শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ভারতের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো সমঝোতা দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না -ব্যারিস্টার মওদুদ

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এনপিপি আয়োজিত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি এবং জঙ্গিবাদ দমনে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য পেশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো সমঝোতা বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। বিএনপিও তার বিরোধিতা করবে। প্রতিরক্ষার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির নামে এমন কোনো শর্ত যেন না থাকে যা দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেয় সে বিষয়েও সতর্ক করেন ব্যারিস্টার মওদুদ।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপি।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে  মোট ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা, পরমাণু বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ঋণ সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, বর্ডার হাট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য।
ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, এসব চুক্তি বা সমঝোতায় স্বার্থবিরোধী কোনো শর্ত আছে কিনা তা জানার অধিকার দেশের মানুষের আছে।
তিনি বলেন, আমরা চাইব, যা কিছু করছেন আপনারা তা দেশের মানুষের কাছে প্রকাশ করতে হবে, আমাদেরকে জানতে দিতে হবে। এসব গোপন রাখলে চলবে না। প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতাসহ যেসব চুক্তি বা সমঝোতা আপনারা করছেন, আমাদের দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে এই সব চুক্তিগুলোতে কি আছে, এই সব সমঝোতায় কি শর্ত আছে। দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো শর্ত আছে কি-না? এটা জানার ও দেখার অধিকার দেশের ১৬ কোটি মানুষের আছে।
সরকারের উদ্দেশ্যে মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে দেশে কোনো গণতন্ত্র নাই, রাজনীতিও নাই। আর সে কারণেই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান। আমরা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। এবং আমরা সব সময় বলে এসেছি এটা যদি বৈশ্বয়িক কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন, সবাইকে আহ্বান জানান কিন্তু বিএনপিকে আহ্বান জানান না। তাই একটি কথা খুবই স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছাড়া জঙ্গিবাদ বিষয়ে কোনো জাতীয় ঐক্য কখনো সম্ভবপর নয়। এটা তিনিও জানেন, দেশবাসীও জানে। ফলে যদি এই জঙ্গিবাদ সত্যিকার অর্থে নির্মূল করতে চান তাহলে সরকারের উচিত হবে জঙ্গিবাদকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহিত করে সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা।
এ প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, শুনতেছি ভারত বাংলাদেশকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে। যার বেশিরভাগ ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে এই ঋণ দেয়া হবে। কোনো টেন্ডার হবে না। ভারত যে মূল্যে দেবে সেই মূল্যে কিনতে হবে। আমরা আশা করবো এমন কোনো শর্ত সমঝোতা স্মারকে থাকবে না যাতে সেনাবাহিনী আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের দক্ষতা, সক্ষমতা কমে যায় এমন কোনো শর্ত সমঝোতায় থাকা উচিত হবে না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের নামে নিরীহ মানুষ ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। বিষয়টি দেশের সকল মানুষের মনে ভীষণভাবে দাগ কেটেছে। সে কারণে যারা আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করি তাদের উচিত হবে এ সমস্ত বিষয়গুলো সকলের কাছে তুলে ধরা এবং দেশের মানুষকে এ বিষয়ে আরো সর্তক করে তোলা।
তিনি বলেন, তিস্তার পানি আদায় করতে না পারা এই সরকারের একটি বড় ব্যর্থতা মন্তব্য করে বলেন, পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা না হলে শুধু ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা হবে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক।
দেশে ১০ বছর ধরে রাজনৈতিক শূন্যতা চলছে এমন দাবি করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সকলেই জানি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় না আসায় জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে মওদুদ বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক অনিয়ম হয়েছে। তারা এমন কিছু করতে চেয়েছিলো যাতে ভোটাররা ভোট দিতে না যায়। কিন্তু কুমিল্লার মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে কত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ভোট প্রয়োগ করা যায়। প্রমাণ হয়েছে বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থায়ী পর্যায়ের নির্বাচনের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। জাতীয় নির্বাচনে সরকারের পরিবর্তন হয়। আর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের পরিবর্তন হয় না। আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সমঝোতা সংলাপের মাধ্যমে আলোচনা চাই, সমাধান চাই। দেশের মানুষ যাতে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে পায়। তবে আওয়ামী লীগ যদি সমঝোতার পথ বন্ধ করে দেয় তাহলে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট এবং ১৬ কোটি মানুষের জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প থাকবে না।
বিএনপির নিবন্ধন প্রসঙ্গে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, অনেকে আজ বলে থাকে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপির নিবন্ধন চলে যাবে। কথা হচ্ছে নিবন্ধন থাকুক আর না থাকুক সেটা বিষয় নয়, বিএনপি মনে করে এই মুহূর্তে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশবিরোধী কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি  দেন রিজভী।
এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ