শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি : কাটা যাবে সর্বজনের পকেট

জিবলু রহমান : [চার]
এতে স্কাইপি’র মাধ্যমে মূল বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস এর কয়লা ও বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ মিঃ লরি মাইলিভিরতা। ‘রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র : সম্ভাব্য বায়ু দূষণ, বিষাক্ততা ও মানবদেহের উপর প্রভাব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিশুবিশেষজ্ঞ ও ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, স্বাস্থ্য গবেষক অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন এবং সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য শরীফ জামিল।
লরি মাইলিভিরতা তার গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে আরো বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদগীরণ সুন্দরবন ইকোসিস্টেমসহ সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের এবং খুলনা, অশোকনগর, কল্যাণগড়, সাতক্ষিরা, বেগমগঞ্জ, বশিরহাট, নরসিংদি, নোয়াখালী, বাসীপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের উপরের বাতাসে বিষাক্ত ধূলিকণার মাত্রা বা পরিমাণ অধিকতর খারাপ করে দেবে। ঢাকা ও কলকাতার বাসিন্দারা, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বায়ু দূষণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হবে। ঢাকার পার্শ¦বর্তী নরসিংদী থেকে শুরু করে কলকাতার বসিরহাট পর্যন্ত এ দূষণ ছড়াবে।
তিনি বলেন, সমগ্র কর্মক্ষম সময়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্গমন- স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার, বয়স্কদের হৃদযন্ত্রের ও শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ, সাথে সাথে শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপসর্গ-এর ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবে। এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান বায়ু দূষণ মাত্রা যদি শূন্য হয়, কেন্দ্রটি নিজে একা ৬,০০০ (ছয় হাজার) মানুষের অকাল মৃত্যুর এবং ২৪,০০০ (চব্বিশ হাজার) কম ওজনের শিশুর জন্মের কারণ হবে। দিনের সময় কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ প্রভাব হবে, কেন্দ্রটি কাছাকাছি অঞ্চলের পরিবেষ্টনকারী বাতাসের ২৪ ঘণ্টার গড় নাইট্রোজেন অক্সাইড মাত্রা বর্তমান জাতীয় নগর গড়ের ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে এবং সালফার ডাই অক্সাইড মাত্রা নগর গড়ের ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করবে। তিনি আরো জানান, অত্র অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী হওয়ায় ও প্রজেক্টে প্রণীত দুর্বল নির্গমন মাত্রার ব্যবহারের জন্য এই রকম আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রক্ষিপ্ত বস্তুকণা স্বাস্থ্য প্রভাব তুলনামুলকভাবে বেশী হবে। টেন্ডারে নির্ধারিত সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ধূলিকণা ও পারদ-এর নির্গমণ মাত্রা, প্রচলিত সেরা নিয়ন্ত্রণ মানদন্ড ও স্টেট-অভ-আর্ট প্রযুক্তির নির্গমণ মাত্রার চেয়ে পাঁচ হতে দশগুণ পর্যন্ত বেশী।
তিনি জানান, কেন্দ্রটি অতি উচ্চ মাত্রায় শক্তিশালী স্নায়ুবিষ-‘পারদ‘ উদগীরণ করতে পারে যা শিশুদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রামপাল প্লান্ট হতে নির্গত পারদ, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারিপার্শ্বের প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মাছকে খাওয়ার অযোগ্য করার জন্য যথেষ্ট হবে। উপরন্তু প্লান্টের জীবদ্দশায় ১০,০০০ কেজি পারদ মিশ্রিত কয়লার ছাই পুকুরে জমা হবে যা বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। এই অতিরিক্ত পারদ সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের জলজ খাদ্য চক্রকে আরো ঝুঁকিতে ফেলবে, লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব পড়বে যারা ঐ মাছ/জলজ প্রাণী খাবে।
এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও মানবিক দিক বিবেচনায় কয়লাভিত্তিক প্রকল্প কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যা আজ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। তিনি বলেন, আমরা বারবার বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দিয়ে আসলেও সরকার এসব বিষয়গুলোকে কোন প্রকার বিবেচনায় না নিয়ে, বরং অসত্য তথ্য দিয়ে এরকম একটি সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার মুখে বললেও সুন্দরবন বাঁচানোর জন্য কোন প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা রামপাল প্রকল্পে নেই। এই প্রকল্প নিয়ে সরকারের যে ইআইএ রিপোর্ট সেটি বিজ্ঞানভিত্তিক নয় ও তার কোন স্বচ্ছতা নেই, আর এটি আমরা আগেই প্রত্যাখ্যান করেছি।
তিনি বলেন, আমরা কোন স্বার্থ বা কারো সাথে আক্রোশ নিয়ে কোন কথা বলছি না। শুধুমাত্র সুন্দরবন রক্ষা এবং পরিবেশ-মানবিক ও জাতিকে রক্ষার স্বার্থেই রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলছি এবং সেটা যথেষ্ট বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য নিয়েই বলছি। সংবিধানে স্বীকৃত জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, তাই জনগণের স্বার্থ ও মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প বাতিল করার আবারও জোর দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, একদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান যখন শিশু মৃত্যুহার কমানোর জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক সফলতাও অর্জন করছে। অন্যদিকে সম্ভাব্য রামপাল প্রকল্পের নির্গত দূষণের কারণে ছয় হাজার শিশুর অকাল মৃত্যু ও ২৪ হাজার শিশু কম ওজন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করবে, যার বিরাট অংশ পঙ্গুত্ব নিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে। আমাদের দেশে পরিবেশ সংকট এবং মা’দের বিষযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের কারণে ৪৮% ভাগ শিশু এমনিতেই স্বল্প ওজন নিয়ে জন্ম লাভ করছে। রামপালে ক্ষতিগ্রস্তরা যোগ হলে আমরাতো শিশু স্বাস্থ্য প্যরামিটারে আবারও পিছিয়ে যাব। গর্ভবতী মায়েরা মাছ ও শাকসবজির ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল, অথচ এগুলোতেই রয়েছে ফরমালিন অথবা রাসায়নিক পদার্থ। বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে দেখা গেছে, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এর বিষাক্ততা সাগর-নদী ও মাটির সাথে মিশে গিয়ে শুধু ঐ এলাকা নয় বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে। এতে মাছ-শাকসবজিসহ কৃষিজমিতেও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়বে। এর কুফলে ভবিষ্যতে শুধুমাত্র কম ওজনই নয়, প্রতিবন্ধী শিশু জন্মানোর আশংকা রয়েছে। তাই ভবিষ্যত সুস্থ প্রজন্মের স্বার্থেও রামপাল প্রকল্প বিষয় সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. এম আবু সাঈদ বলেন, রামপাল প্রকল্পের প্রভাবে মাটি-পানি-বায়ু দূষণ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে দেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর। এই প্রকল্প থেকে নির্গত পারদ ও অন্যান্য দূষণের কারণে শিশুদের মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণতা থেকে যায় এবং তার ফলে স্নায়ুবিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে তারা জন্মগ্রহণ করবে, তৈরী হবে এক দৈহিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু প্রজন্ম। অতএব রামপাল প্রকল্প অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি একটি জরিপ করে দেখেছে, তাদের বিতরণ এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুরোনো প্রযুক্তির বয়লার নতুন প্রযুক্তিতে রূপান্তর করে দৈনিক ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। এই রূপান্তরে ব্যয়ও বেশি নয়। এ ছাড়া আবাসিক গ্রাহকদের চুলা উন্নত প্রযুক্তির করা হলে এবং রাস্তা থেকে রান্নাঘরে গ্যাস সরবরাহের লাইন যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে প্রতিদিন গ্যাস সাশ্রয় হবে ১০ কোটি ঘনফুট। এ কাজেও ব্যয় হবে সামান্য।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিদিন দেশে উৎপাদিত মোট গ্যাসের ১২% (৩০ কোটি ঘনফুট) ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক খাতে। আর শুধু তিতাসের এলাকায় প্রতিদিন ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অপচয় হচ্ছে।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। অর্থের পরিমাণ বছরে শত কোটি টাকার ওপরে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এছাড়াও পুরনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং বেশ কয়েক ধরনের শিল্পে বাড়ছে গ্যাসের অপচয়। এতে করে গ্যাস সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে আবাসিক খাতকে।
দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের মাত্র ১২% ব্যবহৃত হয় আবাসিক খাতে। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের হিসাব মতো, দেশের ৫টি বিতরণ কোম্পানির অধীনে দেশের ১১১টি উপজেলায় ২৮ লাখ ৩ হাজার ১৮৪টি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। আর অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৩ লাখের মত।
২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর সরকার সিলেট অঞ্চল ছাড়া গোটা দেশে গ্যাসের নতুন শিল্প সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১০ সালের ১৩ জুলাই নতুন আবাসিক সংযোগ দেয়া বন্ধ করা হয়। নতুন সংযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সময় বলা হয়, দৈনিক মোট গ্যাস উৎপাদন ২শ’ ২০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হলে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে ঢাকায় সর্বপ্রথম গৃহস্থালিতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বিষয়ে গ্যাস অ্যাক্ট থাকলেও তা কাজে আসছে না। স্থায়ীভাবে তাদের সংস্থায় কোনো ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় এ সংক্রান্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের কাছে বার বার চিঠি লেখার পরেও সাড়া মিলছে না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনেক সময় পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে পাওয়া যায় না। হুমকির মুখে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করেই কোনো কোনো সময় টাস্কফোর্স অভিযান গুটিয়ে ফিরে আসতে হয়।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাসিকসংযোগ রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। সেখানে মোট বৈধ আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ। এরপর কর্ণফুলী এবং বাখরাবাদ কোম্পানির অবস্থান। স্বাভাবিকভাবে তিতাস, কর্ণফুলী ও বাখরাবাদেই অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বেশি। বর্তমানে কোন কোন এলাকায় কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ সেটা চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকাতেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় নতুন আবাসন গড়ে উঠেছে, সেখানেই অবৈধ সংযোগ সংখ্যা বেশি। বাড্ডা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর প্রভৃতি এলাকায় অবৈধ সংযোগ বেশি। এমনকি মিরপুর ডিওএইচএসের বেশিরভাগ গ্যাস সংযোগ অবৈধ। এছাড়া বেশিরভাগ বস্তিতেই অবৈধ সংযোগে গ্যাসের চুলা ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলেও গ্যাস সংযোগ রয়েছে। (সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব ১৩ অক্টোবর ২০১৪)
অহেতুক ঘাট বানিয়ে হয়রানি, বিড়ম্বনা আর গ্রাহক টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি তিতাস। গ্রাহকদের কাছে তিতাস এক আতঙ্কের নাম। তাদের অভিযোগ, শতভাগ সরকারি হলেও কোম্পানিটি পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়নের বিপক্ষে কাজ করছে। ষড়যন্ত্র করছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও। দেশে গ্যাসের কোনো সংকট না থাকলেও এরা কৌশলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলছে। গ্যাস নিয়ে চালাচ্ছে বেশুমার লুটপাট আর ডাকাতি। সরকারের বিরুদ্ধে শিল্প মালিকদের উস্কে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসায়ীদের কাছে সরকারকে হেয় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। দু’টি পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি করছে কঠিন প্রাচীর। সরকার যতই ব্যবসাবান্ধব হচ্ছে তিতাস ততই ঠিক তার উল্টো পথে হাঁটছে। শিল্প মালিকদের প্রতি এ প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্মান নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিল্প মালিকরা তিতাসের অফিসে গিয়ে বসে থাকলেও সাক্ষাৎ করার সৌজন্যটুকুও দেখান না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। সরকার ও দেশ তাদের কাছে জিম্মি। প্রতিনিয়ত এরা গ্যাস নিয়ে সরকারের অর্জনগুলোকে বাধাগ্রস্ত করছে। শিল্প উদ্যোক্তাদের গ্যাস না দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরাম।
তিতাসের এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কাজ করছে দেশি-বিদেশি কতিপয় আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র। বিনিময়ে দুই সিন্ডিকেটের মধ্যে আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। চক্রের টার্গেট দেশের শিল্প খাতকে ধ্বংস করে এই বিশাল অর্জন বহিঃশক্তির হাতে তুলে দেয়া। আর এই বিশাল অবৈধ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে সিন্ডিকেটটি তিতাসের প্রতিটি কর্মকাণ্ড ও ফাইল চালাচালির প্রক্রিয়াকে এতটাই জটিল করে সাজিয়েছে যাতে যে কোনো গ্রাহক ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে ব্যবসাই ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
শুধু গ্যাস সংযোগ না পেয়ে গত কয়েক বছরে এক হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। আর কমপক্ষে ১শ’র বেশি বড় বিনিয়োগকারী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কমপক্ষে ২০ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার সরকারি অনুমোদন পেলেও তিতাসের দুর্নীতির ঘূর্ণিচক্রে পড়ে এখনও হাবুডুবু খাচ্ছেন।
তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পরপরই অনেকে ভবন নির্মাণ, মেশিনপত্র ক্রয় করে লোকসানে পণ্য উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন। আশা করে আছেন, গ্যাস পাওয়ার পর তাদের এই লোকসান পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু বছরের পর বছর ঘুরেও সংযোগ নিতে পারছেন না তারা। এই অবস্থায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। মাস শেষে তাদের গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার লোকসান। ঋণ নিয়ে এখন কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।  [চলবে]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ