শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনার অভিজাত টেইলার্সে অর্ডার নেয়া বন্ধ

খুলনা অফিস: না। একদমই সম্ভব না। ঈদের দুই একদিন পরে নিলেও কাজ নেয়া সম্ভব না। হাতে যে কাজ আছে তা সব করতে পারবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
সাফ অপরাগতা প্রকাশ করে বুধবার (১১ রমযান) খুলনার স্যার ইকবাল রোডের মিতু টেইলার্সের মালিক শংকর সরদার এ সব কথা বলেন থ্রি পিস বানাতে দিতে আসা যুবক মো. আবু হাসানকে। প্রচন্ড রোদে ঘেমে যাওয়া যুবকটি বার বার অনুরোধ করলেও টেইলার্স মালিক অর্ডার নেননি।
এসময় টেইলার্সের মালিক শংকর সরদার বলেন, ৮-৯ রমযানের মধ্যেই সাধ্য অনুযায়ী অর্ডার নেয়া হয়েছে। এখন পোশাক কারিগরদের নির্ঘুম রাত কাটছে। আর অর্ডার নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আক্তার চেম্বারের ফেমাস টেইলার্সের মালিক বাশার জানালেন তাদের কর্মব্যস্ততার কথা। তিনি বলেন, প্রচন্ড কাজের চাপ। সচেতনরা আগে ভাগেই অর্ডার দিয়ে গেছেন। তাদের সেই সব কাজ করছি। আক্তার চেম্বারের তৃতীয় তলার পোশাক কারিগর মিরাজ বলেন, এ মার্কেটে প্রায় সাড়ে তিনশ’ পোশাক কারিগর রয়েছে। সবারই এখন দম ফেলার ফরুসত নেই। আগের অর্ডার দেওয়া পোশাক সময় মতো দেয়া নিয়েই চিন্তা রয়েছে। যার কারণে নতুন করে অর্ডার নেয়া বন্ধ। শুধু অভিজাত টেইলার্সেই নয় নগরীর অলি-গলির টেইলার্স গুলোতে রোযা বাড়ার সাথে সাথে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক টেইলার্সের অর্ডার নেয়া।
বসুপাড়া কবরস্থান সড়কের শাপলা টেইলার্স মালিক শাপলা বলেন, আধুনিক তরুণ-তরুণীরা এখন ইন্টারনেটে ডিজাইন দেখে পোশাক বানায়। সে সব পোশাকে কারুকাজ করতে হয় বেশি। যার কারণে খুব সাবধানে কাপড় কাটা ও সেলাই কাজ করতে হচ্ছে। আর এসব কাজে সময় বেশি লাগায় আগে যারা অর্ডার দিয়েছে তাদেরটা করছি। এখন আর নতুন অর্ডার নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, ক্রেতাদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। কাজের চাপ সামলাতে মওসুমী কারিগর রাখতে হয়েছে। আমাদের এ ব্যস্ততা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরী জুড়ে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজে জমকালো পোশাকের প্রদর্শনী থাকলেও পছন্দসই পোশাক বানিয়ে নিতে দর্জিদের দোকানে ভিড় জমান মূলত কিশোরী-তরুণীরা। অনেক তরুণ পাঞ্জাবি বানাতেও ছুটেন দর্জি বাড়ি। ঈদের অনেক আগে থেকেই দর্জিবাড়ির সামনে শুরু হয়ে যায় ক্রেতাদের লম্বা লাইন। তাদের পছন্দসই পোশাক বানাতে পুরো রোজার মাসেই ব্যস্ত সময় পার করেন দর্জিরা।
মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, যেন দম ফেলারও ফুরসত নেই পোশাকের কারিগরদের। কাটিং, নিটিং, হাতের সূক্ষ্ম কারুকাজে একেকটি পোশাক নিখুঁতভাবে তৈরিতে ব্যস্ত তারা।
আক্তার চেম্বার ও রেলওয়ে মার্কেটের দর্জির ঘরগুলোতে সেলাই মেশিনের ছুটে চলার শব্দই বলে দেয় ঈদের সময় এগিয়ে আসার কথা। সেলাই, হাতের কাজ, লক সেলাই, আয়রন এই চারধাপে দিনরাত চলছে কারখানার শ্রমিকদের ব্যস্ততা। তবে ঈদের সময় পোশাক বানাতে বাড়তি মজুরি দিতে হওয়ায় তা নিয়ে ক্রেতাদের আক্ষেপও কম নয়। কলেজ ছাত্রী রেশমা সুলতানা বলেন, বরাবরই ঈদে নিজের পছন্দমত ডিজাইন দিয়ে পোশাক বানাতে দিই। কিন্তু প্রতিবছরই মজুরি বাড়ে এ সময়টায়।
বাড়তি মজুরি নেয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যায় দর্জি লুৎফর রহমান বলেন, কারখানার শ্রমিকদেরও মজুরি অন্যবারের তুলনায় বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিলও বেড়েছে। সুতা, বোতাম এসবের দামও বাড়তির দিকে। তাই উপায় থাকে না মজুরি না বাড়িয়ে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ