খুলনার সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা
আব্দুর রাজ্জাক রানা : (গত সংখ্যার পর) এ ছাড়া নজরুল একাডেমি, নাট্য নিকেতন, সঙ্গীত বিদ্যালয়, স্কুল অব মিউজিক ও পল্লীমঙ্গল আর্ট সেন্টার সঙ্গীতের ক্ষেত্রে খুলনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। উদীচী, শিল্পকলা একাডেমি, রূপান্তর, মহেশ্বরপাশা আর্ট স্কুল, দৌলতপুরের সুর বিতানসহ আরো বেশ কিছু সংখ্যক সঙ্গীত সংস্থা রয়েছে। অপর দিকে রেডিও বাংলাদেশ খুলনা কেন্দ্র সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া দেশ বিভাগের পূর্ব কালে কয়েকজন গুণী সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তারা হলেন-সতীশ ভৌমিক, অমিয় বাবু, মুন্সী রইচ উদ্দিন, হরিদাশ, নিলু দাশ গুপ্ত, হেনরী গিলর্বাট, শ্যামল বোস প্রমূখ। সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালক ও অভিনেতা ছিলেন দিলীপ বিশ্বাস, হাসান ইমাম, রাণী সরকার, বেবী জামান, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। এরা সবাই খুলনার বাসিন্দা। খুলনার সঙ্গীত অঙ্গনে বর্তমানে যে ধারা প্রবাহিত হচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারবে নিঃসন্দেহে।
সঙ্গীত লিল্পী: খুলনাতে সর্বমোট কতজন সঙ্গীত শিল্পী আছেন এটাও নিরূপণ করা দুরুহ ব্যাপার। অনেক শিল্পী আছেন তারা ভাল গাইতে পারেন কিন্ত তেমন কোন পরিচিত নেই। তাই আমরা সাধারণত যাদের সঙ্গীতাঙ্গনে সচারচর পদচারণ দেখি নিম্নে তাদের কয়েক জনের নাম দেয়া হলো-যুথিকা রায়, সাধন সরকার, বিনয় রায়, নাসির হায়দার, আছিয়া খাতুন, আকরাম হোসেন, শেখ আলী আহমেদ, মো. সাদতকী, শামীম আহমেদ, অনীল কুমার দে, শাহ আলম বাদল, শাম্মী আকতার, সৈয়দা নিগার সুলতানা, মানিক দেবনাথ, তোরাপ আলী সাই, শিপ্রা দেবনাথ, ভারতী ঘোষ, গাজী আবদুল হাকিম, সাহিন আলী, শাহদাত হোসেন, আলী আকবর খান, রিজিয়া খাতুন, শেখ আবদুস সালাম. আছাদুজ্জামান, সাধন ঘোষ, শামীমা আখতার পলি, জাকিয়া সরোয়ার, মলিনা হোসেন, মলিনা দাস, আ. মান্নান, আলী আহমেদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুর রব মাঝি, হারুন-অর-রশিদ, শাহানা আফরোজ লিপি, শালী ব্যানার্জী, আবদুস সবুর খান চৌধুরী, সৈয়দ আবদুল মতীন, মুক্তি মজুমদার, দীপা ব্যানার্জী, সাপিয়া হাসেম, শামীমা সুলতান মুন্নী, ক্ষমা দাস গুপ্ত, সামসুন নাহার করিম, লিলি নবী, আহসান আরা রুমী, অপূর্ব রায়, খোন্দকার সিদ্দিকুর রহমান, সৈয়দ মোসাদ্দেক আলী মিন্টু, ইউসুফ চৌধুরী, মানিক সাহা, অরুণ সাহা, সামসুদ্দিন আহমেদ, আবদুল মালেক চিশতী, নাহিমা হক, মাজেদ জাহাঙ্গীর, অচনা বোস, রাবিনা ইয়াসমীন, নীলুফার ইয়াসমীন, ফরিদা ইয়াসমীন, গৌর সাহা, শমসের আলী বিশ্বাস, তানিয়া, সৈয়দ জীবন, তৌহিদ হাসান বাবু, বাসুদেব বিশ্বাস বাবলা প্রমুখ। এ ছাড়া এই মুহুর্তে অনেকের নাম স্মরণে আসেনি এ জন্য তাদের নাম দেয়া সম্ভব হয়নি।
গীতিকার: খুলনাতে গীতিকারের সংখ্যা সবচেয়ে কম। কয়েকজন তবে বেশ সুনামের সাথে বিভিন্ন সংগীত রচনা করে যাচ্ছেন। তাদের কয়েক জনের নাম দেয়া হলো-আবু বকর সিদ্দিক, মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, অসীত বরণ ঘোষ, অচিন্তা কুমার ভৌমিক, শেখ আবুল কাশেম মিঠুন, আশরাফ হোসেন, সুশান্ত সরকার, সৈয়দ আবদুল মবীন, সৈয়দ আবদুল মতিন, নারায়ণ চন্দ্র রায়, ফজিলাতুন্নেসা, একেএম মুস্তাফিজুর রহমান, আবদুল গণি, আবু হায়াত মোহম্মদ কামাল, গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী, রফিকুর রশীদ, শহুরে বানু, আ,ব,ম সালাউদ্দিন, মোখলেসুর রহমান বাবলু, ইমরুল কায়েস, সমর কান্তি সরকার প্রমূখ।
নাটকের কথা: নাটক প্রজ্জ্বল শিল্প। আর এই নাটকের কখন যাত্রা হয়েছিল তা বলা মুসকিল। আর কেনইবা মানুষ নাটকের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল তার তেমন কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। আমরা জানি ১৭৯৫ সালে ২৭ অক্টোবর কলকাতায় গোলক নাথ দাসের সহযোগীতায় বাংলাদেশের প্রথম নাটক ‘ছদ্মবেশ’ অভিনীত হয়েছিল। তাই বলা যেতে পারে আমাদের দেশে ১৭৯৫ সাল থেকে নাটকের যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত কয়েক শতাব্দী পার হয়ে গেছে। এর মাঝে অনেক নাটক অভিনীত হয়েছে। তার হিসাব পাওয়া মুশকিল। দেশের অন্য খানে নাটকের প্রাচীন তথ্য পাওয়া গেলেও খুলনার নাটক সম্পর্কে ১৯০০ সালের আগে এখানে যারা বসবাস করতেন তারা অনেক সময় বিভিন্ন নাটকের ব্যবস্থা করতেন বলে জানা যায়। এছাড়া কয়েকজন বৃদ্ধের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, রাধা কৃষ্ণ ও গ্রাম্য রূপ কথার উপর ভিত্তি করে ১৯০০ সালের আগে খুলনার গ্রামাঞ্চলের বিত্তশালী হিন্দুদের বাড়ীতে যাত্রা হতো বলে শুনা যায়। ওই সময়ে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য গতিধারার নাটক বা যাত্রা ছিল না বললেই চলে।
খুলনার নাট্য জীবনকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করে দেখতে পারি। এর এক ভাগ ১৯০০ সাল থেকে ১৯৪৭ দ্বিতীয় ভাগ ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল ও তৃতীয় ভাগ ১৯৭২সাল থেকে আজ পর্যন্ত। ১৯০০ সালে খুলনায় স্থাপিত হয় খুলনা নাট্য নিকেতন। তবে কোন সময়ে এর নাম ছিল ‘খুলনা থিয়েটার’। ১৯২৪ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ‘নাট্য মন্দির’ করা হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি অপেশাদার সৌখিন নাট্য সংস্থা। জানা যায়, এই নাট্য নিকেতনের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করতেন কলিকাতার বিখ্যাত প্রখ্যাত অভিনেতা ও অভিনেত্রী বৃন্দ।
(চলবে)