মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

স্মরণ : জননেতা শামছুল হক

জননেতা শামছুল হক

ডা. মো. সাইফুল ইসলাম : বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা স্বাধীনতা সংগ্রামী জননেতা শামছুল হক ছিলেন অবিভক্ত ভারতের ফুল টাইম পলিটিশিয়ান, প্রগতিশীল রাজনীতির দিকপাল, মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার, উপমহাদেশের এক যুগ স্রষ্টা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বাঙালির উজ্জ্বল ইতিহাসের এক কঠিন অধ্যায়ের কালজয়ী জননায়ক। বিপ্লবী শামসুল হকের জন্ম মহান ভাষা আন্দোলনের মাস অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮ সালে, এলাসিন মাতুলালয়ে, নিজ গ্রাম মাইঠান-টেউরিয়া। বিত্তশালী নানা মৌলভী নছর উদ্দিন সরকার, মামা নওজেশ আলী সরকার, মাতা মোছা. শরিফুন্নেছা আট ভাইয়ের একমাত্র বোন। পিতা- দবির উদ্দিন সরকার শিশু জন্মের পর আকিকা করলেন এবং বঙ্গরত্ন শিশুটির নাম রাখলেন মো. শামছুল হক।
শামছুল হকের পূর্ব পুরুষ মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১৪৮৩ সালে হজরত বাবা আদম ফকিরের সাথে বিক্রমপুরে আগমন করেন। অবশেষে হানিফ সরকার অর্থাৎ শামছুল হকের দাদামহ টাঙ্গাইল আগমন করেন ১৮১৮ সালে।
শামসুল হকরে শৈশব শেষে যৌবনে যখন পাকিস্তান হাসিলের আন্দোলন তখন ঢাকার নেতারা এলাসিনে নেমে নৌকায় অথবা টমটম গাড়িতে হক সাহেবের মাইঠানের বাড়িতে, তারপর মওলানা ভাসানীর সন্তোষ, তারপর টাঙ্গাইল আসতেন (১৯৪১, ১৯৪৪, ১৯৪৬, ১৯৪৯)। বিভিন্ন সময় শেখ মুজিব, আতোয়ার রহমান, আবুল হাশিম সাহেব, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব, খন্দকার মোশতাক, জিল্লুর রহমান ও কফিল উদ্দিন হক সাহেবের বাড়িতে এসেছেন। সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুল পড়–য়া শামছুল হকের দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পা-িত্য দেখে বরৈাম আলী তটস্থ থাকতেন। প্রধান শিক্ষক বৈরাম আলী তাঁর পড়াশুনা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা দেখে তাকে নিজ বাড়িতে লজিং করে নেন। সাংগঠনিক ক্ষমতা আর বক্তৃতার জন্য শামছুল হক স্কুল জীবনেই ব্যাপক জনপ্রিয় ও পরিচিত বাগ্মি পুরুষ হয়ে উঠেন। ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পাসের পর তিনি সা’দত কলেজ, করটিয়ায় ভর্তি হলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর সুদৃষ্টি লাভ করেন।
তিনি ছাত্র সংসদ গঠন করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা ভিপি পদ লাভ করেন। ১৯৪১ সালে শেখ মুজিব, সামছুল হকের এলাকায় সাংগঠনিক সফরে গেলে সামছুল হক নিজ শিক্ষক বৈরাম আলী মাস্টারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। জনাব শেখ মুজিব প্রিয় নেতা সামছুল হকের শিক্ষককে সালাম করেন এবং আবেগ মেশানো কণ্ঠে বলেন, ‘আপনি আমার গুরুর গুরু, আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা দু’জন দেশের জন্য একত্রে কাজ করতে পারি’। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানে বাঙালির নিজস্ব আত্মপ্রকাশের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ গঠনে, মহান ভাষা আন্দোলনে (১৯৪৮) উভয়েই একযোগে কাজ করেছেন। ১৯৪০-১৯৫২ পর্যন্ত এই দুই নেতা ছিল যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
১৯৪৭-৫২ সালে অনেকেই সামছুল হককে পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ চিফ মিনিস্টার বলে কল্পনা করতেন। কেননা সামছুল হককে তখন বলা হতো বেবী জিন্নাহ (ছোট জিন্নাহ)। মি. জিন্নাহ তাকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ অর্গানাইজার পদে ভূষিত করেছিলেন। ১৯৪৯ সালে টাঙ্গাইল উপ-নির্বাচনে জয় লাভের পর তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতায় পরিণত হন। সেই নিরিখে তিনি তদানীন্তন প্রাদেশিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমীনের বিষ দৃষ্টিতে পড়েন এমনকি নিজ দলের একাধিক শীর্ষনেতা কেটালিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
১৯৩৬ সালে সামছুল হক কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাথে জড়িত হন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকেন। ১৯৪০ সালে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ঝঃধঃবং এর পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ১৯৪৩ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ কর্মী শিবির স্থাপিত হলে তিনি তার দফতর সম্পাদক নির্বাচিত হন। যখন তিনি সবেমাত্র ইতিহাসে অনার্স পাস করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী তিনি তখন একটি রাজনৈতিক গ্রন্থ রচনা করেন ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম,’। ১৯৪৬ সালে দিল্লি কনভেশনে যোগদান শেষে আশাহত হন যখন ঝঃধঃবং বিতর্কে ঝঃধঃব হয়ে যায়।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে (২৩৬ পৃষ্ঠা) বলেছেন, ‘পাকিস্তান আন্দোলনে হক সাহেবের অবদান যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। বাংলাদেশের যে কয়েকজন কর্মী সর্বস্ব দিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন তাদের মধ্যে সামছুল হক সাহেবকে সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মী বললে বোধহয় অন্যায় হবে না। ১৯৪৩ সাল থেকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠানকে জমিদার, নবাবদের দালানের কোঠা থেকে বের করে জনগণের পর্ণকুঠিরে যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে হক সাহেব ছিলেন অন্যতম। অথচ স্বাধীনতার ৭ দিনের মাথায়ই তিনি মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেন। একেই বলে মন্দ কপাল’।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও কারাবরণ। ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল ঐতিহাসিক টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনের জয়ের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে বাংলার মধ্যমণিতে পরিণত হন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, তার অনুরোধে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী হন সভাপতি এবং জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছেড়ে দেবার পরিবর্তে শেখ মুজিবুরের যুগ্ম সম্পাদক হবার প্রস্তাবনা ছিল হক সাহেবের। অর্থাৎ নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি এ দলটি করেছিলেন।
১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে কারাগারে হক সাহেবকে ত্রিমুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়। চক্রান্তের মাধ্যমে স্ত্রী অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুন ও নেতার মধ্যে পরিকল্পিতভাবে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করা হয়। মুক্তি লাভের পূর্বেই তার স্ত্রী দুই কন্যাসহ পিএইচডি করার জন্য সরকারের বৃত্তি নিয়ে আমেরিকা পাড়ি জমান। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী ও তার চোখের মণি কন্যাদ্বয়কে দেখতে না পাওয়ায় তার মানসিক রোগ দেখা দেয়।
এই অজুহাতে তাকে তড়িঘড়ি করে লীগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন প্রতিক্রিয়ার দেশে মুসলিম লীগ বিরোধী যে গভীর ক্ষোভ ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে, তাকে পুঁজি করেই ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট পূর্ববঙ্গের মাটি থেকে মুসলিম লীগকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়। শামছুল হকের নিজ হাতে গড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের কেন্দ্র ও পূর্ববঙ্গ উভয় স্থানে (যুক্তফ্রন্ট) সরকার গঠিত হয়। অথচ আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সেই আনন্দঘন দিনেও শামছুল হকের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়নি। দীর্ঘ ১২ বছর অর্থাৎ ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত শামসুল হক অনাদরে, অনাহারে, নিজ দলের অত্যাচার, মুসলিম লীগের তিরষ্কার, সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র, প্রিয়তমা স্ত্রী আফিয়ার দুই কন্যাসহ বিদেশ পলায়ন এবং নিজ বংশধরদের সহযোগিতা না পেয়ে অভিমানে তিনি ১৯৬৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন।
নিজ দলের শীর্ষ নেতারা কখনও হক সাহেবের নিরুদ্দেশের ব্যাপারে এতটুকুও উৎকণ্ঠা প্রকাশ বা খোঁজ খবর নেননি। উপরন্তু তার ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে তাঁকে আল্লাহর ওলী বানিয়ে নিরুদ্দেশের খবরটি আড়াল করে দিল। হক সাহেবের বংশধররা তাও মেনে নিল সুদীর্ঘ ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ সালে অর্থাৎ নিখোঁজ হওয়ার ৪২ বছর পর তাঁর মৃত্যুর খবর ও তাঁর কবরের সন্ধান মেলে যমুনার তীরঘেঁষা কদিমহামজানী কবরস্থানে। পরিবারের পক্ষে ডা. স্বপন সাংবাদিক মহব্বত হোসেন ও সাংবাদিক মাছুম ফেরদৌস’র বৎসরব্যাপী অনুসন্ধান ডা. আনছার আলীর সহায়তায় বেরিয়ে আসে অমোঘ লুকায়িত সত্যটি। তাই দুঃখের সাথে বলতে হয় বাংলাদেশে সবই সম্ভব। কি নির্মম এ দেশের ল্যাং মারা রাজনীতি। কালের পরিহাস শীর্ষ নেতাদেরও শেষ পরিণতি কি নির্মম। শামছুল হকের মৃত্যু হয় ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ খ্রি. রোজ শনিবার কংগ্রেস নেতা মরহুম মৌ. মহির উদ্দীন আনছারীর বাড়িতে। জোগারচর, কালিহাতি, টাঙ্গাইল।
শামছুল হকের অসুস্থতাও চিকিৎসা বঞ্চিত অবস্থা চিন্তা করতে করতে তার পিতা দবির উদ্দিন ১৯৫৯ সালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং হক সাহেবের নিরুদ্দেশের পর মাতা শরিফুন্নেসা ছেলের ফিরে আসার দিনক্ষণ গুনতে গুনতে ১৯৬৮ সালে মারা যান।
১৯৪৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ইডেন কলেজের ইংরেজি অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। দুই কন্যা ড. শাহীনের জন্ম হয় ১৯৫১ সালের ৯ এপ্রিল এবং ড. শায়কার জন্ম হয় ভাষা আন্দোলনে শামছুল হকের জেলবন্দী অবস্থায় অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। বর্তমানে দুই মেয়েই আমেরিকার নাগরিক। ড. শায়কা NASA-য় ASIROPHYSSICUIST এবং ড. শাহীন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে আমেরিকায় কর্মরত।
১৯৭৪ সালের পর ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শামছুল হকের বিশেষ ভূমিকা পরিলক্ষিত। এগুলো হলো :
১. নবাবদের দালান কোঠার বাইরে সর্ব সাধারণের মধ্যে রাজনীতি ছড়িয়ে দেয়া।
২. উপনির্বাচনে (১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল) জয়ী হবার পর মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে হকের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী লীগ গঠন।
৩. সফল বাংলা ভাষা আন্দোলন। (১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি)
৪. পাকিস্তানের প্রাথমিক অবস্থায় জিন্নাহ পরবর্তী মুসলিম লীগের কায়েমী স্বার্থবাদী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীর শাসনতান্ত্রিক সঙ্কটের সমাধান রূপে ‘মূল দাবি প্রণয়ন’।
বাঙালি ইতিহাসে এই চারটি বিষয় বড় ধরনের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা হিসেবে বিরাজ করছে। এসব ইতিহাস লিখতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে শামছুল হকের নাম অর্থাৎ অকাল প্রয়াত এই মহান জননেতা আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত নাজুক, গুরুত্বপূর্ণ ও সঙ্কটাকীর্ণ অংশের ভারবাহী মহান পুরুষ। যুগপৎ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, প্রগতিবাদী রাজনৈতিক আন্দোলন, গণতান্ত্রিক, শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনে এক দশকেরও বেশি সময় বড়ো ঈগলের মতো ক্ষিপ্র গতিশীল ছিলেন শামছুল হক।
পরিশেষে বলতে হয় হক সাহেব রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের উভয় পর্বের ১৯৪৮ ও ১৯৫২’র ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র। পাকিস্তানের সূচনায় ব্রিটিশ বিরোধী, পরে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, আওয়ামী (মুসলিম) লীগের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস তাঁকে বিস্মৃত হতে দেবে না, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে বাঙালি থাকবে।
এখন দরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় ২১ পদক প্রদান পূর্বক একজন শামছুল হকের উত্থান ও সঠিক মৃত্যু রহস্যের উদঘাটন ইতিহাস রচনা করা। এ কাজটি করবে সমাজের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব তথা সংগঠন যারা শামছুল হকের সুস্থ ধারার আদর্শ ও ত্যাগের গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেবে তখন দেশ হবে সন্ত্রাসমুক্ত, শোষণমুক্ত, আপামর জনগণ থাকবে সুখ শান্তিতে জাতি পাবে সঠিক নেতৃত্ব।
লেখক : শল্য চিকিৎসক ও সমাজ চিন্তক, প্রতিষ্ঠাতা  চেয়ারম্যান শামছুল হক ফাউন্ডেশন

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ