সরোয়ার-তামিম গ্রুপের ৫ জঙ্গি গ্রেফতারের পর কারাগারে
স্টাফ রিপোর্টার : গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তর বাড্ডা থেকে আটক পাঁচ ‘জঙ্গি’র মিরপুর ও কাফরুল এলাকার সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলে দাবি করছে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি-অপারেশন্স) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ‘পাঁচজনের মধ্যে দুজন প্রকৌশলী রয়েছেন। তারা সবাই একটি সেলের সদস্য। প্রায় সোয়া এক বছর তারা একত্রিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। তাদের সদস্য সংখ্যা ১০-১২ জন। এদের অধিকাংশই মিরপুর ও কাফরুল এলাকার বাসিন্দা।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এ সেলের নিয়ন্ত্রক অলিউজ্জামান ওরফে অলি। এই জঙ্গি সেলটি মিরপুর ও কাফরুল এলাকার একটি সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। নাশকতার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মনির এবং সালমান ওরফে আবদুল্লাহকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
কোন সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে স্থাপনার নাম বলা যাবে না। তাহলে সেখানকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে পারে।’
সোমবার দিবাগত রাতে র্যাব যাদের আটক করেছে তারা হলেন- অলিউজ্জামান ওরফে অলি (২৮), আনোয়ারুল আলম (২৯), সালেহ আহাম্মেদ শীষ (২২), আবুল কাশেম (২৭) এবং মো. মোহন ওরফে মহসিন (২০)। তাদের কাছ থেকে খেলনা পিস্তল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও উগ্রপন্থী বই উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের এডিজি জানান, আসামীদের মধ্যে অলিউজ্জামান ২০১২ সালে বুয়েট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত। ২০১৫ সালের শেষে সে সারোয়ার-তামিম গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়।
গ্রেফতারকৃত আবুল কাশেম জঙ্গি কার্যক্রমের পথে আসে অলিউজ্জামানের মাধ্যমে। সে প্রচারের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগৃহীত আরবিতে লেখা বিভিন্ন উকগ্রবাদী মতাদর্শ বাংলায় ভাষান্তর করে ভাইরাল আকারে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিত। আসামীদের সবাই চট্টগ্রামে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
এ বিষয়ে কর্নেল আনোয়ার জানান, আসামীরা চট্টগ্রামের একটি স্থানে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ নিত। তাদের কাছ থেকে খেলনা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তারা এই খেলনা অস্ত্র দিয়ে এইমিং হোল্ডিংয়ের প্রশিক্ষণ নিত।
গ্রেফতার হওয়া অন্যদের মধ্যে সালেহ আহাম্মেদ শীষ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামী মুফতি হান্নানের আত্মীয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে র্যাব।
এর আগে , নিষিদ্ধ জেএমবির ‘সরোয়ার-তামিম গ্রুপের’ সন্দেহভাজন পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়ে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে তারা গ্রেপ্তার করেন। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু উগ্র মতবাদের বই ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করার কথাও বলেছেন তিনি।
আশকোনায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এবং খিলগাঁওয়ে তল্লাশি চৌকিতে ‘হামলা চেষ্টার সময়’ গুলীতে দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার তিন দিনের মাথায় জেএমবি সদস্যদের গ্রেপ্তারের এই খবর এল।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র্যাবের অভিযানের সময় পাঁচতলা থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। পরে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান এবং তিনি শায়খ আবু ইব্রাহীম আল হানিফ নাম নিয়ে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে জেএমবির নতুন একটি অংশকে সংগঠিত করেন। সরোয়ার নিহত হওয়ার আগে ২৭ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় এক জঙ্গি আস্তনায় অভিযানে নিহত হন তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জেএমবির এই গ্রুপকেই গুলশান ও শোলাকিয়াসহ সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলোর অধিকাংশ ঘটনায় দায়ী করে আসছে। এই অংশটিকে পুলিশ বলছে ‘নব্য জেএমবি’, র্যাব বলছে সারোয়ার তামিম গ্রুপ।
গতবছর জুলাই মাসে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মধ্যে বেশ কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও মার্চের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা নতুন করে তাদের তৎপরতার জানান দিতে শুরু করে।
গত শুক্রবার র্যাবের একটি ব্যারাকের সীমানায় ঢুকে পড়ার পর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি। পরদিন ভোরে খিলগাঁওয়ে একটি তল্লাশি চৌকিতে গুলীতে নিহত হন এক ব্যক্তি, যিনি বিস্ফোরক বহন করছিলেন বলে র্যাবের ভাষ্য।
এর আগে গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার পর ধরা পড়ে দুই জঙ্গি। তাদের মধ্যে একজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
এরপর ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড পৌর এলাকার আমিরাবাদের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরকসহ এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমতলা এলাকায় আরেক বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলীতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হন। পরে বোমায় বিক্ষত এক শিশুর লাশ পাওয়া যায়। কুমিল্লা ও সীতাকুন্ডে গ্রেপ্তার ও নিহত সবাই নব্য জেএমবির সদস্য বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা।
পাঁচ ‘জঙ্গি’ কারাগারে : নাশকতার পরিকল্পনাকারী হিসেবে গ্রেফতার পাঁচ ‘জঙ্গি’কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গতকাল বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম মমলার মূল নথি না থাকায় ওই পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য ২৮ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রেজাউল করিম গতকাল দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন।