শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাত রোগের চিকিৎসা

ব্যায়াম বিশ্রাম, তাপ, ঠাণ্ডা এবং অন্যান্য শারীরিক থেরাপির সাথে ওষুধ হলো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি প্রধান অবলম্বন। ওষুধ ব্যথা ও প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

বাতরোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন জাতের ওষুধ রয়েছে। চিকিৎসকের সাধারণভাবে এসব ওষুধকে প্রথম সারি ও দ্বিতীয় সারির ওষুধ নামে ভাগ করেছেন। 

প্রথম সারির ওষুধগুলো সাধারণত প্রথমেই চেষ্টা করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন এবং কিছু প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। এ ওষুধগুলো অস্টিও-আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। প্রথম সারির ওষুধগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর সাথে স্টেরয়েড ওষুধ যেমন- প্রেডনিসলোন ও কর্টিসোন ব্যবহার করা হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে স্টেরয়েডকে সত্যিকার অর্থে প্রথম পছন্দনীয় ওষুধ হিসেবে ধরা হয়না। অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ওষুধ তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। কারণ এ ক্ষেত্রে স্টেরয়েড কোনো সাহায্য করে না এবং স্টেরয়েডের অনেক মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। 

যেহেতু অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় তারা কার্যকর নয়, তাই দ্বিতীয় সারির ওষুধগুলো শুধু রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় সারির ওষুধগুলোকে কখনো কখনো ডিজিজ মডিফাইং বা ডিজিজ রেমিটিভ ড্রাগস বলা হয়। কারণ এসব ওষুধ অনেক লোকের উপসর্গ কমিয়ে দেয়। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে- গোল্ডসল্ট, ইনজেকশন বা ট্যাবলেট আকারে; হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন, এটি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায়ও ব্যবহূত হয়; পেনিসিলামাইন, এটিকে প্রসি- অ্যান্টিবায়োটিকের জ্ঞাতি ভাই বলা হয় এবং মিথোট্রিক্সেট ও অন্যান্য ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 

চিকিৎসক কোন ওষুধ ব্যবহার করবেন সেটা বুঝবেন কীভাবে : এটা নির্ভর করে ওই চিকিৎসকের দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা, কিছুটা গবেষণা, কিছুটা জরিপ এবং কিছুটা ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতার ওপর। একজন রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় কাজ করে। 

এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: রোগীর বয়স, রোগীর কাজকর্মের পরিধি, অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না, রোগী নতুন ওষুধ গ্রহণের কিছু ঝুঁকি নেবেন কি না অথবা পুরান ওষুধের সাথে চালাতে চান কি না, ওষুধ দেয়ার পরপরই কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে, রোগের উন্নতি কেমন হচ্ছে, রোগীকে কী ধরনের পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা করা হচ্ছে ইত্যাদি। চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার আগে এসব বিষয় বিবেচনা করবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি রোনো রোগীর বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের খারাপ ধরন থাকে, তাহলে চিকিৎসক তাকে প্রথম দেখেই সরাসরি দ্বিতীয় সারির ওষুধ দিতে পারেন। আরেকটা বিষয় চিকিৎসক ও রোগীর মনে একই সাথে উদয় হতে পারে যে, বেশির ভাগ আর্থ্রাইটিসের লোকের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে যেকোনো আর্থ্রাইটিসের ওষুধ ভালোকাজ করে। কিন্তু কয়েক বছর পর ওষুধের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। এক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন করে অন্য ওষুধ কিংবা সমন্বিত ওষুধ দেয়া হয়। 

প্রথম সারির ওষুধ নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ বলতে কী বোঝায়?

নামেই বোঝা যাচ্ছে, এনএসএআইডি হলো সেইসব ওষুধ যা প্রদাহের যেমন- ব্যথা, ফোলা, তাপ ও লাল হওয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। এরা শরীরে উৎপন্ন কিছু জৈবরাসায়নিক উপাদানকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে এ কাজটি করে। 

এ জৈবরাসায়নিক উপাদানের নাম প্রোস্টগ্লানডিন, যা প্রদাহ ঘটায়। যা হোক, নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ বা এনএসএআইডি স্টেরয়েড ওষুধ থেকে স্বতন্ত্র। স্টেরয়েড ওষুধও ব্যথা এবং প্রদাহ কমায়, তবে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে এবং এর রয়েছে অনেক ভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। 

এনএসএআইডি’র মধ্যে কম ভিন্ন গ্রুপের ওষুধ রয়েছে: অ্যাসপিরিন (অ্যাসিটাইল স্যালিসাইলিক অ্যাসিড) ও সম্পৃক্ত উপাদান, যেমন- সোডিয়াম স্যালিসাইলেট, আইবুপ্রফেন এবং এক ডজনের বেশি অন্য রাসায়নিক উপাদান। যদি আপনার চিকিৎসক আপনাকে একটি এনএসএআইডি ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দেন এবং সেটা কাজ না করে, তাহলে তিনি আপনাকে ভিন্ন রাসায়নিক গ্রুপের ওষুধ দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। 

  • ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল, সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার: পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি:, ২ ইংলিশ রোড, ঢাকা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ