বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন বিএনপিকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হবে না -মির্জা ফখরুল

রাজশাহী ইউপিডাসিসি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

 

স্টাফ রিপোর্টার : সুইডেনে সফররত প্রধানমন্ত্রী সেখানকার বাংলাদেশীদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন সেজন্য তাকে ধন্যবাদ দিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে বুঝতে পেরেছেন যে, বিএনপিকে ছাড়া আগামী নির্বাচন হবেনা। সেজন্য তিনি বিদেশে গিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার আবারো একটি একতরফার নির্বাচন করতে চাইছে। কিন্তু এবার সেটি হতে দেয়া হবেনা। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। যেখানে ভোটারারা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাধী সাবেক স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

সংগঠনের সভাপতি বাহারউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে সাবেক ছাত্রদল নেতা আমিনুল ইসলাম, মতিউর রহমান, জিয়াউল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। 

 দেশের অবস্থা ভালো নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার পরিকল্পিকভাবে দেশটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা দেশটাকে অন্ধকার গহবরের নিয়ে গেছে। তারা চায়না দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠুক। তিনি বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলছেন। তার মুখে এসব মানায় না। তিনি বলেণ, যে কারণে দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই চেতরা আওয়ামী লীগ শেষ করে দিয়েছে। ৭১ এর পরে তারা দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। দুর্ভাগ্য জাতির, সেই দলটির নেতারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলছে। তিনি বলেন, সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা তাতে বিশ্বাস করেনা। তারা অন্তরে একদলীয় শাসনই কায়েম করে রেখেছে। 

বিএনপি নির্বাচনমুখী দল মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনেও যেতে চেয়েছি। কিন্তু সরকার ত্রোয়োদশ সংশোধনী বাতিল করায় আমরা সহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সেই নির্বাচনে যায়নি। কারণ, সবাই জানে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই নিরপক্ষে নির্বাচন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সেই সংস্কুতি এখনো গড়ে উঠেনি। বাস্তবে সেটিই হয়েছে এবং হচ্ছে। 

দেশে আবারো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব বলেন, আবারো একতরফা নির্বাচনের আয়োজন চলছে। কিন্তু সেটি হতে দেয়া হবেনা। এবার নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধেিন। যেখানে সবাই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার যদি গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করতে চায় তাহলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বিরোধীদলকে সহ্য করতে পারছেনা। তারা বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ দলের এমন কোনো নেতা নেই যার বিুরদ্ধে মামলা দেয়নি। তারা বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইছে। 

নিন্দা ও প্রতিবাদ : গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৫ জুন নাটোর জেলাধীন লালপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের লালপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয় কর্তপক্ষের লিখিত অনুমতি এবং পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৩৬তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিল সরকারদলীয় নেতাদের নির্দেশে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় এই যে, প্রায় সাত হাজার লোকের জন্য আয়োজিত ইফতার মাহফিল যেখানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সেই দোয়া ও ইফতার মাহফিলের সকল প্রস্তুতি ও আয়োজন সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও একেবারে শেষ মুহূর্তে বাধা দিয়ে পুলিশ অনুষ্ঠানটি বাতিল করে দিয়েছে। সারাদেশেই ধারাবাহিকভাবে সরকারী মদদে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলগুলোতে হামলা ও বাধা এবং অনুমতি না দিয়ে পন্ড করে দিচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী। আমি গতকাল ১৫ জুন নাটোর জেলাধীন লালপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের লালপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৩৬তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিল পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক পন্ড করে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এধরনের অনৈতিক, অমানবিক ও নিন্দনীয় অপকর্ম থেকে সরে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক ও কামরাঙ্গীর চর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাঃ নাঈম এবং হাজারীবাগ থানা বিএনপি নেতা আরজুকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিল থেকে ফেরার পথে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসেও বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক এধরণের অপকর্ম করার একটাই উদ্দেশ্য-জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতা ভোগ করা। আমি মোহাঃ নাঈম এবং আরজু’র বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ শহীদ গত তিন দিন আগে ডিবি পুলিশের হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে বর্তমান উত্তরায় একটি বেসরকারী হাসপাতালে মূমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। এর আগে জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল বেপারীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে আছেন। ডিবি পুলিশ কর্তৃক গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ শহীদ এর ওপর ন্যক্কারজনক হামলা এবং গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল বেপারীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার ও কারান্তরীণ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপিসহ দেশের বিরোধী দলগুলোর সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালানোর অংশ হিসেবে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ শহীদ এর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেছে ডিবি পুলিশ। এছাড়া গাজীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল বেপারীকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় গ্রেফতারের মাধ্যমে কারাবাসী করাও বর্তমান সরকার কর্তৃক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চলমান ও ধারাবাহিক জুলুম-নিপীড়ণের অংশ। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর এধরনের নির্যাতন ও জুলুম চালিয়ে অতীতের কোন স্বৈরাচারই তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সক্ষম হয়নি, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীও ক্ষমতাভোগ চিরস্থায়ী করতে পারবে না।

বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে শহীদ উল্লাহ শহীদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। পাশাপাশি গাজীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এর সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল বেপারীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার করে তার শর্তহীন মুক্তির জোর দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ