শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে -এফবিসিসিআই

গতকাল মঙ্গলবার নিজস্ব সভাকক্ষে এফবিসিসিআই আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: নন-পারফর্মিং (অনুৎপাদনশীল খাত)  লোন না কমালে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে করেন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ। এসময় তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতের জন্য বিনিয়োগবান্ধব হলেও এতে কিছু ‘গ্যাপ’ রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন।
 তিনি বলেন, নন-পারফর্মিং লোন, অর্থপাচার রোধ ও অপ্রদর্শিত অর্থ, বিনিয়োগবান্ধব সুদের হার, বেসরকারি খাতের ঋণের যোগান, বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে মুদ্রানীতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে নন-পারফর্মিং লোন ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এটি বন্ধ না হলে বিনিয়োগ গতি সঞ্চার করা সম্ভব হবে না। মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত ছিল। যারা বাজে লোন দিচ্ছে আর নিচ্ছে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে।
মাতলুব আহমেদ বলেন, দেশে অর্থপাচার রোধ ও অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সম্প্রতি অর্থপাচার প্রতিরোধে ভারতে ১০০০ রুপি ও ৫০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থপাচার রোধ করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। অপ্রদর্শিত অর্থ যাতে বিদেশে যেতে  না পারে- সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীরা এখনও উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছেন। এটি কমাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই খাতের অবদান অনেক বেশি। ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে পূর্বের ধারাবাহিকতায় মাত্রাতিরিক্ত স্ফীতি এড়িয়ে চলার কৌশল নেয়া হয়েছে এবং বেসরকারি খাতের ঋণের যোগান ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। যা বৃদ্ধি করে অন্তত ১৭ শতাংশ করা হলে আরো বিনিয়োগসহায়ক হতো বলে আমরা মনে করছি এবং বাংলাদেশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে উন্নীত করতে ডাবল ডিজিট জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৪০ শতাংশের ওপর জিডিপির বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশী পাটপণ্যের ওপর ভারতের আরোপিত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ভারতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ পাটজাত দ্রব্য। কিন্তু ভারত এরই মধ্যে এই পণ্যে প্রতি টনে ১৯ মার্কিন ডলার থেকে ৩৫১ ডলার পর্যন্ত এন্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পাটজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। এতে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে।
 দেশের ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বিলেন, ২০১৬ সালের ৩০ জুনে নন-পারফর্মিং খাতে ৬৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ ছিল। বর্তমানে এর পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হতাশাজনক পরিস্থিতি সমাধান করা জরুরি। অন্যথায় বিনিয়োগে গতি সঞ্চার করা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচাররোধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাতলুব আহমাদ জানান, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের আন্তরিকতায় ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। তবে টেকসই বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের স্বার্থে ব্যবসা আরম্ভ, স্থাপনা নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎপ্রাপ্তি, সহজ শর্তে ঋণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশি নজর দেয়া জরুরি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ