শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় পৌনে দু’লাখ দুস্থ পরিবার ঈদের ভিজিএফ’র চাল পাচ্ছে না

খুলনা অফিস : খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার রোস্তমপুর গ্রামের ভানুমতি, ফুলতলা উপজেলার আলকা গ্রামের রোমেছা খাতুন, আইয়ূব হোসেন শেখ, কয়রা উপজেলার জায়গীর মহল গ্রামের আব্দুস সাত্তার সকাল-বিকেল ভিজিএফ কার্ডের জন্য মেম্বর-চেয়ারম্যানের বাড়িতে ধর্না দিচ্ছেন। জেলায় ভানুমতি ও আব্দুস সাত্তারদের মত দুস্থ পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৬। এবারের ঈদুল ফিতরে দুস্থ ও হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ভিজিএফ’র বিনামূল্যের চাল-ডাল কর্মসূচি বাতিল হয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদামে আপদকালীন খাদ্য মজুদ না থাকায় এ কর্মসূচি বাতিল হয়েছে। প্রতি বছর ঈদে দুস্থদের উৎসব হিসেবে ভিজিএফএ’র দশ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
খাদ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, হাওড়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দশ টাকা কেজির চাল বিক্রির কারণে গুদামে মজুদ ফুরিয়ে এসেছে। বোরো সংগ্রহ অভিযান সবেমাত্র শুরু হলো। চাল গুদামে উঠতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। সে কারণেই এ কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
(ভিজিএফ) পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদে হতদরিদ্র পরিবারে ভিজিএফ’র জন্য চাল ও গম বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এদিকে অধিদপ্তরের অন্যান্য সূত্র জানিয়েছে মূলত. উৎসবের সময় ভিজিএফ দেওয়া হয়। তা বন্ধ করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় মানুষকে বাঁচাতে সেখানে চাল দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা জেলা খাদ্য অফিসের সূত্র জানায়, মহেশ্বরপাশা, বয়রা কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদামসহ উপজেলা পর্যায়ের আটটি গুদামে ৮শ’ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। নৌবাহিনী ও কারা কর্তৃপক্ষকে জুন মাসে বরাদ্দ দিলে মজুদের পরিমাণ আরও কমে আসবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, নয় উপজেলা ও দু’পৌরসভায় ২০১৬ সালের ঈদুল আযহায় এক লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৬ পরিবারের মধ্যে ১ হাজার ৭৪৬ মেট্রিক টন চাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। তার মধ্যে পাইকগাছা পৌরসভায় ৪ হাজার ৬২১ জন এবং চালনা পৌরসভায় ৩ হাজার ৮১ জন এ সুবিধা পায়।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, গেল ঈদে সাত ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭শ’ হতদরিদ্র পরিবার ভিজিএফ’র সুবিধা পায়। এখানে এনজিও ও সরকারি কার্যক্রম চলছে। ভিজিএফ না পেলে হতদরিদ্র পরিবার অনাহারে থাকবে না। স্থানীয় বাজারে মোটা ও মাঝারি চাল প্রকার ভেদে ৪২-৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমাদি ইউপি চেয়ারম্যান আমীর আলী গাইন বলেন, গেল ঈদে এক হাজার ৮৪৫ পরিবার এ সুবিধা পায়। তিনি বলেন, জায়গীরমহল গ্রামের আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রাজ্জাক, আমাদি গ্রামের তাপষ কুমার দাস, নাকশা গ্রামের খায়রুল ইসলাম ভিজিএফ কার্ডের জন্য সকাল-বিকেল ইউপি অফিসে ধর্না দিচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউপি সদস্য শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, রোস্তমপুর গ্রামের ভানুমতি, আল আমিন মোড়ল, চুকনগর গ্রামের ইমদাদুল এই কার্ড পেতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে তাগিদ দিচ্ছেন। ভিজিএফ না পেলে হতদরিদ্র পরিবার হতাশ হবে। ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আব্দুর রহমান মৌখিকভাবে ভিজিএফ’র চাল না পাওয়ার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, তিন নম্বর ওয়ার্ডের আলকা গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা রোমেছা ও আইয়ূব হোসেন শেখ কার্ড পাওয়ার জন্য তাকে তাগিদ দিচ্ছেন। নিজের ইমেজ ঠিক রাখতে হতদরিদ্র পরিবারকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সেমাই ও চিনি কিনে দিতে হবে বলে তিনি এ কথা বলেন।
বিনামূল্যে চোখের ছানি চিকিৎসা
করবে ব্র্যাক ভিশন সেন্টার
চোখের চিকিৎসা সহজলভ্য করতে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চৌরাঙ্গি মোড় মিকশিমিল রোডে একটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করেছে। গতকাল বুধবার সেন্টারটি উদ্বোধন করেন ডুমুরিয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসান।
উদ্বোধনী  অনুষ্ঠানের পর ভিশন সেন্টারের কর্মকান্ড সম্পর্কে  অবহিত করে ভিশন সেন্টারের পরিচালক ডা.মো: আরিফুল আলম বলেন ২০০৭ সালে বৃদ্ধ লোকজনের দৃষ্টিশক্তি অটুট রেখে তাদের কর্মক্ষম রাখার জন্য ব্র্যাক চশমা কর্মসূচি গ্রহণ করে। ওই সময় সংস্থাটি দেশে প্রায় ০৮ লক্ষ মানুষের চোখে ছানি পড়া সংক্রান্ত সমস্যা  পায়। তাদের মধ্যে দুই লক্ষ ছানি রোগীর চিকিৎসা করে তারা। পরে সংস্থাটি এ নিয়ে গবেষনা করে এবং আন্তর্জাতিক চক্ষু চিকিৎসা সংস্থা অরবিস ও কাতার সরকারের আর্থিক সহায়তায় গ্রামীণ এলাকায় চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ভিশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সংস্থাটি এ পর্যন্ত তিনটি ভিশন সেন্টার স্থাপন করেছে।
ভিশন সেন্টারের একটি সূত্র জানায়, এখানে চক্ষু রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ভারতের অরবিন্দ আই কেয়ার সেন্টার থেকে প্রশিক্ষিত ব্র্যাকের দুইজন কর্মীকে এখানে নিয়োগ করা হয়েছে এবং খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কারিগরি সহযোগীতায় সেন্টারে টেলিমেডিসিন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তে  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এম এ মতিউর রহমান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাসি রাণী রায়, অরবিসের  কাতার ক্রিয়েটিং ভিশন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. ইকবাল হোসেন, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মিলন কুমার মন্ডল, ব্র্যাকের সিনিয়র ম্যানেজার বি এম জাহিদুল ইসলাম ও শ্যামল কুমার রায়, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ