বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিনামূল্যে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেল ঠোঁট ও তালুকাটা ৫ শতাধিক শিশু

পাবনা : উপরের ছবিগুলো অপারেশনের পূর্বে এবং নিচের ছবিগুলো অপারেশনের পরে

পাবনা সংবাদদাতা : জন্মের পর থেকে যারা ছিলো সমাজের কাছে বোঝা এবং অবহেলার পাত্র। তারা এখন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বিনা মূল্যে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ৫ শতাধিক শিশু স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে। এসব দরিদ্র শিশুদের অপারেশনসহ সব খরচ বহন করেছে পাবনা মুসলিম এইড কমিউনিটি হাসপাতাল। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এসে গত তিন বছরে ৫০টি ক্যাম্পের মাধ্যমে এ শিশুদের অপারেশন সম্পন্ন করেন। মানব সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন বলে মনে করেন রোগীদের অভিভাবক ও পাবনার সচেতন মহল। 

৮ মাস বয়সের ঠোঁটকাটা রোগী সামির হোসেনের বাবা সাদীপুর গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, জন্মের পর থেকে তিনি তার সন্তান নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চরাঞ্চলের অতিব দরিদ্র হওয়ায় অপারেশনের টাকা জোগার করা অসম্ভব হয়ে যায়। পরে তিনি জানতে পারেন পাবনা মুসলিম এইড হাসপাতালে বিনা মূল্যে এই অপারেশন করা হবে। তখন তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে তার সন্তানের অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। এখন তার সন্তানের মুখ স্বাভাবিক। 

সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরের হামিদুল্লাহ জানান, তার ছেলে কিফাত উল্লাহকে (২) নিয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। তিনি শুনেছেন এসব অপারেশন করতে ৫০ হাজারের মতো টাকা লাগে। এতো টাকা জোগাড় না করতে পেরে তিনি ভেঙে পড়েন। কিšুÍ মুসলিম এইডের মাধ্যমে বিনামূল্যে তার ছেলেকে অপারেশন করতে পেরে তিনি এখন খুশি। 

নাটোরের লালপুর থেকে আসা শরিফুল ইসলাম এবার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তার ঠোঁটকাটা থাকায় স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না। ক্লাসের বন্ধুরা তার সাথে হাসি তামাশা করতো। মানসিকভাবে সে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিল সমাজে। মুখ না দেখাতে অনেক সময় লোকিয়ে থাকতে ভাল বাসতো। লোক মুখে শুনে সে মুসলিম এইড হাসপাতালে এসে তার নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। এজন্য সে মুসলিম এইডের কাছে কৃতজ্ঞ তিনি। 

মুসলিম এইড হাসপাতাল পাবনার এ্যাডমিন এ্যান্ড এইচআর অফিসার ইজিঃ আইয়ুব আলী খান বলেন, এখন প্রতি মাসেই এই ধরনের ক্যাম্প মুসলিম এইড হাসপাতালে আয়োজন করা হয়। বিনামূল্যে এই ক্যাম্প থেকে দূর দুরান্তের ঠোঁট ও তালুকাটা রোগীদের উন্নত মানের অপরেশনের মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক ও সুন্দর মুখচ্ছবি সম্পন্ন জীবন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আশা করি মানুষের কল্যাণে এই ক্যাম্পের ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও চলমান থাকবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাষ্টিক সার্জারি বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা: সাজ্জাদ খোন্দকারের নেতৃত্বাধীন একটি বিশেষ টিম এসব অপারেশন সম্পন্ন করেন। এই টিমের সদস্য ডা: মাজহারুল হক জানান, এসব অপারেশনে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিšুÍ মুসলিম এইড এসব অপারেশনের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে থাকে। তিনি আরো জানান, জন্মের পর এই ধরনের সন্তান হলে অনেকেই চন্দ্র গ্রহণ সূর্য গ্রহণকে দায়ি করে থাকেন। আসলে এসব কুসংস্কার। অনেকেই তার পরিবারের জন্য অভিশাপ মনে করে থাকেন। আর দরিদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সব চেয়ে বেশী এই রোগী পাওয়া যায়। ধনীর সন্তানদের খুবই সামান্য এই রোগ হয়ে থাকে। মূলত পুষ্টির অভাবজনিত কারণে এই ধরনের রোগ হতে পারে। তবে অপারেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব বলে চিকিৎসবরা জানিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ