বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খ্রিস্টানদের বাঁচাচ্ছেন মুসলিমরা

১৮ জুন, নিউইয়র্ক টাইমস : ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপের মারাবি শহরে আইএসপন্থী যোদ্ধাদের হামলা থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খ্রিস্টানদের রক্ষা করছেন স্থানীয় মুসলিমরা। সেনাবাহিনীর বিমান ও স্থল হামলার মুখে শহরটিতে চরমপন্থী গোষ্ঠীটির অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। হামলার মুখে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় তারা খ্রিস্টানদের হত্যা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে স্থানীয় মুসলিমরা কিভাবে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খ্রিস্টানদের জীবন রক্ষা করছেন তা জানা গেছে ওই অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা লোকদের কাছে।
ইয়ান টরেস (২৫) নামে এক খ্রিস্টান যুবক বলেন, ‘বাড়ির মালিক আমাদের বেজমেন্টে লুকিয়ে রেখেছেন। সেখান থেকে আমরা শুনেছি মিলিশিয়ারা আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে প্রত্যেকের ধর্মপরিচয় জানতে চেয়েছে। কুরআনের আয়াত বলতে নির্দেশ দিয়েছে, কেউ না পারলে তাকে গুলী করে হত্যা করেছে।’ টরেস পেশায় একজন রঙমিস্ত্রি আরো চারজন সঙ্গীসহ ইলিগান শহর থেকে মারাবিতে গিয়েছিলেন কাজ করতেন। মারারিব একজন ধনী মুসলিম ব্যবসায়ী বাড়িতে রঙ করার জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন তাদের। সঙ্ঘাতময় এলাকা থেকে পালিয়ে এসে নিয়োগকর্তার সহযোগিতায় কিভাবে তাদের জীবন বেঁচেছে তা বর্ণনা করেছেন টরেস।
তিনি জানান, শুধু তাদের নিয়োগকর্তাই নয় আরো অনেক মুসলিমের বীরত্বে প্রাণ বেঁচেছে অনেক খ্রিস্টান নাগরিকের। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মুসলিমরা তাদের জীবন বাঁচিয়েছেন।
গত ২৩ মে ফিলিপাইনের মুসলিম অধ্যুষিত মিন্দানাও দ্বীপের মারাবি শহরে আকস্মিক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে আইএসপন্থী চরমপন্থী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা। তাদের প্রতিহত করতে ওই এলাকায় সামরিক শাসন জারি করে ফিলিপাইন সরকার। এর পর থেকে নিয়মিত সঙ্ঘাতে তিন শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। এখনো কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মিলিশিয়াদের হাতে।
টরেসের সঙ্গী নিক অ্যান্ডলিং (২৬) বলেন, অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র মিলিশিয়া কালো মুখোশ পরে আমরা যে বাড়িতে কাজ করছিলাম সেখানে প্রবেশ করে। তারা শহর থেকে অমুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালায়। তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বাড়ির মালিক আমাদের বেজমেন্টে লুকিয়ে রাখেন। মিলিশিয়ারা যখন অস্ত্র উঁচিতে দরজার সামনে আসে তিনি তাদের বলেন, এ বাড়িতে কোনো খ্রিস্টান নেই। অ্যান্ডলিং জানান, এরপর মিলিশিয়াদের পাশের বাড়িতে যাওয়ার শব্দ পায় তারা, কয়েক মিনিট পর সে বাড়ি থেকে গুলী শব্দও ভেসে আসে। তিনি বলেন, আমরা কাউকে হত্যা করতে দেখিনি তবে লুকানো অবস্থা থেকে বের হওয়ার পর লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি।
টরেস বলেন, ‘পরে আমাদের এসে নিয়ে যাবেন বলে আমাদের নিয়োগকর্তা সেদিন বাড়ি থেকে চলে যান। কিন্তু তিনি কেন আর আসতে পারেননি তা আমাদের অজানা। তিনি একজন ভালো মুসলিম।’
ওই দিনের পর এক সপ্তাহেরও বেশি সময় বাড়িটিতে ছিলেন এই পাঁচ রঙমিস্ত্রি, যাদের একজন গর্ভবতী মহিলা। বাড়িতে যা শুকনো খাবার ছিল তাই খেয়ে কোনো মতে জীবন রক্ষা করেছেন। এক সময় বাইরে বিমান হামলার শব্দ শুনে তারা বুঝতে পারলেন সেনাবাহিনীর হামলায় হয়তো মিলিশিয়ারা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন পালিয়ে যাবেন। কিন্তু গর্ভবতী মহিলা ও তার স্বামী দৌড়ে পালানোর ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। অগত্যা গত মঙ্গলবার তাদের বাড়িতে রেখেই পালিয়ে আসেন টেরেস, অ্যান্ডলিং ও আরমান লানজিলান (২২) আরেক শ্রমিক।
লুকিয়ে অনেকটা পথ এসে তারা অ্যাগোস নদী সাঁতরে পার হয়ে চলে আসে ফিলিপিনো সেনাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। নদী তীরে তাদের অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ফেলে আসা দুই সহকর্মীর ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানেন না তারা। মোবাইল ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না তাদের।
এ ছাড়া মারাবির কামারাদেরিয়া এলাকায় পাঁচ মুসলিম পুলিশ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঁচ খ্রিস্টানের জীবন বাঁচিয়েছে। ওই পাঁচজন সেখানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন।
লামলা নামে এক পুলিশ অফিসার বলেন, মিলিশিয়াদের আওতার মধ্যে পড়ে যাওয়ার পর আমারা মুসলিম পরিচয় দিয়ে পালাতে পারতাম। কিন্তু খ্রিস্টান নাগরিকদের জীবন রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। তাই একসাথে সবাই সেখানে থেকে গেলাম। আমরা খ্রিস্টানদের একটি গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছিলাম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ