শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দেশে নজীরবিহীন কলঙ্কজনক পরিবেশ তৈরী করছে আ’লীগ

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: চট্টগ্রামে বিএনপি মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী ও রাজনীতির মাঠে সজ্জন ব্যক্তি বলে পরিচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র নেতাদের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীন আ’লীগ নেতাদের নিন্দা জানানোর বক্তব্যকে বিশ্বাস করছে না দেশের জনগণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ দেশবাসী ক্ষমতাসীনদের মুখে দোষীদের শাস্তির বক্তব্যকে ‘ভূতের মুখে রাম রাম’-এর সাথেই তুলনা করছেন। তারা বলছেন, বিএনপিসহ বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাদের উপর এটিই প্রথম হামলার ঘটনা নয়। এর আগেও জাতীয় প্রেসক্লাবে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব। এ ছাড়া বিএনপি চেয়রাপার্সন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপরও হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। রাজধানীতে মেয়র নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সময় তার উপর একাধিকবার হামলা করা হয়েছে। খালেদা জিযাকে প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তারা। এছাড়া আদালতে যাওয়ার পথেও তার উপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। গুলশানে তার রাজনৈতিক কাযালয়েও হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতোসব হামলার পেছনে ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে। বিভিন্ন দৈনিকের প্রতিবেদন বলছে, এসব হামলা করছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। ফলে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে মির্জা ফখরুলের উপর হামলার পর আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক এর নিন্দা জানিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন সেটিকে নিছক লোক দেখানোই বলে মনে করেন সবাই। দেশের ভেতরে এবং বাইরে সরকারের এমন আচরণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, বিএনপি মহাসচিবের উপর হামলার ঘটনা দেশের ইতিহাসে একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তবে তিনি বলেন, এই ধরনের হামলা এবারই প্রথম নয়। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপরও একাধিকবার চামলা চালানো হয়েছে। তার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তার নিরাপত্তাকর্মীরা অনেকেই আহত হয়েছেন। এছাড়া বিরোধী জোটের অন্যান্য নেতাদের উপরও দমনপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এগুলোর সাথে সরকারি দল জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এসব ঘটনার কোনো বিচার না হওয়ায় এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাঙ্গামাটির দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে যাবার পথে রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতাদের উপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে হামলা করেছে, সেটি শুধু গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়, এতে রয়েছে একধরনের অশনিসংকেত। এ ধরনের হামলা রাজনীতিকে হিংসা ও প্রতিহিংসার দুষ্টচক্রের পথে ঠেলে দেয়। আশঙ্কা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ আবারো অতীতের মতো সেই হিংসার সংস্কৃতিতে ফিরতে শুরু করল কি-না। 

সূত্র মতে, গত ১৩ জুন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো ভূমিধসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটিতে। সেখানে মারা গেছে কমপক্ষে ১২০ জন। পাহাড়ধসের দিনে প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন এবং স্টকহোমে তিন দিনের সফরে রওনা হওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া। তার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতাদের ব্যঙ্গ-বিদরুপ করতে ছাড়েননি। বিএনপি কেন রাঙামাটি যায়নি, সেই প্রশ্ন তিনি যেমন তুলেছেন, তেমনি গলা মিলিয়েছেন হাছান মাহমুদও। এর আগে সুনামগঞ্জের হাওরে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও একই ধরনের রেষারেষি এবং দোষারোপের রাজনীতি হয়েছে। তবে হাওরে সবার আগে বিএনপি ত্রাণ বিতরণ করেছে। পরবর্তীতে বিএনপির নেতাদের হাওরে যেতে বাধা দেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামে ব্যাপক পাহাড় ধসে হতাহতের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে রোববার চট্টগ্রামে যান মির্জা ফখরুল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল তার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে তাকে সেখানে যেতে দেয়নি। আহত হয়ে তাকেসহ অন্যদের চট্টগ্রামেই ফিরে আসতে হলো। 

হামলার পরের দিন দেশের প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি মহাসচিবের গেঞ্জি পরা এবং হাতে ব্যান্ডেজসহ ছবি ছাপা হয়েছে। দু-একটি কাগজে হামলাকারীদের কয়েকজনের লাঠিসোঁটাসহ তার গাড়িবহরের দিকে তেড়ে যাওয়ার ছবিও ছাপা হয়েছে। ইত্তেফাক-এর বর্ণনায় হামলায় নেতৃত্বদানকারীর পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছে, রাস্তা অবরোধ করে বিএনপির নেতাদের গাড়ি আটকে হামলা চালানো হয়। তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও হামলাকারীদের উৎসাহে ঘাটতি দেখা যায়নি। তাদের অনেকেই জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে হামলা চালায়। বিএনপির নেতারা গাড়ি ঘুরিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ এবং সংলগ্ন মাদরাসায় আশ্রয় নেন। সেখানেও হামলার চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। বিএনপির নেতারা এরপর চট্টগ্রাম ফিরে এসে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন দলকেই দায়ী করেছেন। মির্জা ফখরুল স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, ওই এলাকার এমপি আওয়ামী লীগের বড় পদে আছেন। তার ইন্ধন আছে কি না সেটা আপনারা তদন্ত করে দেখবেন।

মির্জা ফখরুলের ওপর হামলা হয়েছে যে রাঙ্গুনিয়ায়, সেই এলাকার বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ঘটনাটিকে রহস্যজনক অভিহিত করে বলেছেন, ‘বিষয়টিকে নাটক মনে হচ্ছে।’ তার দাবি, বিএনপির নেতাদের গাড়িবহর দুজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়ায় উত্তেজিত লোকজন কিছু একটা করেছে। ‘ঠাকুর ঘরে কে রে’, জিজ্ঞাসার আগেই তার ‘আমি কলা খাইনি’ ব্যাখ্যাটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হামলা কারা করেছে সেটি বুঝতে অসুবিধার হওয়ার কথা নয়। 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মির্জা ফখরুলের ওপর হামলাকে নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছেন এবং এর তদন্ত হবে বলে ঘোষণা করেছেন। ওবায়দুল কাদের ঘটনার সরাসরি নিন্দা করতে কিছুটা কুণ্ঠিত ছিলেন বলেই ইঙ্গিত মেলে। দলের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে ইন্ধনের অভিযোগ ওঠায় তার মধ্যে যদি কোনো কুণ্ঠা তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে তার তদন্তের প্রতিশ্রুতিতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যায় না। হয়েছেও তাই। ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। 

দেশের জনপ্রিয় একটি দৈনিক গতকাল মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার ঘটনায় দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। ‘প্রথমত, সরকার বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেবে কি না? বিএনপির কাউন্সিলের পর গত দেড় বছরে ঢাকায় কোনো ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেয়া এবং দলীয় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ঠুনকো অজুহাতে তল্লাশি চালানোর মতো ঘটনায় সে রকম ইঙ্গিত লক্ষণীয়। মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার নিন্দা জানাতে গিয়ে খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, বিএনপি নির্বাচন করতে চায় বলেই তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এসব করা হচ্ছে। এ ধরনের হামলা খালেদা জিয়ার দাবির পক্ষেই সন্দেহ জোরদার করতে পারে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ক্ষমতাসীন দল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিএনপির ন্যায্য ও স্বীকৃত অধিকারগুলো দেওয়ার পক্ষে থাকে, তাহলে সরকারের ভেতরে শক্তিশালী কোনো গোষ্ঠী কি তা নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে? তা না হলে যে ধরনের হামলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করে, সে রকম ঘটনা সরকার কেন সহ্য করবে? তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে রাঙ্গুনিয়ার ঘটনা প্রমাণ করে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ওপর প্রেন্দরর যেমন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনি প্রশাসনও অকার্যকর?

দ্বিতীয় প্রশ্নটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার জন্য ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর ১৮ জুনের বাংলাদেশ বিষয়ক সম্পাদকীয়ের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পত্রিকাটি। ‘পিপল ডিজার্ভ বেটার: বাংলাদেশ’স স্টেরাইল অ্যান্ড পয়জনাস পলিটিকস ডু ডিজসার্ভিস টু ইটস পিপল’ শিরোনামের এই সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি বলেছে, উভয় দলের রাজনীতিকেরা নিষ্ফলা রেষারেষিতে লিপ্ত থেকে দেশের মানুষের ক্ষতি করছেন। তাদের উচিত গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকারের দিকে নজর দেওয়া, শক্তিপ্রয়োগ এবং অসহিষ্ণুতা ত্যাগ করা এবং জনগণের চাহিদা পূরণে মনোযোগী হওয়া।

আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে সবক চাই না। সেটা মোটেও শোভনীয় নয়। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলালে আমরা কি আর অন্যের মুখ বন্ধ রাখতে পারব?’

সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন সত্ত্বেও বিরোধী জোট সাম্প্রতিক সময়ে পজেটিভ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেটিকে বাধাগ্রস্থ করতে সরকারি দল বারবার হামলার পথ বেঁচে নিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, বিএনপিকে উত্তেজিত করে এর ফল ভোগ করা। তারই অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পুলিশ তল্লাশির নামে ভাংচুর করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে দমনপীড়ন, হত্যা, গুম ও গ্রেফতার চলছে-তাতেও বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট রাজপথের কোনো আন্দোলন ঘোষণা না করায় অনেকটা ভীতিসন্ত্রস্থ আওয়ামী লীগ। বিরোধী জোটের এমন নমনীয়তাকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে না। 

গত কয়েক বছর বিরোধী জোটের উপর কি ধরণের নির্যাতন চলছে তা ফুটে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’-এর এক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নিরাপত্তা রাষ্ট্রের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী মতের মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। গুম ও অপহরণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার গ্রুপ ও গুম হওয়া পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতে পারে। কিন্তু তাদের পরিবার জানে না তাদের অবস্থান কিংবা তারা জীবিত না মৃত। গেল ৫ বছরে শত শত বাংলাদেশী বিশেষ করে বিরোধী মতের মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হয়েছে বলে তাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু হয়েছে অথবা জেলে আছেন, তাদের পরিবার এখন নজরদারিতে রয়েছেন বলে ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র মতে, ২০০৮ সালে বিতর্কিত এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের স্টীমরোলার শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে সেটি বাড়তে থাকে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনার জন্য সাজানো মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে। গত কয়েক বছরে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উপর সরকারের দমনপীড়ন ছিল চোখে পড়ার মত। এমনিতেই দলটি কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছেনা। দেশব্যাপী তাদের অফিসগুলোও বন্ধ। কেন্দরীয় নেতারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। যারা বাইরে আছেন তাদের অধিকাংশই এখানে-সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারের রোষানলে পড়ে পরিবারগুলোও এখন অসহায়। জামায়াত-শিবিরের উপর সরকারের এমন কু-নজর ছিল যে, দেখামাত্রই তাদের গুলীর নির্দেশনা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি। 

সূত্র মতে, রাজপথে কোনো ধরণের কর্মসূচি না থাকলেও থেমে নেই গ্রেফতার কার্যক্রম। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারা দেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি, প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুরনো মামলায় আদালতে জামিনের জন্য গেলে নামঞ্জুর করে অথবা নতুন মামলা দিয়ে আবারো গ্রেফতার করা হচ্ছে। মামলা না থাকলেও সন্দেহজনক আটক থেমে নেই। হাতে কিছু ধর্মীয় বই ধরিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এসবের সাথে নারীদেরও জড়ানো হচ্ছে। কয়েক মাসের শিশু সন্তানের মা এমনকি অন্তসত্তা নারীদেরও জঙ্গি সাজিয়ে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে বিরোধীরা যাতে কোনধরণের আন্দোলনে যেতে না পারে সেজন্যই নতুন করে গ্রেফতার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, হতাশা থেকেই দেখতে পাচ্ছি, রাষ্ট্র নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে সুলতানা কামাল বলেন, যেকোনো দেশের সুশাসন ঠিক না থাকলে মানবাধিকার যেমন লঙ্ঘিত হয়, তেমনি মানুষের জীবনও অনিরাপদ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় সুশাসনের অভাব। এর ফলে সমাজে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। একটি দেশের উন্নয়ন শুধু দেশের প্রবৃদ্ধি দিয়ে বিচার করা যায় না। মানুষ কতটা নিরাপদ, ন্যায়বিচার পাচ্ছে কি না, সমতা ও অধিকার এ বিষয়গুলোও দেখতে হবে। 

এদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতেও হামলা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী। দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি-জামায়াত আয়োজিত ইফতার মাহফিলেও বাধা দিয়েছে সরকারি দল ও আইনশৃঙাখলা বাহিনী। রাজধানীতে জামায়াতের পূর্বঘোষিত ইফতার মাহফিল করতে দেয়া হয়নি। যেখানে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়া বিএনপি আয়োজিত ইফতারও পন্ড করে দিয়েছে সরকারি দল। ২ জুন ঢাকার কেরানীগঞ্জ হযরতপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ইফতার মাহফিল পন্ড করে দেয়। 

এছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, নেত্রকোনা, নাটের, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ অনেক স্থানে স্থানীয় বিএনপির ইফতার মাহফিল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে পন্ড করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনেই বাধা নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এখন বিএনপি আয়োজিত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনেও ন্যক্কারজনকভাবে বাধা দিয়ে দেশে নজীরবিহীন কলঙ্কিত পরিবেশ তৈরী করছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও যেকোন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনকেও বরদাশত করতে পারছে না। যার নির্মম ও অমানবিক বহি:প্রকাশ ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থনে। ইফতার মাহফিলের মতো অনুষ্ঠানে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ঘৃণিত হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ