শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নতুন আঙ্গিকে পঞ্চম বিপিএল

মাহাথির মোহাম্মদ কৌশিক : ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট লিগের আসরে বাংলাদেশের যাত্রা অনেকদিন হলো। এরই মধ্যে চারটি আসর শেষ হয়ে গেছে। এখনো পাঁচ মাসের মতো সময় থাকলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে এরমধ্যেই প্রস্তুতি ও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আগের বারের চেয়ে বিপিএলে কিছুটা আঙ্গিক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এবার। নতুনত্ব আনারও চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যাতে নতুন করে কোন ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি না হয়। বিপিএলের পঞ্চম আসর অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরে, এটা নির্ধারিত হয়ে গেছে আগেই। এবার ঠিক হলো দিন তারিখও। সম্প্রতি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এক সভা শেষে জানানো হয়েছে, আগামী আসর মাঠে গড়ানোর সম্ভাব্য তারিখ ৪ঠা নভেম্বর।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান আফজালুর রহমান সিনহা ও সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট  স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আরও কিছু তথ্য। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৬ই  সেপ্টেম্বর প্লেয়ার ড্রাফট অনুষ্ঠিত হবে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে গত বিপিএলে কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়নি। এবার জমকালো আয়োজন করতে চায় আয়োজকরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে নভেম্বরের দুই তারিখ মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তবে বলিউড বাদশা শাহরুখ খান নয়, বিপিএল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চ কাঁপাবেন ভারতীয় সঙ্গীত তারকারা। আর সেই দৌড়ে এগিয়ে আছে অরিজিৎ সিং এবং শ্রেয়া ঘোষালের নাম! আয়োজকদের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এমনই জানিয়েছে। গুঞ্জন ছিল বিপিএল’র পঞ্চম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে পারফর্ম করবেন শাহরুখ খান এবং আলিয়া ভাট।
কিন্তু ফিল্ম স্টারদের সময় সূচী এবং আর্থিক দিক বিবেচনা করে সঙ্গীতাঙ্গনের তারকাদের দিয়েই বিপিএল’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাজাতে চায় বিসিবি। এ প্রসঙ্গে বিসিবি’র গভর্নিং কমিটির সদস্য শেখ সোহেল বলেন, ‘এই আসরের বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমরা সঙ্গীত তারকাদের গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের গভর্নিং কাউন্সিলের সর্বশেষ সভায় আমরা শাহরুখ খান এবং আলিয়া ভাটকে আমন্ত্রন জানানোর সিদ্ধান্ত বদলেছি। আসলে এত বড় তারকারা মাত্র ১৫/২০ মিনিটের জন্যই অনেক টাকা দাবি করে। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে সময় বের করাও অনেক কঠিন, এই কারণেই আমরা সিদ্ধান্ত বদলেছি।’ তিনি আরও জানান, ‘আমরা এই বছরের বিপিএল একটি জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু করতে চাই। মানুষ এই ধরনের অনুষ্ঠানে আরও বেশি আকৃষ্ট হয়। এই কারনেই, আমরা দেশের বড় তারকাদের পাশাপাশি বাইরের দেশের তারকাদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। এই বছর সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিপিএল হতে যাচ্ছে।’ বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত আসরে সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল না। এবার অবশ্য সাত দলের সঙ্গে সিলেটের ফ্যাঞ্চাইজি ফিরছে বলে জানা গেছে। ফলে সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতা হতে পারে আট দলের। এরকম সম্ভাবনাই বেশি। যদি তাই হয়, তবে নিশ্চিতভাবে বাড়বে ম্যাচের সংখ্যাও। সেক্ষেত্রে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৬০টি।  ৫৬টি লিগ ম্যাচ, একটা এলিমিনেটর ম্যাচ, দুটি কোয়ালিফায়ার এবং একটি ফাইনাল। সবচেয়ে বড় কথা, পঞ্চম আসরে বাড়ছে ভেন্যুও। গেল আসরে মিরপুর ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিপিএলের ম্যাচ। আসন্ন আসরে তৃতীয় ভেন্যু হিসেবে প্রথমবারের মতো যোগ হতে পারে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
তবে এখনই তা নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেন, ‘সিলেটের স্টেডিয়াম যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু শুধু ভেন্যু থাকলেই তো হবে না, যাতায়াত, খেলোয়াড়দের থাকার ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার ব্যাপারটাও দেখতে হবে। স্টেডিয়ামের আশেপাশে হোটেল মাত্র একটা। যেখানে হয়তো চারটা দল থাকতে পারবে। ৮ দলকে রাখার মতো কোনো হোটেল আশেপাশে নেই।’ বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৮টি দল নিবন্ধন করেছে।’ তবে শেষ পর্যন্ত যে আট দলই অংশ নেবে, সেই নিশ্চয়তা নেই। বিপিএল আয়োজক ও ব্যবস্থাপকদের কথায় ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার- আট দলের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি এখনো আর্থিক সঙ্গতি ও নিশ্চয়তার সব বৈধ কাগজপত্র জমা দেয়নি। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ হলে তার মালিকানা স্বত্ব বাতিল বলে গণ্য হবে। এমন হলে দল সংখ্যা আট থেকে কমে সাতেও নেমে আসতে পারে। এদিকে রংপুর রাইডার্সের মালিকানা কিনে নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। গতবার আসর শেষেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, বদল হচ্ছে চিটাগাং ভাইকিংসের মালিকানা। আগের দু’বারের ফ্র্যাঞ্চাইজি ডিবিএল গ্রুপের হাতে চট্টগ্রাম ভাইকিংসের মালিকানা থাকবে না। শুধু এমন গুঞ্জনই নয়; তার বদলে চট্টগ্রাম মহানগরের মেয়র ও বিসিবির সহ-সভাপতি আ জ ম নাছিরই হবেন পরবর্তী ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক- এমন কথাও ভেসে বেড়িয়েছে। অবশেষে সে গুঞ্জন সত্য হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সঙ্গে চট্টগ্রাম তথা দেশের ক্রিকেটের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র আকরাম খানও রয়েছেন। ভিতরে ভিতরে ভিতরে ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলের কাজ প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে।
ওদিকে সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজির সার্বিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এরকম একটা খবর বাতাসে ভাসছে! অবশ্য বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কর্মকর্তারা এসব ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু জানাননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বিপিএল আয়োজকরা এবার চিন্তাভাবনা করছেন বিদেশি ক্রিকেটারের কোটা বাড়ানোর। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোই নাকি এ ব্যাপারে আবেদন করেছে।  গত আসর পর্যন্ত বিপিএলে সেরা একাদশে সর্বোচ্চ চারজন বিদেশী খেলোয়াড় খেলানো যেত। এটা অবশ্য শুধু বিপিএল নয়, বিশ্বব্যাপী সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই অলিখিত এই নিয়ম মানা হচ্ছে। কিন্তু কথাবার্তা চলছে, বিপিএলে হয়তো চার জনের পরিবর্তে পাঁচজনকে একাদশে নামানোর নিয়ম চালু করা হতে পারে। কেন? আয়োজকরা যুক্তি দেখিয়েছেন, সাত থেকে দলের সংখ্যা বেড়ে যদি আট হয়, তবেই এই নিয়ম করা হতে পারে। কারন দল বাড়লে হতে পারে মানসম্পন্ন দেশী খেলোয়াড়ের সংকট। তাছাড়া বিদেশী বাড়লে টুর্নামেন্টও জমজমাট হবে। বিপিএল’র সদস্য সচিব বলেছেন, ‘আমরা যদি আটটা দল নিয়ে খেলি, তাহলে সবগুলো দলের জন্য যত দেশি ক্রিকেটার দরকার, তা কিন্তু আমাদের নেই। এই জন্যই ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আমাদের কাছে একটা আবেদন করেছে। এই টুর্নামেন্টে আন্তর্জাতিক মানটা আমরা বজায় রাখতে চাই। সে দিক থেকে চিন্তা করেই এমন একটা আবেদন নিয়ে আমরা ভাবছি। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চারজনেরই। পাঁচজন খেলানোর ব্যাপারে আমরা চিন্তা করছি।
ভারতে যে পরিমাণ প্রতিভা আছে, বাংলাদেশে এখনো সেটা খুঁজে পাইনি। আমরা যদি আটটা দল করি, তাহলে আরও সাত-আটজন স্থানীয় খেলোয়াড়ের সরবরাহ থাকতে হবে।’ যদিও এমন কোনো সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়নি, তারপরও ইতোমধ্যে এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে এতে করে দেশী খেলোয়াড়দের উঠে আসার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রতিটি দলে মাত্র একজন বিদেশি খেলোয়াড় সুযোগ পান।
প্রিমিয়ার ক্রিকেটের মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েও প্রশ্ন নেই। সেখানে ১২টি দলে যদি স্থানীয় খেলোয়াড় জোগানো কোনো ঘাটতি না হয়, বিপিএলে হয় কী করে?- এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। ইসমাইল হায়দার এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘একটা ৫০ ওভার, আরেকটা ২০ ওভারের খেলা। প্রিমিয়ার লিগের ১২টা দলই সমান? নিচের চারটা দল ওপরের ছয়-সাতটা দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই পারে না। পয়েন্ট তালিকা দেখেন, কীভাবে বলছেন, ওখানে খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়?’ জানা গেছে, এবার দলগুলো আইকন ও এ-প্লাস ক্যাটাগরি  থেকে চারজন খেলোয়াড় নিতে পারবে। প্রতিটি দল সর্বনিম্ন ১০ জন এবং সর্বোচ্চ ১৩ জন দেশি খেলোয়াড় নিতে পারবে। প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে এ প্লাস ক্যাটাগরি বাদে অন্তত সাতজন দেশি খেলোয়াড়কে দলে নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে। প্রত্যেক দল ইচ্ছেমতো বিদেশি খেলোয়াড় নিতে পারবে। তবে প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে অন্তত দু’জনকে অবশ্যই নিতে হবে। জিটিভি ও মাছরাঙা টেলিভিশন আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পঞ্চম আসর সম্প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছে। অন্যদিকে রেডিও ভূমি ও রেডিও স্বাধীন ২০১৭-২০১৯ পর্যন্ত বিপিএল’র তিন আসরের রেডিও পার্টনার হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিপিএলের আগের চার আসরের সম্প্রচারের দায়িত্বে ছিল চ্যানেল নাইন। এবারই প্রথমবারের মতো সম্প্রচারে আসছে পরিবর্তন। ইমপ্রেস মাত্রা তিন বছরের জন্য বিপিএলের সম্প্রচার স্বত্ত্ব কিনেছিল। বিপিএল’র পঞ্চম আসরের জন্য তারা জিটিভি ও মাছরাঙা টেলিভিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে। এর আগে চ্যানেল নাইনের ভার্গো লিমিটেড বিপিএলের প্রথম আসর থেকে ছয় মৌসুম সম্প্রচারের জন্য চুক্তিভুক্ত ছিল। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ দেবার কথা ছিল তা ঠিকমতো না দেয়ায় বিসিবিকে অন্য পথে হাঁটতে হয়। ভার্গো লিমিটেডের সাথে চুক্তি বাতিল করে ইমপ্রেস মাত্রার সাথে নতুন চুক্তিতে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ