ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল নিউইয়র্ক
সংগ্রাম ডেস্ক : ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা আংশিক স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে এই খবর জানানো হয়েছে। সিএনএন-এর ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, অথবা ভ্রমণ অবস্থায় আছেন; এমন নাগরিকদের বেলায় ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতি প্রয়োজ্য হবে না। বৈধ কাগজপত্রের অধিকারী যারা, তাদের ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হবে না বলে জানিয়েছে আদালত।
শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি শরণার্থী কর্মসূচি চার মাসের জন্য স্থগিত করেন তিনি। তবে সব শরণার্থীর বেলায়, কর্মসূচি স্থগিতের মেয়াদ নির্দিষ্ট ৪ মাস হলেও সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের। প্রশাসনের শরণার্থী সীমিতকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন নবনির্বাচিত এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়। সিএনএন/ গার্ডিয়ান।
নিষেধাজ্ঞার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় তা বাস্তবায়নের ‘অ্যাকশন’। নির্বাহী আদেশের প্রথম দিনেই বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে শুরু করেন মুসলমানরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় মুসলিম যাত্রীদের। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি মসজিদে হামলা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও মুসলমানদের এমনকি রীতিমতো হেনস্থা করা হচ্ছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জারি করা নতুন নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিমানবন্দর এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যালয়ের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাম্প যখন এই নির্বাহী আদেশে সই করেন, তখন যাত্রা শুরু করে আদেশ স্বাক্ষর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন; এমন নাগরিকদেরও আটকে দেওয়া হয়েছে। আবার বৈধ বিমান টিকিট ও ভিসা নিয়েও বিমানে উঠতে পারেননি কেউ কেউ। আশঙ্কা করা হচ্ছে ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির সঙ্গে তারা এখনও ভালোভাবে পরিচিত হতে না পারার কারণে এমন ঘটছে।
এই অবস্থায়, শনিবার রাতে মার্কিন ফেডারেল আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এদিন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় আংশিক স্থগিতাদেশ জারি করেন ফেডারেল বিপারপতি। ফেডারেল আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়, যারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন, অথধবা যারা এই মুহূর্তে ভ্রমণপথে রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি প্রযোজ্য হবে না। ফেডারেল আদালতের সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়েছে, যারা বৈধ ভিসার অধিকারী, তাদেরকে অবশ্যই প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
শরণার্থী কর্মসূচি স্থগিত ও মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গিয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা ব্যক্তিরা ট্রাম্পের আদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ট্রাম্প আইনি চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছেন। দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর) নামের এক বিখ্যাত আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, নয়া প্রেসিডেন্টের এই আদেশ সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদেশটিকে একটি ফেডারেল মামলা দায়েরের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্পের এ আদেশের মূল উদ্দেশ্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।
আগামী চার মাস যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি মুসলিম প্রধান ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য তিন মাসের কড়াকড়ি আরোপ করা হয় ওই আদেশে।
ট্রাম্পকে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক যুক্ত বিবৃতিতে।
আদালতের স্থগিতাদেশ পাওয়ার পর আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের এক টুইটে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্েয ট্রাম্পের প্রথম হার হল আদালতে।
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে রীতিমত শোরগেল বাধিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। এই এক সপ্তাহে তিনি বহু আলোচিত ওবামাকেয়ার বাতিল করেছেন, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন; মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং শরণার্থীদের আটকাতে জারি করেছেন কড়াকড়ি।
শনিবার সকালে ওভাল অফিসে বসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যেসব পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন, তা অনেকদিন ধরেই বকেয়া ছিল। আর অভিবাসন নিয়ে তার আদেশ ‘চমৎকারভাবে’ কাজ করছে। বিমানবন্দরসহ সবখানেই তা কার্যকর হচ্ছে।
আদালতের স্থগিতাদেশ আসার পর হোয়াইট হাউজের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এখনও আদালতের আদেশ হাতে পাননি। তবে যে কোনো আদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করবে।
ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল নিউ ইয়র্ক : মুসলিম শরণার্থী ও অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সাময়িক নিষিদ্ধ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে উত্তাল হয়ে উঠেছে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহর। শনিবার নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দরে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরের ৪ নাম্বার টার্মিনাল থেকে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে ১১ জন শরণার্থীকে আটক করার পরই এ বিক্ষোভ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ট্রাম্প যখন নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন তার আগেই ওই শরণার্থীরা ট্রানজিটে ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া কাউকে কাউকে বিমানে উঠতে বাধা দেওয়া এবং বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড সিভিল রাইটস গ্রুপের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আটলান্টা, হাউস্টন এবং ডিট্রয়েটেও কয়েকজন ভ্রমণকারীকে আটক করা হয়েছে। কেবল জেএফকে বিমানবন্দরই নয়, ওয়াশিংটন ডিসির ডালেস বিমানবন্দরেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। বিক্ষোভকারীদের হাতে দেখা গেছে বিভিন্ন স্লোগানযুক্ত প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা ছিল-‘আমরা সবাই অভিবাসী’ ‘তাদেরকে আসতে দাও’ ‘শরণার্থীদের স্বাগত’ ‘অমান্য কর’ এবং ‘প্রতিরোধ কর’।
ভার্জের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যান ফ্রান্সিকোতে গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যালফেবেটের প্রেসিডেন্ট সের্গেই ব্রিনও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জড়ো হন। ফোর্বসের রায়ান ম্যাকের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, ম্যাক শুনেছেন যে ব্রিন বলছেন, ‘আমি এখানে এসেছি এবং আমি একজন শরণার্থী’।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জারি করা নতুন নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিমানবন্দর এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যালয়ের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাম্প যখন এই নির্বাহী আদেশে সই করেন, তখন যাত্রা শুরু করে আদেশ স্বাক্ষর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন; এমন নাগরিকদেরও আটকে দেওয়া হয়েছে। আবার বৈধ বিমান টিকিট ও ভিসা নিয়েও বিমানে উঠতে পারেননি কেউ কেউ। আশঙ্কা করা হচ্ছে ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির সঙ্গে তারা এখনও ভালোভাবে পরিচিত হতে না পারার কারণে এমন ঘটছে।