শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনায় ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

খুলনা অফিস : খুলনায় ওষুধের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। ফার্মেসিতে ক্যানলা ভেসোটিক্স (শিশুদের) দাম ১৪০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আগে এর দাম ছিল মাত্র ৮০ টাক। শুধু শিশুদের ওই ক্যানলার দাম বাড়েনি, জীবন রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন জটিল রোগ উপশমকারী ওষুধের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যাহিক সমস্যা নিরাময়কারী ওষুধের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার তো বটেই অনেক অবস্থা সম্পন্নদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। হার্টের ওষুধ, গ্যাসের ট্যাবলেট, এন্টিবায়োটিক, স্যালাইন, ইনজেকশন ও সার্জারিক্যাল আইটেমগুলোসহ সব ধরণের ওষুধের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
রূপসা উপজেলার গৃহিনী লায়লা বেগম কয়েকদিন ধরে খুলনার শিশু হাসপাতালে শিশু মাহিমকে নিয়ে রয়েছেন। তার স্বামী রূপসার একজন চা বিক্রেতা। ঠা-া গরমে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে শিশু মাহিমকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লায়লা বেগম বলেন, শিশুপুত্রকে স্যালাইন দেয়ার জন্য ডাক্তাররা ক্যানলা কিনে আনতে বলেন। ফার্মেসিতে গিয়ে ক্যানলার দাম শুনে আঁতকে উঠলাম। আগে এর দাম ছিল ৮০ টাকা। এখন দাম চাচ্ছে ১৪০ টাকা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিটি পরিবারের কোন না কোন সদস্য রয়েছেন যাদের নিয়মিত কয়েক ধরনের ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক মাস ওষুধ কিনতে গিয়ে এক ধরনের বিভীষিকায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
খুলনার ড্রাগ সুপার মাহমুদ হোসেন বলেন, কয়েকটি কোম্পানির বেশ কিছু ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধের উন্নত মানের ‘র’ কিনে আনার কারণে এ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তাই আগের চেয়ে ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কর্মচারীদের বেতনও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তারা কিছু ওষুধের দাম বৃদ্ধি করেছেন বলে দাবি করেন। খুচরা বিক্রেতাদের বিষয়ে ড্রাগ সুপার বলেন, যদি কেউ কোম্পানির এমআরপির চেয়ে বেশি দামে কোন খুচরা ওষুধ বিক্রেতা বেশি দামে বিক্রি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। নগরীর কয়েকটি ফার্মেসিতে কর্মরত ওষুধ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইনসেফটা কোম্পানির ভিটামিন ভিটাবিওন ট্যাবলেট আগে ৬ টাকা বিক্রি হলে বর্তমানে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই কোম্পানির ডিসোপন-১ বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা। যা আগে ছিল ৬ টাকা। একইভাবে ডিসোপেন দশমিক-২ আট টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর হার্টের ওষুধ নিডোকার্ড-রিটার্ড ৪ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা, স্কয়ার কোম্পানির আগে নিকজাম-২০ গ্যাসের ট্যাবলেট দাম ছিল ৫ টাকা করে, ওই কোম্পানি এটার পরিবর্তে বাজারে নেক্সাম-মাপস-২০ গ্যাসের ট্যাবলেট বিক্রি করছেন ১০ টাকা, স্কয়ার কোম্পানির এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট মক্সক্লেভ এর দাম ২৫ টাকার পরিবর্তে ৩২ টাকা বিক্রি করছেন। রেনাটা কোম্পানির নরমেনস ট্যাবলেট ৫ টাকার পরিবর্তে ৬ টাকা, পবভরীরসব গ্রুপের সেফ-৩ (২০০ মিলি) এন্টিবায়োটিক সব কোম্পানি ৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন, শিশুদের শ্বাসকষ্ট হলে লেবুলাইজেশন দেয়ার প্রয়োজন হয় উইন্ডেল প্লাস (ইনজেকশন) এটা ইনসেফটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোঃ ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্যালাইন এর দাম প্রকারভেদে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ডিএনএস স্যালাইন (১০০০ এমএল) ৬০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, এনএস ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৮৭ টাকা, এইচ এস ৬০ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকা, সিএস ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকা ও ডিএ ৬০ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সার্জারী প্রোডাক্টগুলোর দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। এর মধ্যে ব্লাড সেট ২৫ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা, জেএমএস (টেপ এক ইঞ্চি) ধরণের ৪৫ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, দুই ইঞ্চি এর দাম ৯০ টাকার পরিবর্তে ১১০ টাকা, বার্ডিয়া ক্যাস্টেও ৯০ টাকার পরিবর্তে ১১০ টাকা, জেসন কোম্পানির জেসকেইন জেলি ৮০ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকা, সেলাই করার সূতা ২৫০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ টাকা, উন্নতমানের সূতা ৩৫০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা, ইথোলিন ‘টু’/জিরো এই সূতার দাম ১৫০ টাকার পরিবর্তে ১৮০ টাকা, তুলা ৪ টাকার পরিবর্তে ৬ টাকা, রোল ব্যান্ডেজ ৮ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, প্লাস্টার ৯০ টাকার পরিবর্তে ১১০ থেকে ১২০ টাকা, অ্যারোজ প্লাস্টার ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৭৭ টাকা, আইভি ক্যানোলা ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা, ভেসোভিক্স (উন্নতমানের) ক্যানলা ২৪ সাইজ শিশুদের জন্য ৮০ টাকার পরিবর্তে ১৪০ টাকা, বড়দের ক্যানোলা (১৮-২০ সাইজ) ৬০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, সিরিঞ্জ (৫ সিসি) ৪ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা, ১০ সিসি- ৫ টাকার পরিবর্তে ৮ টাকা ও ২০ সিসি ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা, সিজার বেল্ট (নরমাল) ৮০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা ও বেল্ট (উন্নতমানের) ২৮০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গ্যাসের ইনজেকশন ৭০ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকা, কাশির সিরাপ ডেসপ্রোটিন ৬০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, অফসো কোঃ (ছোট স্যালাইন) সিফরক্সি আইভি ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, মেট্রো আইভি-৩৫ টাকার পরিবর্তে ৫৩ টাকা, পেটে ব্যথার এলজিন ট্যাবলেট ৫ টাকার পরিবর্তে ৬ টাকা, ইনসেফটা কোঃ এন্টিবায়টিক ইনজেকশন একজোন ওয়ান গ্রাম ১৬০ টাকার পরিবর্তে ১৯০ টাকা, অ্যারিস্টো ফার্মাসিটিক্যাল কোঃ একজোন ‘টু’ গ্রাম ২৬০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা, হার্টের ট্যাবলেট ট্রোসার (২.৬ এসআর) এনসেফটা কোঃ ৪ টাকার পরিবর্তে ৬ টাকা, থাইরড রোগীদের জন্য থাইরক্স ট্যাবলেট এক পাতা ৪৫ টাকা ছিল এখন প্রতি পাতায় ১৫ টাকা দরে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুদের স্যালাইন বেবি সল জুনিয়র (৫০০ এমএল) ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৭৩ টাকা, শিশুদের জন্য স্যালাইন থেকে ক্যানোলা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয় মাইক্রোবুরেট এই সেট ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উল্লেখিত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সার্জারি প্রোডাক্টগুলো বৃদ্ধি পেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। বিশেষ করে খুচরা বাজারে মূল্য বৃদ্ধির মাত্রা যেন বেশি। একেক দোকানে একক ধরণের দাম। খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে থাকে। বিশেষ করে খুচরা বাজারে মূল্য বৃদ্ধির মাত্রা যেন বেশি। খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করে থাকেন। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এক প্রকার চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখভাল করেন। তারাই যাচাই-বাছাই করে নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা ওষুধ কোম্পানিদের দাম বাড়ার বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের ‘র’ এর দাম বেড়েছে। সে জন্য তারা দাম বাড়িয়েছে। আসলে এটা কতটুকু সত্য এটা আমি বলতে পারবো না। ওষুধ প্রশাসনই এটা ভাল বলতে পারবে। তিনি বলেন, ওষুধের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ