শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ধুলা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ওয়াটার থেরাপি

রাজধানীর ধুলোবালীর ওড়াওড়ি নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে রাজপথে চলছে পানি ছিটানোর কাজ। -ছবি : সংগৃহীত

তোফাজ্জল হোসেন কামাল: উন্নয়নের নামে গোটা রাজধানীজুড়েই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। আর এই অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কয়েকটি কাজ একসাথে চলায় ধুলায় ধূসর হচ্ছে দেশের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু। এতে নগরবাসীকে নিত্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, আক্রান্ত হতে হচ্ছে নানা ব্যধিতে। ধুলা দূষণ ও বিড়ম্বনা এড়াতে দেরিতে হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এবার নেয়া হয়েছে ‘ওয়াটার থেরাপি’। পাশে সংশয় জাগে এ থেরাপি নগরবাসীকে কতটা স্বস্তি দিতে পারবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা জানান, নিজস্ব অর্থায়নে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক, ৮৫ কিলোমিটার ফুটপাত ও ২৩ কিলোমিটার নর্দমা উন্নয়নের কাজ চলছে তাদের। এছাড়া চলছে আরও চারটি প্রকল্পের আওতায় ১৭৫ কিলোমিটার রাস্তা, ২১৩ কিলোমিটার নর্দমা এবং ১১৮ কিলোমিটার ফুটপাত ও সাড়ে ৫ কিলোমিটার মিডিয়ান উন্নয়ন কাজ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা জানান, তারা ৫০ কিলোমিটার সড়ক, ৫৪ কিলোমিটার নর্দমা ও ১৪ কিলোমিটার ফুটপাতে উন্নয়ন কাজ চালাচ্ছে।

এছাড়া ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন নালা, তিতাস গ্যাসের লাইন স্থাপন, ডেসকো ও ডিপিডিসি ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার, বিটিসিএল টেলিফোন লাইন এবং বিভিন্ন বেসরকারি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ভূগর্ভস্থ ইন্টারনেট কেবল লাইন বসাতে রাজধানীজুড়ে সড়ক কাটা হচ্ছে। এসব কাজের জন্যও সড়কে ধুলা হচ্ছে। এই ধুলার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে কোনো প্রযুক্তি হাতে না থাকলেও পানি ছিটানোর নির্দেশনা উন্নয়ন কাজগুলোর ঠিকাদারদের দেয়া আছে বলে সিটি করপোরেশন ও সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্তু তারা এতদিন সে কাজটি না করায় বাধ্য হয়েই দুই সিটি করপোরেশন চালাচ্ছে ওয়াটার থেরাপি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করে পানি ছিটিয়ে নগরীর ধুলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিদিন কয়েকটি প্রধান সড়কে ওয়াটার বাউজার (পানি পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি) দিয়ে পানি ছিটানো হয়। এতে কিছুক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট সড়কে ধুলা নিবারণ হলেও পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর সড়কের ধারে পড়ে থাকা বালি ও মাটি আবারও ধুলা উড়তে থাকে।

পরিবেশবাদীরা নগরীতে ধুলার উৎপাত কমাতে সড়কের ধারে বালি ও মাটি ফেলে রাখার প্রবণতা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সড়কের পাশে থাকা মাটি ও বালুর কারণে নগরীতে ধুলা হচ্ছে। এগুলো যেন সড়কের পাশে পড়ে না থাকে, সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এর পাশাপাশি ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরীর বড় সড়কগুলোতে সকাল-বিকেল পানি ছিটানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাক দিয়ে ছিটানো পানিতে পুরোপুরি নগরী তিন-চার ঘণ্টা ধুলামুক্ত থাকছে।’

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আনিসুর রহমান পবন দৈনিক সংগ্রামকে জানান, আমাদের করপোরেশনের অংশে পানি ছিটানোর জন্য ৫টি অঞ্চলেই একটা রোড ম্যাপ করে দেয়া হয়েছে। এই ম্যাপ অনুসারেই এখন পানি ছিটানোর কাজ চলছে।

কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে মালিবাগ-মৌচাক সড়কের ওপর সারাক্ষণ মাটি ও বালি পড়ে থাকছে। মিরপুরের রূপনগর, ছয় নম্বর সেকশন, ১৪ নম্বর সেকশন, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর-বসিলা সড়ক, পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, মিরহাজীর বাগ, দোলাইরপাড়, পোস্তগোলা, মালিবাগ, মগবাজার, রমনা, কাকরাইল, মেরুল, রাজারবাগ, বৌদ্ধমন্দির,বাসাবো, সবুজবাগ, চাঁনখারপুল প্রভৃতি এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। এসব কাজের সুবিধার্থে রাস্তা খুঁড়ে তোলা মাটি প্রধান সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে।

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ডিভাইডারের মাটি ধুলা উৎপাদনের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। একটু জোরে বাতাস বইলে ডিভাইডারের মাটি উড়ে গিয়ে আশপাশের দোকানপাট নষ্ট করে দেয়। স্থানীয়রা বলেন, ‘উৎসস্থল ঠিক না করায় ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে ধুলার উৎপাত সবচেয়ে বেশি।’ তাদের প্রশ্ন এখন তো আর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে না। তাহলে সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভারের নিচের ডিভাইডার মেরামত করে না কেন ? ধুলার উৎসস্থল মেরামত না করে শুধু পানি ছিটিয়ে কী লাভ?’

মিরহাজীরবাগের অলিগলি মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারের লোকজন বালি ও পাথর ফেলে রেখেছে সড়কের ওপর। যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে এ বালি বাতাসে উড়ছে। দয়াগঞ্জ মেথরপট্টির সামনের সড়কেও প্রায় সময়ই বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য আনা বালি ফেলে রাখা হয়। মাঝে মধ্যে সকালে সিটি করপোরেশনের ট্রাক দিয়ে এসব সড়কে পানি ছিটানো হলেও দেড়-দুই ঘণ্টা পর সেখানে আবারও ধুলা উড়তে থাকে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিএনসিসির লোকজন ট্রাক দিয়ে নিয়মিত পানি ছিটাচ্ছে। এর পাশাপাশি সড়কে যারা সংস্কার কাজ করছে সেইসব ঠিকাদারকেও কঠোর ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে, যাতে ধুলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধুলা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না করে শুধু পানি ছিটিয়ে লাভ হবে না। এতে কিছু সময়ের জন্য ধুলা দূর হতে পারে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান হবে না।’ তিনি বলেন, ‘মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ধুলার জন্য চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে প্রতিটি নির্মাণ কাজের জন্য ধুলা নিয়ন্ত্রণের শর্তজুড়ে দিতে হবে। এই শর্ত যেন কঠোরভাবে পালন করা হয়, তা দেখবে সিটি করপোরেশন।’

গুলশান, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, রামপুরা, মহাখালী, ধানমন্ডির মিরপুর রোড, আসাদগেট, বেগম রোকেয়া সরণি, বিজয়নগর, গুলিস্থান, যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, সবুজবাগ, মগবাজারের রমনা থানার সামনের এলাকা, শান্তিনগর, রাজারবাগ, কাকরাইল এলাকায় ঘুরলেই বোঝা যায় রাস্তার ওপরে কতটা জঞ্জাল।

ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার বসাতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে খোঁড়া হয়েছে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের প্রশিকা মোড় থেকে শিয়ালবাড়ী মোড় পর্যন্ত সড়কের একপাশ। গর্ত করে মাটি তুলে তা রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। এভাবে মাটি ফেলার কারণে এ সড়কে ধুলা বেড়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। তারা বলেন, ‘রাস্তায় মাটি উঠাইয়া রাইখা গেছে প্রায় ১০ দিন আগে। এরপর আর খবর নাই। আগে সড়কে ডেইলি ঝাড়ু দিত। মাটির কারণে ঝাড়ু দেয় না, এই মাটি শুকাইয়াও রাস্তায় ধুলার পরিমাণ বাড়াইছে।”

ফুটপাত ও ড্রেনেজ উন্নয়নকাজের জন্য গুলিস্তানে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটক পর্যন্ত সড়কের দুপাশে খোঁড়া হয়েছে। সেখানেও গর্ত করে খুঁড়ে তোলা মাটি ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তায়। নির্মাণ কাজের জন্য আনা বালু-ইট রাখা হয়েছে সড়কে।

গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রাস্তায় মাটি ফেলে রাখায় এখানে ধুলার পরিমাণ বেড়েছে। ‘গুলিস্তানে এমনিতেই ধুলা বেশি, এখন আরও বাড়ছে। ডিউটি শেষে রাতে বাসায় গেলে মাথার চুল সাদা হয়ে যায়। হাঁচি দিলে নাক থেকে কালো কালো কী যেন বের হয়ে আসে।’

বিজয়নগর, কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত ও ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ চলছে। সেখানে বিভিন্ন অংশে মাটি ছড়িয়ে আছে। তা থেকে হচ্ছে ধুলা। গাড়ি চলাচলের সময় ধুলা উড়ছে বাতাসে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ উন্নয়ন কাজের কারণে ভোগান্তি বেড়েছে বলে জানান বিজয়নগরের ‘অপটো হোম’ নামে একটি চশমা দোকানের কর্মী হুমায়ুন কবির। ‘গত ২ মাস ধইরা এই কাজ করতেছে। মাটি তুইলা রাস্তায় রাইখা দেয়। ধুলা হইলেও পানি ছিটায় না। আমাগো দোকানে প্রচুর ধুলা আসে। দিনে কয়েকবার ঝাড়ু দিতে হয়।’

প্রায় সারাবছরই ধুলায় আচ্ছাদিত থাকে যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কগুলো। ডেমরা সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়কের ভাঙাচোরা অংশ থেকে ধুলা ওড়ে। এছাড়া সড়ক, ফুটপাত ও ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে। এ এলাকায়ও ধুলার রাজত্ব।

বিমানবন্দর সড়কের সেতু ভবন থেকে মহাখালী আমতলী পর্যন্ত সড়কের পাশের ফুটপাত ঘেঁষে নিষ্কাশন নালা বসানো হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন সড়কটি মেরামত না করায় ধুলা উড়ছে।

প্রগতি সরণির কোকাকোলা এলাকা থেকে নতুনবাজার হয়ে বাঁশতলা পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ডেসকোর ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন বসাতেও সড়ক খোঁড়া হয়েছে। সারাদিনই ধুলাচ্ছন্ন থাকে এই সড়ক।

উলন থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন বসাতে রমনা থেকে মগবাজার হয়ে মালিবাগের আবুল হোটেল এলাকা পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ছে ডিপিডিসি। সেখানে রাস্তা খুঁড়ে তোলা মাটি রাস্তার পাশেই রেখে দেয়া হয়েছে। তা থেকে ধুলা হচ্ছে রাস্তায়।

উন্নয়ন কাজ চলাকালে আশপাশের পরিবেশ ঠিক রাখতে ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেয়া থাকে বলে জানান ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক মো. রমিজ উদ্দিন সরকার। তবে তিনি স্বীকার করেন, বেশিরভাগ সময়ই ঠিকাদার সেভাবে কাজ করে না। ‘এটা হয়তো শতভাগ করতে পারে না, এটা নিয়ে আমরাও সন্তুষ্ট না। তবে এগুলো ঠিকভাবে করতে আমরা তাদের চাপ দিই।’

দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়ন কাজ চলার সময় জনসাধারণের যেন কোনো দুর্ভোগ না হয় তা ‘টেন্ডার ডকুমেন্টে’ বলা থাকে। ঠিকাদারদের সেভাবেই কাজ করার কথা। কিন্তু তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না বলে স্বীকার করেন তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, উন্নয়নকাজ করার সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণেও জনসাধারণের দুর্ভোগ হয়। ‘অনেকদিন বৃষ্টি না থাকায় এমনিতেই ধুলা বেড়ে গেছে। এছাড়া ঢাকার রাস্তা ছোট ছোট বলে তা পুরোপুরি বন্ধ করে কাজ করা যায় না। গাড়ি চলার পাশাপাশি কাজ করতে হয়। এ কারণে সড়কে ধুলা ওড়ে।’ তিনি বলেন, ধুলা কমাতে সিটি করপোরেশন সড়কে পানি ছিটাচ্ছে। ‘যান্ত্রিক শাখার ৯টি বাউজার গাড়ি দিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি সড়কে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে পানি ছিটানো হয়।’

উন্নয়ন কাজের ফলে সৃষ্ট ধুলা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রযুক্তি নেই বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাক। ‘দৈনন্দিন কাজের ফলে যে ধুলা হয় তা পরিচ্ছন্নকর্মীরা নিয়মিত ঝাড়ু দেন। কিন্তু নির্মাণকাজের ফলে সৃষ্ট বিপুল পরিমাণ ধুলা নিবারণের মতো য্ন্ত্রাংশ এবং কর্মপরিকল্পনা আমাদের নেই। এটা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার কাজও নয়,’ বলেন তিনি।

উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রাস্তায় যেন কম ধুলাবালি ওড়ে সেদিকে নজর রাখতে ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেয়া আছে। ‘তারা আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে কিনা আমরা তা মনিটর করি। কিন্তু অনেক সময় সব জায়গায় মনিটর করা সম্ভব হয় না।’

সড়কে পানি ছিটানোর জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন ২০১৭ সালের মধ্যে আটটি ওয়াটার বাউজার কিনবে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী। ‘আমাদের দুটি ওয়াটার বাউজার আছে। প্রতিটি অঞ্চলে দু’টি করে বাউজার দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এটা হলে আমরা সবগুলো সড়ক পরিষ্কার করে পানি ছিটাতে পারব। এটা হলে সড়কে ধুলার পরিমাণ কমে যাবে।’

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিসুর রহমান পবন জানান, আমাদের ওয়াটার বাউজারগুলো পানি ছিটানোর রোডম্যাপ অনুসারে প্রতিদিনই পনি ছিটাচ্ছে। তিনি ৭ টি পানির বাউজারের তথ্য সরবরাহ করে জানান, একটি ওয়াটার বাউজার দিয়ে রোডম্যাপ অনুসারে অঞ্চল - ১ এলাকার ধানমন্ডি ৩২ নং থেকে ১২/এ হয়ে ৭/এ থেকে নীলক্ষেত রোড হতে মানিকমিয়া এভিনিউ-২৭ এর শেষ মাথা/পশ্চিম মাথা পর্যন্ত রুটে এবং বিজিবি গেইট থেকে সিটি কলেজ গেইট উভয় পাশ, এলিফেন্ট রোড এলাকায় আরেকটি রুটে সকালে পানি ছিটানো হয়। দুপুরে ছিটানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।

অপর একটি বাউজার দিয়ে ওই অঞ্চলেরই কাকরাইল মসজিদ থেকে মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট, কলেজ রোড, শিক্ষা ভবন এলাকায় পানি ছিটানো হয় সকালে। দুপুরে নগর ভবন, গোলাপশাহ মাজার, সচিবালয়, জিরো পয়েন্ট, জিপিও,বঙ্গভবনের দক্ষিণ গেইট এলাকায় পানি ছিটানো হয় দুপুরে।

আরেকটি বাউজার দিয়ে বাংলামোটর, শাহবাগ, রূপসী বাংলা হোটেল, মিন্টো রোড, মগবাজার, কাকরাইল মোড় ও কাকরাইল মসজিদ এলাকায় পানি ছিটানো হয়।

অঞ্চল-২ এলাকার মধুমতি সিনেমা হল, শাপলা চত্বর, নটরডেম কলেজ, ফকিরাপুল, কমলাপুর, আইডিয়াল স্কুল, রাজারবাগ,পুলিশ হাসপাতাল, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, বঙ্গভবন এলাকায় একটি বাউজার দিয়ে পানি ছিটানো হয়। এটি দিয়েই মাঝে মাঝে শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকায় পানি ছিটানো হয়।

অঞ্চল-৩ এলাকার নীলক্ষেত পেট্রোল পাম্প, আজিমপুর চৌরাস্তা, আজিমপুর কবরস্থান রাস্তার দুই পাশে, ওই অঞ্চল-৩ এর অফিস পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে,পলাশী মোড়, ঢাকেশ্বরী মন্দির, আলিয়া মাদ্রাসা, বকশি বাজার, বদরুন্নেছা কলেজ মোড়, লালবাগ কেল্লার সামনের রাস্তা, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের রাস্তা, শায়েস্তা ঘাট রোড, র‌্যাবের অফিস ও লালবাগ শাহী মসজিদ এলাকায় একটি ওযাটার বাউজার দিয়ে পানি ছিটানো হয়।

অঞ্চল-৪ এলাকার গুলিস্তান হতে নর্থ সাউথ রোড হয়ে সদরঘাট, ইংলিশ রোড হতে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ পর্যন্ত পানি ছিটানো হয় একটি বাউজার দিয়ে।

অঞ্চল-৫ এলাকার বঙ্গভবন থেকে ইত্তেফাক এবং র‌্যাব-৩ হয়ে জয়কালী মন্দির, মানিকনগর থেকে গোলাপবাগ র‌্যাব-১০ এবং যান্ত্রিক-২ হয়ে সায়েদাবাদ ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী থেকে রাজধানী সুপার মার্কেট রাস্তার উভয় পাশে ও শহীদ ফারুক সড়ক, জুরাইন রেলগেইট থেকে দয়াগঞ্জ মোড় এবং ধোলাইখাল হয়ে পোস্তগোলা পর্যন্ত পানি ছিটানো হয় একটি বাউজার দিয়ে।

ডিএসসিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তাদের প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের জন্য এতদিন ঢাকা ওয়াসাকে কোনো প্রকার বিল বা অর্থ পরিশোধ করতে হতো না। এখন ওয়াসা পানির বিল দাবি করেছে। তা ছাড়া রোডম্যাপ অনুসারে পানি ছিটাতে অতিরিক্ত পানির দরকার হবে। তাই ঢাকা ওয়াসা পানির বিল দাবী করার বিষয়টি গত ১২ ফেব্রুয়ারি কর্পোরেশনের নিয়মিত সাপ্তাহিক সভায় আলোচনার পর ওয়াসাকে এখন থেকে পানির বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নানা অভাব অনটনের কারণে ডিএসসিসিকে রেশনিং করে চলতে হচ্ছে। বিদায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে নিত্য হিমশিম খেতে হয়। মাস শেষে থাকে বেতন-ভাতার বিষয়টি। তার সাথে ঠিকাদারদের বিলসহ নিত্যদিনের খরচা। এসব মেটাতে গিয়ে ডিএসসিসির হাপিত্যেশ। এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসাকে তার প্রাপ্য পানির বিল পরিশোধে ডিএসসিসি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়া পরিবেশবাদীদের বক্তব্য ধুলাবালির ওড়াওড়ি দমাতে পনির যে থেরাপি চলছে তা কতদিনের?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ