বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সিলেটের দুই উপজেলায় দুই চেয়ারম্যানসহ ৫ পদে বিএনপির জয়

কবির আহমদ, সিলেট: সিলেটের ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি হয়েছে। আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে বিএনপি প্রার্থীদের এই জয়জয়কার। গত সোমবার সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং জগন্নাথপুরে চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পেলো বিএনপি। শুধুমাত্র একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পেয়েছে আওয়ামী লীগ। দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সিলেটের ওসমানীনগর ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচনে বেসকারিভাবে জয়লাভ করেছেন বিএনপির দুই প্রার্থী ময়নুল হক চৌধুরী ও আতাউর রহমান।
ওসমানীনগরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন জগলু চৌধুরী। নির্বাচনে তিনি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবিয়েছেন।
বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী ওসমানীনগরে ২১০৮ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী ময়নুলের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
৫২টি কেন্দ্র মিলিয়ে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে ময়নুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ২০৭৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ১৮৬৭৮।
কিন্তু এই উপজেলায় নৌকা মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান পেয়েছেন ১০০৬৮ ভোট এবং লাঙ্গল মার্কা পেয়েছেন ২৫৩৩ ভোট।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় বিএনপি প্রার্থী আতাউর রহমান ৫৮৪০ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে জয়লাভ করেছেন।
অপরদিকে জগন্নাথপুর উপজেলায় বিএনপি প্রার্থী আতাউর রহমান পেয়েছেন ২৯৮৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আকমল হোসেন পান ২৪০২৩ ভোট।
জগন্নাথপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদির আহমদ মুক্তা ৩য় হয়েছেন।
এদিকে অনেক ভোটার এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, আওয়ামী লীগের এমন বিপর্যস্ত ফলাফলের পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী, দলীয় কোন্দল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব। তারা এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে গত সোমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া নৌকা মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৯৮০৯ ভোট এবং লাঙ্গল মার্কা নিয়ে জাতীয় পার্টির সাব্বির আহমদ পেয়েছেন ২৪২৪ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী গয়াস উদ্দিন। তিনি ২৯৭০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তালা মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস খান ভোট পেয়েছেন ২১১৪৭। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মুসলিমা আক্তার চৌধুরী ২৫৫০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুক্তা বেগম পেয়েছেন ১৬০৬০ ভোট।
এদিকে দীর্ঘ সাত বছর পর অনুষ্ঠিত গত সোমবার জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ২৯,৯১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২৫,১৯৮ ভোট এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তাদির আহমদ আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ১৩,৬১৫ ভোট। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজন কুমার দেব। তিনি নৌকা প্রতীকে ২০২৪২ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপির প্রার্থীর ফারজানা বেগম। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৮১৪৬।
নির্বাচন রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কামরুজ্জামান জানান, বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজন কুমার দেব ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ফারজানা বেগম।
এর আগে গত সোমবার উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রথমবারের মতো প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। ছিল না ভোটারদের মধ্যে কোনো উৎসব-উদ্দীপনা।
নির্বাচন সহকারী রির্টানিং অফিসার জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জানান, ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ ছিল খুবই ভালো। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে পুুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ৬শ’ ৯২ ও মহিলা ভোটার ৮৩ হাজার ৮শ’ ৭ জন। মোট ৮৭টি ভোট কেন্দ্রের ৪৩২টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ৮শ’ ১৩ জন, বিজিবি-৬০ জন, র‌্যাব-৩২ জন, আনসার ও ভিডিপির ১ হাজার ৪৪ এছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩১টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালনে ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ