খাগড়াছড়িতে বর্ষণ ও পাহাড় ধসের সাথে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা চলছে
আব্দুল্লাহ আল মামুন, খাগড়াছড়ি থেকে : খাগড়াছড়িতে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড় ধসের সাথে চলছে প্রতিযোগিতা করে পাহাড় কাটা। দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা চললেও প্রশাসন রয়েছে সম্পূর্ণ নীরব। আর প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় পাহাড় খেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গতকাল রোববার সর্বশেষ পাহাড় ধসে খাগড়াছড়ির রামগড় ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৩ জন নিহত ও ২ জন আহত হলেও এ সময় দুপুরে জেলা সদরের শিলাছড়া এলাকায় ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই বুলডোজার ব্যবহার করে পাহাড় কাটা হচ্ছে।
স্থানীয় একটি বৌদ্ধ বিহারে সড়ক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম থেকে চালকসহ বুলডোজারটি ভাড়া করে আনা হয়েছে পাহাড় কাটার জন্য।
গত দশদিন ধরে পাহাড়ের উপর অংশ থেকে মাটি কাটার ফলে সড়কের পাশে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কাটার কাজ চলছে।
বুলডোজার চালক নজরুল ইসলাম জানান, পাহাড় কাটার জন্য চট্টগ্রাম থেকে বুলডোজারটি আনা হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে মাটি ধসের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিহার কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ করতে হচ্ছে।
মাটি কাটার দায়িত্বে থাকা ভিক্ষুর কাছে পাহাড় কাটার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বিহারের কাজ করতে কারো অনুমতি লাগে না।
ঘন ঘন পাহাড় ধসকে প্রকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে মনে করছেন অনেকে। পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কদমতলী এলাকার বুলবুল আহমেদ জানান, শালবন হরিনাথ পাড়া গ্যাপ এলাকার পাহাড় খেকো শহীদ মিয়া ও জয়নাল মিয়ার নাম উল্লেখ করে এলাকাবাসী গত ১৪ জুন জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করি কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রতিনিয়ত তারা পাহাড় কেটেই চলেছে। এতে করে এলাকার ১০-১২ পরিবার পাহাড় ধসের ভয়ে শঙ্কিত।
সম্প্রতি জেলা সদরের মধ্য ভূয়াছড়িতে বুলডোজার দিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করলেও অদ্যাবধি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সচেতন মহল হতবাক হয়েছে। অপরদিকে পাহাড় খেকোরা আরো বেপরোয়া গতিতে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নেটওয়ার্ক সদস্য আবু দাউদ জানান, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের শালবন, কুমিল্লাটিলা, সাতভাইয়া পাড়া, কলাবাগান, সবুজবাগসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে পাহাড় উজাড় ও মাটি কাটার অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা চোখে দেখা যায় না। বর্ষা মৌসুমে লোক দেখানো মাইকিং ও অভিযান চালানো হয়। রৌদ্র উঠলে অভিযানও উধাও হয়ে যায়। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানই পারে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমাতে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, লোকজনকে পাহাড় কাটা থেকে বিরত রাখতে প্রশাসন কাজ করছে। পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।