খুলনা ও যশোরে ৭ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ২৭ কোটি টাকা মজুরি বকেয়া
খুলনা অফিস : খুলনা ও যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলে শ্রমিকদের প্রায় ২৭ কোটি টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থার কারণে শ্রমিক পরিবারগুলো চরম সমস্যায় দিনযাপন করছে। এ দিকে এন্টি ড্যাম্পিংসহ নানা কারণে ৫টি পাটকলে প্রায় ৬৪ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। এর ফলে মিলগুলো চলতি মূলধন সঙ্কটে পড়েছে।
পাটকল শ্রমিকরা জানায়, খুলনা জোনের রাষ্ট্রায়ত্ত ৭ পাটকলে শ্রমিকদের মজুরিসহ ৫ থেকে ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়েছে। আলীম জুট মিলে ৬ সপ্তাহের এবং পুরাতন ৪৪ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। চলতি বকেয়ার পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা। প্লাটিনাম জুট মিলে ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া।
যার পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইস্টার্ন জুট মিলে ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া। যার পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিতে (জেজেআই) ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। কাপেটিং জুট মিলে ৬ সপ্তাহের মজুরির পরিমাণ প্রায় কোটি ১০ লাখ টাকা। স্টার জুট মিলে ৫ সপ্তাহের মজুরিতে বকেয়া রয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। এ সাত পাটকলে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ প্রায় সাত কোটি ৪৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে শ্রমিকরা জানায়।
এ পরিমাণ বকেয়া মজুরি হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, মিলের বর্তমান উৎপাদিত পাটের ভারতীয় বাজারে শুল্ক (এন্টিড্যাম্পিং) বৃদ্ধিতে রফতানি কমে যাওয়া। ফলে অধিকাংশ মিলে উৎপাদিত পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। এ কারণে চলতি মূলধন সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারছে না।
ক্রিসেন্ট জুট মিলে প্রায় ৩০ কোটি টাকার উৎপাদিত পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। এছাড়া স্টার জুট মিলে এর পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা, ইস্টার্ন জুট মিলে ৪ কোটি টাকা, কার্পেটিং জুট মিলে প্রায় ১০ কোটি টাকা, আলীম জুট মিলে প্রায় ৫ কোটি টাকার পণ্য অবিক্রীত রয়েছে। এ ৫টি পাটকলে প্রায় ৬৪ কোটি টাকার উৎপাদিত পণ্য মজুদ রয়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান (মহাব্যবস্থাপক) মো. বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, সেন্ট্রাল সেলের অর্থ বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ না দেয়ায় তারা শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছেনা। তাছাড়া মিলগুলোর অবিক্রিত পণ্য বিক্রি হলে মজুরি এত বকেয়া থাকত না বলে তিনি জানান। তিনি এ মিলে গত প্রায় দুই মাস হল যোগদান করেছেন। মিলের উৎপাদন বর্তমান ৪৪ মেট্রিক টন। তাঁতী সঙ্কট ও মেশিনারিজ সমস্যার কারণে উৎপাদন টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এদিকে বর্তমান মজুরি বকেয়া থাকায় শ্রমিক পরিবারগুলোতে চরম অভাব অনটন চলছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে শ্রমিকরা।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন জানান, আগামী শনিবার সকল পাটকলের সিবিএর নেতৃবৃন্দকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান ডেকেছেন। সেখানে চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন সকল সিবিএ নেতৃবৃন্দ। ক্রিসেন্ট জুট মিলে জনবল কম থাকার কারণে উৎপাদন কম হচ্ছে। আর্থিক সংকটের কারণে বেতন-মজুরি দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। খালিশপুরের শ্রমিক আব্দুল আলিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলস শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন জানান, ৯০ টন পণ্য উৎপাদন না হওয়ায় আর্থিক সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নিয়মিত বেতন দিতে পারছে না। ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম হাজারী জানান, জুট মিলের আর্থিক সংকটের কারণে চার সপ্তাহের বেতন বকেয়া রয়েছে। তবে তিনি কোনো কারণ বলতে রাজি হননি।