শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

উলিপুরের জনপ্রিয় ক্ষীরমোহনের কথা

উলিপুরের জনপ্রিয় আদি মিষ্টান্ন ক্ষীরমোহন

মাসউদ রানা, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : ভোজনের রসনায় জেলার অনন্য এক মিষ্টান্নের নাম ‘ক্ষীরমোহন’। এটি উলিপুরের আদি মিষ্টি না হলেও পঞ্চাশ দশকের শেষ ও ষাটের দশকের শুরুতে উলিপুরে তৈরি ও বিপনন শুরু হয়। ওই সময় এ অঞ্চলের মানুষজনের আর্থিক স্বচ্ছলতা কম থাকায় তা কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল। তখন একটি ক্ষীরমোহনের দাম ছিল ৬ আনা। যে কারণে তখন রেস্টুরেন্ট ও বাড়ির টেবিলে এই মিষ্টান্নটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে এর স্বাদ ও গন্ধ তখন থেকেই ছিল জিভে পানি আসার মত।
আশির দশক থেকে জনপ্রিয় এই মিষ্টির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরের বিভিন্ন দেশে। জানা যায়. ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ ও বঙ্গবন্ধু এই মিষ্টি খেয়ে ভুঁয়সী প্রশংসা করেছেন।
ক্ষীরমোহন তৈরির ইতিহাস প্রসঙ্গে প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে ফরিদপুরের গোয়ালন্দ থেকে সুধীর সরকার (ওরফে সুধীর ময়রা) নামে এক ব্যক্তি উলিপুরে আসেন। তিনি মিষ্টির কারিগর হিসেবে চাকুরি নেন কছির মিয়ার রেস্টুরেন্টে। চাকুরির শর্ত ছিল, তিনি এমন মিষ্টি বানাবেন যা দিয়ে দোকানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। রাজি হন সুধীর ময়রা। তিনি চাকুরির শুরুতে এই এলাকায় প্রথম ক্ষীরমোহন তৈরি করে বাজিমাত করে ফেলেন। তারই দেখা, উলিপুরের প্রখ্যাত মিষ্টান্নের কারিগর মনমোহন হালাই তৈরি করেন ক্ষীরমোহন।  জানা যায়, ওই সময় আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য কানাই লাল সরকার এই মনমোহন হালাইয়ের কাছ থেকে তৈরি করে নেয়া ক্ষীরমোহন ও ‘শেখ মুজিব’ নামাঙ্কিত সন্দেশ উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই ক্ষীরমোহন খেয়ে ভূঁয়সী প্রশংসা করেন বলে জানা যায়। এছাড়াও, এই জেলা ও বিভাগে কোনো সরকার প্রধান, মন্ত্রী ও বিদেশি অতিথি এলে তাদের ভোজনের অনুসঙ্গ হিসেবে দেয়া হয় ক্ষীরমোহন।
নদীবেষ্টিত উলিপুরের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস, লতা-পাতাসহ নানান গো-খাদ্য বাড়িতে পালা গাভিকে খেতে দেয়া হতো। তাই ওই সময় গরুর দুধ ছিল খাঁটি দুধের গুনাগুণ সমৃদ্ধ। সেই দুধ থেকে তৈরি ক্ষীরমোহন স্বাদে-গন্ধে ছিল অনন্য। এখনকার চেয়ে দেখতে একটু লম্বাটে এই মিষ্টি ক্ষীরের প্লেটে ভরিয়ে টেবিলে উপস্থাপনের আগেই ‘ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনম’ হয়ে যেতো। এখন দেশে উলিপুর শব্দ উচ্চারিত হলে তার সাথে উচ্চারিত হয় অসাধারণ এই মিষ্টির নাম ‘উলিপুরের ক্ষীরমোহন’।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ