বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আলমডাঙ্গায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনে ক্ষতির শঙ্কায় রেললাইন ও পাকা সড়ক

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নে পুকুর থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে ওই গ্রামসহ পাশের আরো তিনটি গ্রাম, কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি পাকা সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। একই ভাবে পার্শ্ববর্তী সরিষাডাঙ্গা জিকে ক্যানালের পাশের জমি, জেহালা ইউনিয়নের পুটিমারি, মুন্সীগঞ্জের পশুহাট সংলগ্ন রেললাইনের পাশের জমি, ও খাসকররা ইউনিয়নের চিলাভালকি গ্রামের মাঠ এবং বাড়াদী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের ৫০ গজের মধ্যে দু’টি পুকুর থেকে প্রায় ৩ মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বালু উত্তোলনকারীরা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় এলাকার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না। জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের সরিষাডাঙ্গা গ্রামের লিমন সরিষাডাঙ্গা ও বলিয়ারপুর মাঠের পুকুর থেকে, জেহালা ইউনিয়নের টেংরামারী গ্রামের রাজ্জাক মুন্সীগঞ্জের পশুহাট সংলগ্ন রেললাইনের পাশের জমি ও সরিষাডাঙ্গা জিকে ক্যানালের পাশের পুকুর থেকে, হারদী ইউনিয়নের হারদী গ্রামের টিপু পার্শ্ববর্তী বাড়াদী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের ৫০ গজের মধ্যে দু’টি পুকুর থেকে এবং খাসকররা ইউনিয়নের চিলাভালকি গ্রামের সিরাজ সেখানকার পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন ভিড়িয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে একদিকে যেমন সেখানকার পাশের জমি, রেললাইন, জিকে ক্যানাল, সড়কের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছে এলাকার সচেতন মহল। ঘটনাস্থল নাগদাহ ইউনিয়নের বলিয়ারপুর গ্রামে গিয়ে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে মামুন (৩০) নামের এক যুবক বাধা দেয়। উক্ত যুবক বালু উত্তোলন ও বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত।  গ্রামের পাশ দিয়ে চলে গেছে ১৮ ফুট বিস্তৃত ঘোলদাড়ি ও মুন্সিগঞ্জ সড়ক। সড়ক থেকে ৫০ গজ দূরে ওই পুকুর থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। ওই পুকুর ঘিরে চারটি গ্রাম রয়েছে। পাশে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। এলাকার রাহাত আলী বলেন, তিন মাস ধরে পুকুরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করছে লিমন। এতে করে ইউনিয়নের মোমিনপুর, সরিষাডাঙ্গা, বলসাপুর, কাতলী, সোনাতনপুরসহ কমিউনিটি ক্লিনিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের আবাদি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এক ট্রলি বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৬/৭শ’ টাকায়। এতে প্রতিদিন গড়ে শুধু এখান থেকেই ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বালু বিক্রি করা হচ্ছে। পুকুরের পাশের জমির মালিক হযরত আলী ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বালু উত্তোলন করায় আমাদের জমি হুমকির মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধের কথা বললে তারা উল্টো আমাদেরকে হুমকি দেয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত লিমন জানায়, তিনি বালু ব্যবসা করেন না। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি নিজে ফোন করে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, টেংরামারীর রাজ্জাক মুন্সীগঞ্জের পশুহাট সংলগ্ন রেললাইনের পাশের জমি ও সরিষাডাঙ্গা জিকে ক্যানালের পাশের পুকুর থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে এগুলো আপনারা দেখেন না?  হারদীর টিপু’র কাছে তার বিরুদ্ধে বালু তুলে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গার ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার প্রজেক্ট এটা, আমি শুধু তার ম্যানেজার মাত্র। এছাড়া ডিসি সাহেবের কালেক্টরেট স্কুলে এই বালু বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও টিপু আরো জানান। চুয়াডাঙ্গার ডিসি সায়মা ইউনুসের কাছে বিনামূল্যে বালু নেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, কালেক্টরেট স্কুলের জন্য বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বালু কিনে নেয়া হয়েছে, এমনিতো নেয়া হয়নি। তাছাড়া এখনতো আর নেয়া হচ্ছে না বলেও তিনি জানান।  এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ জাহান বলেন, আমি খোঁজ নিচ্ছি, অবশ্যই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ