বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

গ্যাস সংকট তীব্র ॥ শিল্প কারখানায় উৎপাদনসহ চট্টগ্রামে জীবনযাত্রা মারাত্মক ব্যাহত

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম শুধুমাত্র বন্দর নগরী নয়, বাণিজ্যিক রাজধানী ও জাতীয় অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। চাহিদার অর্ধেক গ্যাসও পাচ্ছে না বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম। আবার সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপও (প্রেসার) কম। এতে বিপাকে পড়েছেন আবাসিক খাতের লাখো গ্রাহক, শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় ঘরে চুলা জ্বলে না অনেক এলাকায়। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে শুধুমাত্র শিল্প কলকারখানা নয়, বাসাবাড়ী ও জীবনযাত্রাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকট অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সমস্যাটি শুধুমাত্র গৃহিণীদের নয়, বস্তুত সামগ্রিক জাতীয় অর্থনীতিই পড়েছে সংকটের মুখে। জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম যে কোনো বিবেচনায় গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাই বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহকৃত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশপাশি গ্যাসের চাপও (প্রেসার) বাড়ানো, উৎপাদন, সংযোগ, সুষম বণ্টন ও বিতরণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ।
গ্যাস সংকট সমাধানে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ, এলপিজিকে আরো স্বল্পমূল্য, বিতরণ ব্যবস্থা সহজলভ্য ও জনবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি  কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে ক্যাব নেতৃবৃন্দ। কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আয়ুব খান চৌধুরী স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি  ইকবাল আলী আকবর, ক্যাব মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম এবং কেজিডিসিএল এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী খাইজ আহমেদ মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন চট্টগ্রামে বেশ কয়েক বছর ধরে গ্যাস সংকটের কারণে নগরীর বেশ কিছু আবাসিক এলাকায় বেশিরভাগ সময় চুলা জ্বলছে না। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তিন-চারঘণ্টা গ্যাস থাকছে। তবে সূর্য ওঠার আগেই তা চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নগরজীবনে কেবলই গ্যাসের চুলার ওপর যারা নিভর্রশীল, তারা পড়েছেন তীব্র সংকটে। তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বেশ কয়েকবার চট্টগ্রামে বিরাজমান গ্যাস সংকট নিরসন হবার আশ্বাস দিলেও এর সুরাহা হয় নি। চট্টগ্রামের খুলসী, চকবাজার, কোতোয়ালী, বন্দর, পতেঙ্গা ও হালিশহর এলকায় গ্যাস সংকট প্রকট। বিশেষ করে বাসা-বাড়ি ও শিল্প কলকারখানায় রান্নাবান্না ও শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে ৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে জাতীয় সঞ্চালন লাইন থেকে গড়ে গ্যাস পাওয়া যায় ২৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে গ্যাস রেশনিং করতে হচ্ছে। গ্যাসের সংকটের কারণে বেড়ে গেছে গ্যাস সিলিন্ডারের দামও। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে বেশকিছু এলাকায় পরিবেশ বিনাশী লাকড়িই এখন রান্নাবান্নার প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে। শিল্প-কারখানায়ও গ্যাসের চাহিদার এক-চতুর্থাংশও পাওয়া যাচ্ছে না। সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের ভারী শিল্প-কারখানায় দৈনিক মাত্র ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান। গ্যাসের অভাবে ঠিকমতো উৎপাদন না হওয়ায় ব্যাংকের ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোও ৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে প্রতিদিন। তারপরও গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ থাকে না। কেজিডিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আইয়ুব খান চৌধুরী নগরীর গ্যাস সংকটাপন্ন এলাকাগুলিতে দ্রুত মেইনটিন্যান্স টিম পাঠিয়ে সঞ্চালন লাইনে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ, অবৈধ সংযোগ ও অপচয় রোধে ভিজিল্যান্স টিম পাঠানোর প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। একই সাথে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ক্যাব এর সাথে ভোক্তা স্বার্থ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে যৌথ কর্মসূচি পরিচালনার আশ্বাস দেন।
এদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সঙ্কটের কারণে বন্দর নগরীর নারীদের ভোগান্তিতে অসন্তোষ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গত  বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতারা দেখা করতে গেলে নিজের অসন্তোষের কথা জানান তিনি।  মহিউদ্দিন বলেন, জনজীবনে মৌলিক উপাদানের সমস্যা মোকাবেলায় নারীদের হিমশিম খেতে হয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সঙ্কটে তাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় নারীদের বাড়ির ছাদে কাঁচা চুলা বসিয়ে রান্না করতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে তাদের অবস্থা অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে। সন্তানসহ মশার কামড়ে জর্জরিত হতে হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে কম গ্যাস সরবরাহ থাকায় এবং শীতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। মাঝে মাঝে লোডশেডিং এর পাশাপাশি নগরীতে মশার উৎপাতও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নারীদের সোচ্চার হতে বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ