টেস্টেও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
অনলাইন ডেস্ক: টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে ক্রাইস্টচার্চে ১০৯ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
দুই ওপেনার টম ল্যাথাম ও জিত রাভাল জুটির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকে কিউইরা। তবে দলীয় ৫৬ রানে রাব্বীর বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন রাভাল। বিদায় নেন ৩৩ রানে। তাতেও থেমে থাকেনি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। দলকে জয় পাইয়ে দিয়ে মাঠ ছাড়েন ল্যাথাম ও গ্র্যান্ডহোম। ১৮.৩ ও ১৮.৪ ওভারে নাজমুলের ওভারে পর পর দুটি ছয় মেরে জয় নিশ্চিত করেন গ্র্যান্ডহোম। ল্যাথাম অপরাজিত থাকেন সর্বোচ্চ ৪১ রানে। আর গ্র্যান্ডহোম ১৫ বলে অপরাজিত ছিলেন ৩৩ রানে। ৮ উইকেট নিয়ে এই টেস্টে ম্যাচসেরা হন টিম সাউদি।
এর আগে প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও নাকানিচুবানি খেয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে হেছে ১৭৩ রানেই। বাংলাদেশ কিউইদের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে ১০৯ রানের।
ক্রাইস্টচার্চে দলীয় ১৭ রানে প্রথম উইকেটের পতন দিয়ে বাজে শুরু বাংলাদেশের। এরপর আর প্রতিরোধ দিতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বিদায়ের মিছিল শুরু হয় ৫৮, ৭৩, ৯২, ১০০ ও ১০৬ রানে। এভাবে আরও ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সর্বশেষ ১১৫ রানে বিদায় নেন মিরাজ। ৬৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও একটি বড় জুটির জন্য হাহাকার কমাতে পারছেন না কেউ। বরং দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেছে ব্যাটিং ধস। বাংলাদেশ মাত্র ৩৫ রানে এগিয়ে থেকে চা বিরতিতে যায়। বিরতি থেকে ফিরে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম উইকেট হারায় তারা।
অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের চোটে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কত্ব পাওয়া তামিম ক্রাইস্টচার্চে নেতৃত্বে কিছুটা ভালো করলেও ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। ক্রাইস্টচার্চে দুই ইনিংসে তার রান ৫ ও ৮। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ এ ওপেনার। এবারও টিম সাউদির শিকার তিনি। প্রথম ইনিংসে উইকেট কিপার বিজে ওয়াটলিংয়ের কাছে ক্যাচ দিয়েছিলেন। সোমবার দিলেন মিচেল স্যান্টনারের হাতে। দলীয় ১৭ রানেই অধিনায়কের বিদায়। এরপর তিনজন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছেন। যাদের কেউই বড় জুটি গড়তে পারেননি।
প্রথম ইনিংসে ৬৫ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বড় ভরসা ছিলেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ৪১ রানের জুটি গড়েন তারা। সৌম্য ব্যক্তিগত ৩৬ রানে কলিন ডি গ্রান্ডহোমের শিকার হন। অথচ প্রথম ইনিংসের এ হাফসেঞ্চুরিয়ানের কাছে বড় ইনিংসের প্রত্যাশা ছিল। একই ওভারে জিত রাভালের কাছে জীবন পাাওয়া সাকিব আল হাসান ইনিংসটাকে লম্বা করতে পারেননি। ব্যাটিং লাইনআপের এ স্তম্ভ মাত্র ৮ রানে সাউদির দ্বিতীয় শিকার। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সাকিবের জুটি ছিল ১৫ রানের। প্রথম ইনিংসের দুই হাফসেঞ্চুরিয়ানকে হারানো বাংলাদেশের শেষ ভরসা মাহমুদউল্লাহও আউট ৩৮ রানে। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তার জুটি ১৯ রানের। ক্রিজে নেমে ১১ বল খেলে রানের খাতা না খুলেই ওয়াগনারের কাছে উইকেট হারান সাব্বির। নাজমুলের সঙ্গে তার জুটি মাত্র ৮ রানের। চা বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় বলেই নুরুল হাসান সোহানকে ফেরান ওয়াগনার। কোনও রান করতে পারেননি এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। কয়েক ওভার বিরতি দিয়ে ট্রেন্ট বোল্টের নিচু বল নাজমুলের মিডল স্ট্যাম্প নাড়িয়ে দেয়। অন্য ব্যাটসম্যানদের দ্রুত যাওয়া আসার দিনে ৬০ বল খেলেছেন তিনি, করেছেন মাত্র ১২ রান। এরপর নামা মেহেদী হাসানও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ২২ বলে ৪ রান করে বোল্টের শর্ট বলে ল্যাথামের তালুবন্দী হন মেহেদী। টপ অর্ডাররা না পারলেও শেষ দিকে জুটি গড়ে পুঁজি বাড়াতে থাকেন স্বীকৃত পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বী ও তাসকিন আহমেদ। এই জুটিতে আসে সর্বোচ্চ ৫১ রান। যদিও ৩৩ রানে ব্যাট করতে থাকা তাসকিনকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন বোল্ট। শেষ দিকে রুবেল ৭ রানে বিদায় নিলে রাব্বী অপরাজিত থাকেন ২৫ রানে।
কিউইদের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ওয়াগনার, বোল্ট ও সাউদি। একটি নিয়েছেন গ্র্যান্ডহোম।
এর আগে সোমবার চতুর্থ দিনের বল মাঠে গড়ায় আধা ঘণ্টা দেরিতে । ৫৬ রানে হেনরি নিকলস ও টিম সাউদি ৪ রানে খেলতে নেমে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে এগিয়ে নেওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন। এমন সময় সাকিব আল হাসান তার দিনের তৃতীয় ওভারে সাউদিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের উইকেট উদযাপনের উপলক্ষ্য তৈরি করেন। বাংলাদেশি এ অলরাউন্ডার ৪ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৩৫৪ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন।
সাউদির উইকেট শিকারি হতে পারতেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ১৫ রানে সাউদির ক্যাচটি নিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে জীবন পাওয়ার দুই ওভার পরই সাকিবের বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ তোলেন সাউদি। ১৭ রানে থামে তার ইনিংস। এটি সাকিবের চতুর্থ উইকেট। দ্বিতীয় দিন শেষ সেশনে তিনি তিনটি উইকেট নেন।
সকাল সকাল আরেকটি জীবন পায় নিউজিল্যান্ড। তাসকিন আহমেদের বলে ৭ রানে নেইল ওয়াগনারের তুলে দেওয়া বলটি হাতে নিলেও ধরে রাখতে পারেননি রাব্বি। এক বল পরে তাসকিনের এলডবিডব্লিউর আবেদনে ওয়াগনারকে আউটের সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউয়ে বেঁচে যান কিউই ব্যাটসম্যান।
এরপর মিরাজ ৯৮ রানে নিকলসকে বোল্ড করেন। ২৬ রানে রান আউট হন নেইল ওয়াগনার।
উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ড সফরের এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথম দিনে বাংলাদেশ ২৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায়।