বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কেন এই জলাবদ্ধতা

ইসমাঈল হোসেন দিনাজী : লঘুচাপের ফলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গত রোববার রাত থেকে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে ঢাকা মহানগরীতে সৃষ্টি হয় মারাত্মক জলাবদ্ধতা। এতো কেবল বর্ষার আগমনী বার্তা। এরপর আসল বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা আঁচ করতে বেশিদিন অপেক্ষার বোধ হয় প্রয়োজন নেই। খুব যে মুশলধারে বৃষ্টি হয়েছে তাও নয়। থেমে থেমে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে পুরো মহানগরী। জলমগ্ন হয়েছে রাস্তাঘাট, কাঁচাবাজার, দোকানপাট, স্কুল, বাসস্ট্যান্ড আর পাড়া-মহল্লা। সড়ক-মহাসড়ক বর্ষণের পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হয় প্রতিবন্ধকতা। রোযা-রমযানের মাসে সকালে অফিসগামী মানুষকে পড়তে হয় চরম ঝামেলায়। একইরকম বিপাকে পড়ে স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েরাও। অফিসফেরত অনেকেই বাসায় পৌঁছে ইফতার করতে পারেননি। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় কাউকে কাউকে জ্যামে আটকা যানবাহনে বসে শুধু বোতলের পানি অথবা শশাফালি মুখে দিয়ে ইফতার করতে দেখা যায়। অনেকে ঘরে ফিরে দেখেন বাসার নিচতলা ডুবে গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ড পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্কেও ঢুকেছে রাস্তার নোংরা কাদাপানি। এমনই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে মহানগরীর বাসিন্দাদের বর্ষার আগমনী বৃষ্টিতে।
এমন বৃষ্টি কি এটাই প্রথম? নিশ্চয়ই না। মহানগরীতে কমবেশ এরকম বৃষ্টি বর্ষা মওসুমে হয়ই। হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর দুঃসহ গরমের পর বৃষ্টি কাম্যও। কিন্তু যদি কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হয় বিড়ম্বনার; তাহলে? হ্যাঁ, গত রোববার রাত থেকে সোমবার রাত অবধি থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দাদের বিড়ম্বনাতেই ফেলেছে। যদিও গ্রীষ্মের দুঃসহ গরম ও রোযার তৃষ্ণার্ত মানুষের এ বৃষ্টি ছিল প্রত্যাশার। শুধু দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতার জন্যই আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিষয়টা খোলামেলা উল্লেখ করাই সমীচীন বলে আমাদের মনে হয়। সম্প্রতি সারা মহানগরীজুড়ে রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি, অলিগলির সম্প্রসারণ, অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা উদ্ধার এবং ব্যক্তি মালিকানায় নির্মিতি আংশিক বেআইনি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এ উদ্যোগ নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়। তবে এ কার্যক্রম পরিচাকলনার সময় পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেনগুলোর অধিকাঅংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো ভালোভাবে মেরামত করা হয়নি। কোনওমতে খোয়া-বালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে মাত্র। এর ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনগুলো প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ন্যায় প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ সময়মতো সম্পন্ন না হওয়াতেও যেখানে-সেখানে পানি জমে থাকছে এবং যান চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মিরপুর রোড, মালিবাগ-রামপুরা সড়কসহ অনেক সড়কেই উন্নয়নের নামে মন্থরগতিতে উদ্দেশ্যমূলক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ অব্যাহত রয়েছে। এতেও অনাকাঙ্ক্ষিত জলাবদ্ধতা এবং যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্ভোগ বাড়ে যাত্রী তথা সাধারণ মানুষের। এসব কাজ দ্রুত সম্পন্ন না করলে এবার বর্ষায় মহানগরীর নাগরিকদের যেমন জলজট মুকাবেলা করতে হবে, তেমনই দুর্ভোগ পোহাতে হবে যানজটেও।
ব্রিজ বা ফ্লাইওভারের মতো আমাদের কোনও প্রকল্পই প্রথম অর্থ বরাদ্দে কাজ শেষ হয় না। বারবার সময় আর বাজেট বাড়ে। কখনও কখনও প্রকল্পের প্রথম বরাদ্দের চাইতে পরের বরাদ্দের আকার ডাবল-ত্রিপলও হয়ে যায়। কিন্তু কেন? দুর্মুখেরা প্রকল্প সমাপ্তের মেয়াদ আর বাজেট বাড়ানোর লক্ষ্যই হচ্ছে দুর্নীতি বলে উল্লেখ করেন। এতে সংশ্লিষ্টদের কিছু যায়-আসে না। কিছু করা কারুর পক্ষে সম্ভবও হয় না। যা হবার তাই হয়। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার সম্পন্ন করতে কিংবা মহানগরীর রাস্তাঘাট সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা কবে শেষ হবে কে জানে! সামনে ঈদ। মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য জনসমাগম বাড়ছে প্রতিদিন। নগরবাসীর অনেকেই এখন গ্রামমুখো। এসময় যদি বর্ষণ বেশি হয় এবং মহানগরীতে অনাকাক্সিক্ষত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তাহলে জনদুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবে বলা মুশকিল। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত জলাবদ্ধতা কিংবা যানজটে নগরবাসীসহ ঈদে ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনা যাতে না বাড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের কড়া নজরদারি জোরদার করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ