বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মস্কোতে নতুন আলোকধারা

মস্কো থেকে মুহাম্মদ আলম নামে একজন কোলকাতার পশ্চিমবঙ্গ বুদ্ধিজীবী মহলের ফেসবুক টাইমলাইনে একসঙ্গে ১০ লাখের বেশি মুসল্লির ঈদজামায়াতের একটি অভাবনীয় ছবি পাঠিয়েছেন। মক্কা ও মদিনা ব্যতীত পৃথিবীর কোথাও এতোবড় ঈদজামায়াত অনুষ্ঠিত হয় বলে আমাদের জানা নেই। গত ২৫ জুন রোববার সকালে সেখানকার একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে একমাস সিয়াম সাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের সালাতের জামায়াতের জন্য সমবেত হয়েছিলেন মুসলমানরা। মসজিদটির ছবি দেখে যা মনে হয়, কয়েক হাজার মুসল্লির জায়গা হবে এর ভেতর। সম্ভবত এই মসজিদটিই কিছুদিন আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়। মস্কোসহ রাশিয়াতে একসময় অনেক মসজিদ থাকলেও সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। পানশালা আর ক্লাবঘরে পরিণত করা হয় আল্লাহর ঘর মসজিদগুলোকে। একথা সবার জানা। সোভিয়েত সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার পর এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। মসজিদগুলো খুলে যায়। শুরু হয় মসজিদে আবার নামায। নতুন মসজিদ তৈরিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর সদ্য নির্মিত বিশাল মসজিদটি এই সুযোগেরই স্বাক্ষর। এই মসজিদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইসলামিক কালচারাল সেন্টারও। কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে এ সেন্টারে। মস্কোর এই মসজিদটিকে কেন্দ্র করে ঈদজামায়াতের জন্য এ বিপুলসংখ্যক মুসল্লির ঈদের জামায়াতে সমবেত হওয়া মস্কোর জন্য নতুন ও মধুর একটি দৃশ্য এটা। একসময় এখানে কারুরপক্ষে মুসলিম বলে পরিচয় দেয়াও প্রায় অসম্ভব ছিল, সেখানে ঈদের দিন এত বড় সমাবেশ অকল্পনীয় এক ব্যাপার। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিকাশের যুগেও কোথাও কোথাও যেখানে মুসল্লিদের সিয়ামপালনে বাধা দেয়া হয়েছে, ভারতের কোথাও কোথাও রোযাদারদের রোযা ভাঙতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে, সেখানে মস্কোতে  ১০ লাখ মুসল্লির একসঙ্গে ঈদজামায়াত বিরাট ঘটনা বটে। মস্কোর এ মসজিদে যখন ঈদুল ফিতরের এতোবড় জামায়াত অনুষ্ঠানের আয়োজন, তখন সেখানে সারা রমযান ইফতার, তারাবিহ, কুরআন শিক্ষাসহ আরও দীনী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে বলে মনে হয়।
শাশ্বত কুরআনের আলো যেখানে পৌঁছে যায়, সেখান থেকে অন্ধকার অপসারিত হবে এটাই চিরসত্য। মস্কোতেও তাই ঘটছে বলে আমরা মনে করতে পারি। অন্যথায় মুসলিম বলে কারুর পক্ষে নিজের পরিচয় দেয়া যেখানে ছিল দুরূহ, সেখানে এতোবড় ঈদের জামায়াত করবেন তারা, তা কি ভেবেছিলেন কেউ? নিশ্চয়ই না। কিন্তু তা এখন বাস্তব। আলোর বন্যায় উপচে পড়ছে রাশিয়ার রাজধানী মহানগরী মস্কো। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সালাত আদায় করেছেন মুসল্লিরা। কোনও বাজে হৈ চৈ নেই। হুড়োহুড়ি নেই। মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছগাছড়া বাঁচিয়ে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট না করে চমৎকারভাবে জামায়াত সম্পন্ন করে তকবির দিতে দিতে ঘরে ফিরে গেছেন সব। এ দৃশ্য দেখে অন্য ধর্মাদর্শসহ নাস্তিক্যবাদের অনুসারীরাও অভিভূত। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ থাকলেও তাদের প্রায় নির্বিকারই থাকতে হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে ঈদের জামায়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব মোতায়েন করতে হয় নিরাপত্তার জন্য। ঈদের আনন্দ ও খুশিতে আমাদের এমন আশঙ্কা আর বিড়ম্বনা কদ্দিন থাকবে কে জানে? যা হোক, মস্কো মহানগরীর দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ও সেদেশের সরকার নিশ্চয়ই মুসলিমদের ঈদ বা কালচারাল অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে সহানুভূতিশীল। অন্যথায় এমন একটি অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন হতে পারে না। এছাড়া যারা বিশাল এ সমাবেশের আয়োজন করেছেন তাদেরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়েছে। মস্কোর এ আলোকধারা অব্যাহত থাকুক, আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করবো আগামীতেও।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ