শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

‘গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর আস্থাশীল না হওয়া কাণ্ডজ্ঞানহীনতা’

৬ জানুয়ারি, বিবিসি : যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক কখনও মধুর ছিল না। নির্বাচনি প্রচারণার শুরুতে ট্রাম্পকে সমর্থন না করার ঘোষণা দিয়ে বিতর্কে জড়ান বাইডেন। এরপর দু’;জনের বাগযুদ্ধ অনেকবার শিরোনাম হয়েছে। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কর্মকাণ্ড দেখে ট্রাম্পকে একেবারে সাবালক হতে বললেন বাইডেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকিং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আক্রমণ করায় ট্রাম্পের ওপর ক্ষেপেছেন বাইডেন। গতকাল শুক্রবার নির্বাচনে হ্যাকিংয়ে রাশিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়ে ট্রাম্পকে অবহিত করার গোয়েন্দাদের। যদিও হ্যাকিংয়ে রাশিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর আস্থাশীল না হওয়ায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বাইডেন বলেছেন, এটা একজন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টর জন্য ‘একেবারে কা-জ্ঞানহীনতা’।
ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়ে বাইডেন আরও বলেন, ‘গোয়েন্দাদের আপনি বেশি জানেন এমনটা মনে করার বিষয়টা হচ্ছে এমন- যেন পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও অধ্যাপকের চেয়ে বেশি জানা। আমি বই পড়িনি, আমি শুধু জানি যে আমি জ্ঞান বেশি টুইটারে ট্রাম্পের নিয়মিত আক্রমণাত্মক বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, ‘সাবালক হোন ট্রাম্প, সাবালক হোন। এখন সাবালক হওয়ার সময়। কারণ, আপনি প্রেসিডেন্ট। এটা কিছু করার সময়। আপনার কী আছে, তা দেখান।’
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর এক মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ৮ নবেম্বরের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ইমেইল হ্যাক করেছিল রাশিয়া। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তি উইকিলিকসের হাতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্যদের হাজার হাজার নথি তুলে দিয়েছিলেন, তাদেরও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শনাক্ত করতে পেরেছে। আর গত ডিসেম্বরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে যেসকল হ্যাকিং হয়েছে তার সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘ব্যক্তিগতভাবে জড়িত’ বলে বিশ্বাস করেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। একইদিন সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সামনেও নিজেদের মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারাদাবি করেন, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারানোর জন্য রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সহায়তা করতে মস্কো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছিল। এক কংগ্রেসম্যান গোয়েন্দাদের কাছে জানতে চান, তারা পুতিনের উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা দেবেন কিনা। তখন গোয়েন্দারা জানান তারা এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেবেন।
ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এর পরিচালক জেনারেল জেমস ক্ল্যাপার দাবি করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেইলগুলো হ্যাকিংয়ের আদেশ দিয়েছিলেন। আগামী সপ্তাহেই পুতিনের উদ্দেশ্য কী ছিল তা ব্যাখ্যা করা হবে বলেও জানান ক্ল্যাপার।
গত ডিসেম্বরে গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হিলারির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সন্দেহমূলক সেইসব হ্যাকিং-এর কাজ শুরু করেছিলেন পুতিন। কিন্তু পরবর্তীতে তা বিশ্বের কাছে মার্কিন রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে তুলে ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ওই দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে এনবিসি নিউজ আরও জানায়, পাল্টা জবাবের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যাপারে তদন্ত জোরালো করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
গতকাল শুক্রবার ওই হ্যাকিং নিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ব্রিফ করেন গোয়েন্দারা। পরবর্তী সপ্তাহে প্রতিবেদনের একটি আনক্লাসিফায়েড ভার্সন প্রকাশ করা হবে। অবশ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প বরাবরই রাশিয়ার হ্যাকিং সম্পর্কিত অভিযোগ খারিজ করে আসছেন।
এর আগে ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া কোনও ধরনের হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে বলে তিনি মনে করেন না। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা এসব অভিযোগকে তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও উল্লেখ করেছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ