বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কাবার পথে

মোঃ আবদুল ওয়াহেদ : আমি একজন সাধারণ সংবাদপত্রকর্মী। এ বছর আমি ২৬ সেপ্টেম্বর হজ্ব থেকে ফিরে এসেছি। হজ্ব কি এবং কেন- হজ্ব হলো আল্লাহ্পাকের বিধান এবং ফরজ। ইসলামের ৫টি বিধানের মধ্যে হজ্ব হলো একটি বিধান। তবে যার সামর্থ্য আছে তার জন্য ফরজ। যার সারা বছরের সাংসারিক খরচ বাদে পবিত্র কাবা ঘরে যাতায়াত করার মত খরচ করার সামথ্য আছে তারই জন্যই ফরজ। আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা ৭০% লোকেই সামর্থ্য আছে। সেই ৭০% ভাগ লোকের মধ্যে আমি একজন পড়তে পারি। আমি একজন সংবাদপত্র কর্মী হিসেবে একটি যেকোন একটি দৈনিক বিজ্ঞাপন বিভাগে কাজ করি। তবে মাসিক বেতনে নয়, কমিশনে। আমি গত বছর ডিসেম্বরে ৩ লাখ টাকার বিজ্ঞাপনে ৯০ হাজার কমিশন পেয়েছি। পাওয়ার পর আমার মনে আশা উদিত হলো দীর্ঘদিনের বাসনা পূরণ করার। আমি যখন যৌবন বয়সে উপনীত হয়েছি তখন থেকেই ইসলাম ধর্মের প্রতি দুর্বল। নেই বয়স থেকে ইসলামী সভা সমাবেশ যাওয়ার সৌভাগ্য রয়েছে। সেই থেকে কা’বা ঘর দেখার এবং হুজুরে পাক (সাঃ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার। তবে হজ্বের মাধ্যমে নয়। ওমরা হজ্বের মাধ্যমে। আমি যে মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করি সেই মসজিদে ৩ জন সাথী যারা গত বছর হজ্ব পালন করছেন। তাদের কাছে পরামর্শ চেয়ে মতামত নিলাম। তবে তিনজনের পরামর্শ যাই হোক, একজনের পরামর্শ গ্রহণযোগ্য ভেবে মেনে নিলাম। তিনজনের মধ্যে একজনের পরামর্শ হলো ওমরা না করে হজ্বের নিয়ত করার জন্য। তিনি বললেন আপার কাজ নিয়ত করা। টাকা দিবেন আল্লাহ্। যিনি হজ্বে নিবেন তার কাছে টাকার অভাব নেই। আমি মসজিদ থেকে বাসায় এসে আমার একমাত্র সন্তান (মেয়ে) এবং বিবি’র সঙ্গে পরামর্শ করলাম। মেয়ে হজ্বের যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। ছয় মাস তো এখনও বাকি আছে। সামনে ছয় মাসে তোমার ইনকাম দিয়ে যা হয় তা দিয়ে বাকি যা লাগে, আমি দিবো। মেয়ের কাছে আশ্বাস পেয়ে প্রথমে আহছানউল্লাহ মিশনে ৩ দিন করে ৯ দিন প্রশিক্ষণ নিলাম।
মনের বিশ্বাসের জোরে এবার আমার হজ্বের টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধনের পালা। ঢাকাস্থ আহছানিয়া হজ্ব আহসানুল করিম সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি। প্রাক নিবন্ধনের ৩৫ হাজার টাকা জমা দেই। আহছানিয়া হজ্ব মিশনের দু’টি প্যাকেজ। এ প্যাকেজের সাড়ে ৪ লাখ, বি-প্যাকেজে যাওয়ার জন্যই ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। জীবনে কোনদিন পাসপোর্ট অফিসের দরোজায় পা দেইনি। পাসপোর্ট করতে গিয়ে আল্লাহ্র অমেষ মেহেরবাণী সপ্তাহের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়েছি। অবশ্য পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয় যার নাম না বললেই নয়। তিনি হলেন একেএম মাজহারুল ইসলাম। তিনি উপ-পরিচালক প্রশাসন। তিনি আমার পাসপোর্টের  যথাযথ সহযোগিতা করেছেন। এখন নিবন্ধনের পালা। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে তারা মোট হজ্বে নিবেন ১০ হাজার বেসরকারিভাবে ১ লাখ, তাহলে মোট ১ লাখ ১০ হাজার, আমার তালিকা নাম এক লাখ দশ হাজার একশ এক। আমি তো এমনি বাদের খাতায়। আমি যে হজ এজেন্সিতে প্রাক করানোর জন্য টাকা জমা দিয়েছি সেই আহছানিয়া হজ্ব এছেন্সী থেকে একদিন ফোন এসেছে আপনার প্রাক নিবন্ধ হয়ে গেছে বাকি টাকা জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। আমি শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লাম। আমি শুনে তখনই আহছানিয়া হজ্ব অফিসে এসে জানতে পারলাম আমার প্রাক নিবন্ধন হয়ে গেছে। করিম ভাইকে বললাম কিভাবে হলো। করিম ভাই বললেন এ দেশে সবই সম্ভব। আমি আবেদন করলাম আহছানিয়া মিশনের মাধ্যমে হয়ে গেল সরকারি ব্যবস্থাপর, কাকতালীয় ব্যাপার। পরে বাংলা প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে পড়েছি সরকারিভাবে এ বছর হজ্বে নিবে ১০ হাজার হাজী। প্রাক নিবন্ধন সময় ৭২ ঘণ্টা তার মধ্যে মাত্র ৩ ঘণ্টায় নিবন্ধ করছে সাড়ে ৫ হাজার। সাড়ে ৪ হাজার নিবন্ধন না করিয়ে নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়েছে। পরে সাড়ে ৪ হাজার বেসরকারি এজেন্সীর কাছে বাড়তি খরচ নিয়ে সরকারিভাবে ঢুকানো হয়েছে। প্রথমে হজ্ব যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট ছিল ১০ই আগস্ট। পরে বলে দেয়া হল ২০ তারিখের পর। ২০ তারিমের পর ২৪ আগস্ট। ২০শে আগস্ট থেকে আবার তারিখ পরিবর্তন হয়ে ২৭শে আগস্ট রাত ৮.৪৫ মিনিটে। পরে জানতে পারলাম বাংলাদেশ বিমান ১২ ঘণ্টা লেট। পরদিন সকাল ৮.৪৫ মিনিটে। যথারীতি বিমান পৌঁছে গেছে। বিমানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ৩ ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসে থাকার পর বিমান শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বন্দর ছেড়ে যায়। বিকাল ৪টায় আমাদের বিমান  জেদ্দা আন্তর্জাতিক বন্দরে পৌঁছে। গাইড হলো পথ প্রদর্শক। তাবলীগ জামাতে বলে রাহাবর বা পথ দেখিয়ে দেয়া। যারা নিজেই কোনদিন হজ্ব করেনি, তারা কিভাবে হাজীর হজ্ব করাবেন। যারা নতুন হজ্বে গিয়ে ছিলেন তাদের গাইড জরুরি প্রয়োজন এ বছর সরকার হজের গাইড বা পথ প্রদর্শককে দলীয় করণ করছেন। তারা হজ্ব কোনদিন করেননি, হজ্বের নিয়ম কানুন ও তাদের জানা নেই। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব জনাব রুহুল আমিন অভিযোগ করছেন এ বছর হজ্বে ঐ সব গাইড কোন কাজ করেনি। সংশ্লিষ্ট হাজীদের অভিযোগ তাই। আমাদের গাইড জাহাঙ্গীর আনাম মাননীয় সচিব মহোদয় নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি কোনদিন হজ্বই করেননি। কিসের জোরে তিনি গাইড হলেন তা হজ্ব সংশ্লিষ্টদের জানা নেই। জাহাঙ্গীর সাহেব একদিন আমার বাসায় মোবাইল নম্বরে ফোন করলেন ভাই আমি আপনার হজ্বের কাজে নিয়োজিত থাকবো। আমি আপনার গাইড। তাকে বাংলাদেশ বিমানে উঠার একবার দেখা। বিমান থেকে নামার পর একটি সিম পাবেন। কিন্তু বিমান থেকে নামার পর আর দেখা নেই। তিনদিন পর আমাদের আবাসিক হোটেলে তার সঙ্গে দেখা। সিম কার্ডের কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে বলেন, আমি এখনও সিম কার্ড পাইনি, আপনাকে দিবো কিভাবে। তাকে দিয়ে আমার হজ্বের কোন কাজে আসেনি। এ ব্যাপারে আহছানিয়া মিশন দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাদের দেয়া একজন গাইড সংশ্লিষ্ট হাজীদের কোন কাজ করেনি। মিশনের কর্মকর্তাদের কাউকে বার বার ফোন করে পাওয়া যায়নি।
তাদের দেয়া গাইড মৌ: আনছার উল্লাহ তিনি নগর ভবনের ইমাম পরিচয় প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। আর বড় বড় কর্মকর্তাদের খুশি করার কাজেও তার জুড়ি নেই। জেদ্দা বিমানবন্দরে হাজীদের বহন করা গাড়ি (বাস) ১২নং কার্ডধারীদের ৬নং বাড়ি এবং ২২নং কার্ডধারীদের হাজীদের ৭নং বাড়ি বন্দর থেকেই আলাদা করে আনা হয়েছিল। মক্কা গিয়ে আমরা ১২নং কার্ডধারী হাজীগণ সিট খুঁজে না পেয়ে নিদারুন কষ্টের মধ্যে পড়েছি। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সিট খুঁজে না পেয়ে সিখানকার এক ব্যক্তি বললেন, আপনাদের সিট ৮নং বাড়িতে হতে পারে। পরে ৮নং বাড়ির ৬ তলায় গিয়ে আমাদের সিট খুঁজে পাই। পরদিন আমি গ্রুপ ছাড়া একা অন্য গ্রুপের সঙ্গে তওয়াফের কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
৯ই সেপ্টেম্বর ৭ই জিলহজ্ব আমাদের গাড়িযোগে মিনার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। মিনায় একদিন থাকার পর ৮ই জিলহজ্ব রাতে ফজরের নামাজের আগে আরাফায় নেয়া হয়। সারাদিন আরাফায় কাটানোর পর মাগরিব নামাজের আগে আরাফা ত্যাগ করার কথা। আছরের নামাজের পর আরাফার তাঁবু থেকে হাজীদের নিয়ে এলেন-রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গাড়ির অপেক্ষায়। আমাদের গাইড জাহাঙ্গীর আর ফরিদুল হুদা বললেন, বাস এসে গেছে। আপনাদের সন্ধ্যার আগেই মুজদালিফায় পৌঁছতে হবে। ১২০জন হাজী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর আমাদের গাইড জাহাঙ্গীর এসে বললো, আপনারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে না থেকে মুয়াল্লেমের বাড়িতে বসুন। গাড়ি আসলে আমরা ডেকে দিবো। এক জাতীয় সংসদ সদস্যসহ আমরা ১২০ জন হাজী মুয়াল্লেমের বাড়িতে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকি। অতঃপর গাইড ফরিদ এসে বললেন, আপনাদের গাড়ি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা যেতে চান হেঁটে যেতে পারেন। আমাদের সাথে যে জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন তিনিসহ কিছু হাজী একসঙ্গে হাঁটা শুরু করলেন।
আমরা ৫ জন তাদের সাথী হতে পারলাম না। আমাদের সাথে কয়েক জন মহিলা, একজন ঘুমিয়েছিলেন। ঘুম থেকে ডেকে তুলতে তারা আমাদের রেখে চলে গেছেন। আমরা ৫ জন হাজী দলছুট হয়ে মুজদালিফায় রওনা দিলাম। অচেনা পথ, না জানি তাদের ভাষা, না চিনি পথ, রাতের বেলা, রাতে অন্ধকারে পাথরিয়া পথ, বিপদ কাকে বলে এ যেন কিয়ামতের আলামত। রাস্তায় চলতে চলতে একটি বাস পাওয়া গেল। বাসে গিয়ে ঠাসাঠাসি কোনরকম উঠলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর বাসের চালক আমাদেরকে নামিয়ে দিলেন। সে পথে যাবে না। পথ চলতে চলতে কয়েক বাংলাদেশী পাওয়া গেল। তাদেরকে জিজ্ঞেস করে মুজদালিফায় পৌঁছেছি। তখন রাত ১১টা। একজনকে হারালাম আরাফার ময়দানে। আর একজন হারালাম মুজদালিফায় এসে। কুমিল্লার এক মহিলা তার স্বামীকে হারিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ হলো। আমাদের গাইড জাহাঙ্গীরকে বার বার মোবাইলে যোগাযোগ করার পরও আমাদের নেয়ার কোন ব্যবস্থা করেনি। আমরা চারজন বাকি মুজদালিফায় প্রান্তরে কাটিয়ে ভোরে পায়ে হেঁটে মিনায় পৌঁছে মিনা থেকে জাম্মা পাথর নিক্ষেপ করে প্রথম কাজ সেরে আবার মক্কার উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা হই। সেখান থেকে মক্কায় হোটেলে এসে পৌঁছি। এভাবেই হজ্ব প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গাইড ছাড়াই শেষ করেছি। ২টি গাইডের মধ্যে মদিনা গিয়ে একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জাবালে নূর : এই সেই জাবালে নূর, যেখানে নবী করিম (সা.) ও হযরত আবু বকর (রা.) গোহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। নবী করিম (সা.) একদিন হযরত আবু বকর (রা.)কে বলেছিলেন, হিযরত করতে হবে। কিন্তু কোনো দিন তারিখ ঠিক করেনি। তাই হযরত আবু বকর (রা.) নিজ দরোজায় ৬ মাস দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেছেন। হুজুর পাক (সা.) যেদিন হিযরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেন সেদিন হযরত আবু বকরের বাড়িতে গিয়ে দরোজা টোকা দিতেই হযরত আবু বকর (রা.) সামানা নিয়ে বের হয়ে এলেন। নবী করিম (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু বকর তুমি ঘুমাওনি। আবু বকর (রা.) জবাবে বললেন, যেদিন আপনি হিজরত করার কথা বলেছেন, সেদিন থেকে আবু কবর ঘুমাইনি। রাতের অন্ধকারে আবু বকর (রা.)কে নিয়ে হুজুর পাক (সা.) হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেন। পিছনে শত্রু বাহিনী ধাওয়া করছে, ভোরে জাবালে নূর পাহাড়ে আশ্রয় নেন। আবু বকর (রা.) বলে উঠলেন, শত্রু বাহিনীর পা দেখা যাচ্ছে। আমরা দু’জন, এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম। হুজুর পাক (সা.) বললেন, আমরা দুজন নয়, আমরা তিনজন। তার মানে আল্লাহ পাক আমাদের সাথে আছেন। হযরত আবু বকর (রা.) গুহার মুখে পাহারায় ছিলেন। অতঃপর ্কটি সাপ গর্ত থেকে বের হয়ে আসতেই হযরত আবু বকর (রা.) তা পা দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিলেন। সেই সাপ তার পায়ে দংশনও করলো। তারপরও গর্তের মুখ ছাড়লেন না। নবী করিম (সা.) বুঝতে পেরে আবু বকর (রা.)কে বললেন, সাপ কামড় দিয়েছে নাকি? আবু বকর (রা.) বললেন সামান্য। এদিকে আবু বকর (রা.)-এর সারা শরীর নীলবর্ণ হয়ে গেছে। হুজুর পাক (সা.) দংশিত স্থানে নিজের মুখ থেকে থু থু নিয়ে লাগালেন আর এমনি ভাল হয়ে গেল। এদিকে শত্রু বাহিনী এসে দেখে গুহার মুখে পাখি বাসা বানিয়ে ডিম পেরে তা দিচ্ছে। মাকড়সা জাল বুনছে। এখানে তো মানুষ থাকতে পারে না।
হুজুর পাক (সা.) জানালে নূর পাহাড়ে আল্লাহতায়ালার ধ্যানে দিনরাত কান্নাকাটি করছিলেন। তখন মা খাদিজাতুল কুবরা (রা.) তার তালাশে বের হন এবং সেই পাহাড়ের চ’ড়ায় হুজর পাক (সা.)কে সেখানে পেয়ে যান। সেখানে গিয়ে অনেক অনুরোধ, কান্নাকাটির পরও হুজুর (সা.) মাথা উঠাচ্ছেন না। সে পাহাড়ের চূড়া প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচু। খাদিজা (রা.) দিনে দুইবার সেখানে খাবার নিয়ে যেতেন। এই সেই জাবালে নূর যেখানে প্রথম কুরআন পাক নাজিল হয়েছিল। সেই মহিয়সী মহিলা এতটাই ধনী ছিলেন যে, তার ঘরে পাপুষটি ছিল সোনার। হুজুর পাক (সা.)কে বিয়ে করার পর তার সব সম্পদ বিক্রি করে আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন।
জাবালে রহমত : আল্লাহ পাকের অফুরন্ত নিয়ামতে ভরপুর মক্কা-মদিনা। তার মধ্যে অন্যতম জাবালে রহমত। সেই পাথরে বিবি হাওয়া (আ.) সঙ্গে নিয়ে সাড়ে ৩০০ বছর পর মিলিত হয়। আল্লাহ পাকের কাছে তাদের ভুল স্বীকার করে দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আল্লাহ পাক তাদের দোয়া কবুল করেন। সেই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে হুজুর পাক (সা.) সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বিদায় হজ্বের ভাষণ দিয়েছিলেন।
৮ই জিলহজ্ব জোহরের নামাজের আগেই তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। মিনায় গিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করবেন এবং পরদিন ফজরের নামাজ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করবেন। মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। ৯ই জিলহজ্বের দিনে সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় হাজীরা রওনা দিবেন। পৌঁছার পর সেখানে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান প্রত্যেক হাজীর জন্য ফরজ। আরাফায় অবস্থানকালে বেশি বেশি দোয়া মোনাজাত করা সুন্নত। আরাফায় দোয়া কবুলের স্থান। সুর্যাস্তের আগেই আরাফার ময়দান থেকে মুজদালিফার দিকে রওনা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। এক্ষেত্রে প্রথমে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করতে হবে। জামবার পাথর নিক্ষেপের পাথর এখান থেকেই নতে হবে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী মুজদালিফা দোয়া কবুলের স্থান। তাই এখানে অবস্থানকালে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং ফজরের নামাজ পর্যন্ত এখানে অবস্থান করতে হবে।
যিয়ারতে মদিনা : অসংখ্য গুনে গুনান্বিত এই পবিত্র মদিনা মুনাওয়ারা। মদিনার রয়েছে গুণবাচক অসংখ্য নাম। ওয়াফছিল ওয়াফা কিতাবে মদিনার ৯৪ নাম উল্লেখ আছে। তার মধ্যে আমি কয়েকটি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করছি।
রিয়াদুল জান্নাত : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি হলো জান্নাতের বাগানের একটি অংশ। আর মিম্বরটি হলো আমার হাউজের উপর অবস্থিত। জান্নাতুল বাকি মসজিদে নববীর বাবে জিব্রিলের মোজা প্রায় ২০০ মিটার পূর্বে অবস্থিত। প্রায় দশ হাজারের অধিক সাহাবায়ে কিরাম এবং লক্ষ লক্ষ আল্লাহ মকবুল বান্দাহ শায়িত আছেন মদিনার এই পবিত্র কবরস্থানে। মসজিদে কুবা এটি মুসলমানদের প্রথম মসজিদ। রাসূল (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন তখন মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কুবা পল্লীতে প্রথম ১৪ দিন অবস্থান করেন। তখন তিনি নিজ হাতে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, মসজিদে কুবায় দু’রাকায়াত নামাজ আদায় করলে এক ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়। কিবলাতাইন- দুই কিবলার মসজিদ। মুসলমানদের আগে কিবলা ছিল জেরুসালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস। কিন্তু রাসূল (সা.) মনে মনে চাইতেন যদি মক্কার কাবা কিবলা হতো তাহলে কতই ভাল হতো। একদিন আছরের নামাজ ২ রাকায়াত পড়ার পর জিবআইল (আ.) ওহি নিয়ে আসেন এবং কিবলা পরিবর্তনের খবর দেন। তৎক্ষণাৎ রাসূল (সা.) ওই অবস্থায় কিবলা পরিবর্তন করে মক্কার কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বাকি ২ রাকাত নামাজ শেস করেন। ওহুদের জিয়ারত গাহ ওহুদের ময়দানে ওহুদ যুদ্ধে শহীদদের কবর রয়েছে এবং বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আমির হামজা (রা.) এর কবরও এখানে রয়েছে। তিনি শহীদের সরদার। এই ওহুদের যুদ্ধেই হযরত রাসূল (সা.)-এর দাঁত মোকারক শহীদ করে ফেলেছিল কাফিররা নির্মমভাবে। এই যুদ্ধে মোট ৭০ জন সাহাবা শহীদ হন। ৬২ জন শহীদকে এখানেই হযরত হামজা (রা.)-এর পাশে এবং বাকি ৮ জনকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। ওহুদ পাহাড় সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন ওহুদ আমাদের সাথে মুহাব্বত রাখে এবং আমরাও ওহুদের সাথে মুহাব্বত রাখি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ