গোসাইরহাটে বাবাকে গলাকেটে হত্যা ॥ ঘাতক ছেলে আটক
শরীয়তপুর সংবাদদাতা : শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবাকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ঘাতক ছেলেকে গোসাইরহাট থানা পুলিশ আটক করেছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। স্থানীয় ও স্বজনদের দাবি, ঘাতক ছেলেটি মানসিক প্রতিবন্ধী। তবে পুলিশ বলছে কোনো ডাক্তারি সার্টিফিকেট ছাড়া মানসিক প্রতিবন্ধী বলা যাচ্ছে না।
গোসাইরহাট থানা, নিহতের জামাতা আবুল কালাম মাঝি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালিনগর গ্রামের ওয়ারেছ খাঁ গত ৬ বছর পূর্বে তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তার ছোট ছেলে দবিরকে নিয়ে একাই বাড়িতে বসবাস করে আসছে। অপর বড় দুই ছেলে ঢাকায় বসবাস করে এবং দুই মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। দবির গত দুই বছর আগে গোসাইরহাট সামছুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বিএ ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয় বলে তার স্বজনদের দাবি। এরপর সে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। দবির এবং তার বাবা ওয়ারেছ খার সাথে মাঝে মধ্যেই ঝগড়াঝাটির ঘটনা ঘটতো। গতকাল সকালে বাবা ওয়ারেছ খাঁ নিজবাড়ির উঠানে বসে কাপড় কাঁচছিল। এ সময় ছেলে দবিরের সাথে হঠাৎ করে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দবির ঘর থেকে ধারালো ছেনদা নিয়ে বাবার গলায় কোপ দিয়ে গলাকেটে ফেলে। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তখন দবির বাবা বাবা করে চিৎকার করে এবং নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। দবিরের চিৎকার শুনে চাচাতো ভাই রুবেল খান, সেলিম উদ্দিনসহ আশপাশের লোকজন এসে তাকে আটক করে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। গোসাইরহাট থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনাস্থল থেকে গোসাইরহাট থানা পুলিশ হত্যার আলামত হিসেবে রক্তাক্ত জামা-কাপড় ও ছেনদা উদ্ধার করে এবং দবিরকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নিহতের ভাতিজা রুবেল খান বলেন, দবির তার বাবাকে হত্যা করে ডাক-চিৎকার দিয়ে নিজের গলায় ছেনদা দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় আমরা তাকে আটক করে গাছের সাথে বেঁধে রাখি।
নিহতের মেয়ে নাজমা বেগম ও জামাতা আবুল কালাম মাঝি বলেন, প্রায় দেড় বছর যাবৎ দবির মানসিক প্রতিবন্ধী অবস্থায় আছে। এ কারণে সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল সকালে দবির বাবার কাছে টাকা চায়। টাকা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছেনদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা ঘটনার সংবাদ শুনে এসে দেখি বাবার রক্তাক্ত লাশ উঠানে পড়ে আছে। আমার বাবা ও ভাই দু’জনেই এই বাড়িতে থাকতো।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ঘাতক ছেলেটিকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় ও স্বজনদের দাবি, ঘাতক ছেলেটি মানসিক প্রতিবন্ধী। এ বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। মামলার প্রস্তুতি চলছে, মামলা হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।