ অন্ধ হয়ে গেছে সেটি এখন শুধু দেশবাসীই নয় বিশ্ববাসীর কাছে সরকারের হিং¯্রতার ভয়াবহতা আবারো প্রকাশ পেল। এ নিয়ে দেশজুড়ে যখন আলোড়ন চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে গণমাধ্যমে দেখলাম-চার জন যুবককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা সিদ্দিকুরের ইস্যুকে অন্যদিকে মোড় নেয়াতেই করা হয়েছে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই রক্তাক্ত অনাচার আর কতদিন চলবে ? কতদিন বাংলাদেশ বধ্যভূমি হয়ে থাকবে ? জালিমশাহীর বর্বরের দল কতদিন দাপিয়ে বেড়াবে জনপদের পর জনপদে? মূঢ় অহমিকায় অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে আর কতদিন আকাশে বাতাসে মৃত্যুর কাতরধ্বণি শোনা যাবে ? 

এসময় ফেনী জেলাধীন সদর উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলামকে জেলগেট থেকে গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ