শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পানিবদ্ধতা নিরসন ও ভাঙন রোধে কেসিসি’র ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

খুলনা অফিস : পানিবদ্ধতা খুলনা নগরীর বড় সমস্যা। খুলনা নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন এবং কাস্টমঘাট থেকে রুজভেল্ট জেটি পর্যন্ত ভৈরব তীরবর্তী নদের ভাঙন রোধে বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছে ময়ূর নদী ভরাট ও সংযুক্ত খালসমূহ ভরাট ও অবৈধ দখলের কারণে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বর্ষা হলে নগরীর ৮০ ভাগ রাস্তা-ঘাট পানিতে নিমজ্জিত হয়। গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয় নগরীতে সৃষ্ট ৮০ ভাগ বর্জ্য ময়ূর নদীতে ফেলার কারণে নদী ভরাটের সৃষ্টি হয়। মাঝারি থেকে ভারীবর্ষণের ফলে নগরীর প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়। নগরীর পনের লাখ লোকের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের অধিক লোক পানিবদ্ধতার ফলে নানাবিধ সমস্যায় পড়ে।
খুলনা নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন এবং কাস্টমঘাট থেকে রুজভেল্ট জেটি পর্যন্ত ভৈরব তীরবর্তী নদের ভাঙন রোধে ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রকল্প দু’টিতে অর্থ যোগান দিচ্ছে। এ প্রকল্পে ময়ূর নদীতে প্রতিমাসে খননের ব্যবস্থা থাকবে। আগামী বছরের শুরুতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
সিটি করপোরেশের সূত্র জানায়, খুলনা নগরীও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৫০ খালের মালিক জেলা প্রশাসন। কেসিসি এগুলো তদারকি করেন মাত্র। উল্লেখযোগ্য খালগুলো হচ্ছে নিরালা, ময়ূর, মান্দার, ক্ষেত্রখালী, মতিয়াখালী, লবণচরা, তালতলা, মিস্ত্রিপাড়া, সবুজ বাগ, বাস্তুহারা, রায়ের মহল, ছড়িছড়া, হাজী তমিজ উদ্দিন, নারিকেল বাড়িয়া, সুড়ি মারি, চক মথুরাবাদ, নবপল্লী, ছোট বয়রা শ্মশানঘাট, দেয়ানা, বেতবুনিয়া ইত্যাদি।
এছাড়া বাস্তুহারা খাল, স্লুইচগেট, গল্লামারী নর্থ খাল ও কাস্টমঘাট ইত্যাদি এলাকায় খালের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। লবণচরা খালের একাংশ ভরাট করে অফিস ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। খুলনার একান্ন খাল গিলে খেয়েছে ৮১ প্রভাবশালী। পানি নিষ্কাষণের জন্য ১৯৬০ সালে অধুনালুপ্ত পৌরসভা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের মধ্যদিয়ে একটি খাল খনন করে। পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই খালের ওপর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা ও সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তোলে। খালিশপুর হাউজিং এলাকায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্যুয়ারেজ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং দক্ষ জনবলের অভাবে পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প : নগরীর আশি ভাগ এলাকা পানিবদ্ধতা দূরীকরণে চারশ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এডিবি এই প্রকল্পে অর্থ যোগান দেবে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আলুতলা ও রূপসা পয়েন্টে পাম্প হাউজ স্থাপন করে ভেতরের পানি রূপসা নদীতে ফেলা। স্লুইচগেট সংস্কারসহ পাম্প হাউজ নির্মাণ। খাল খননের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে ছড়িছড়া, নবীনগর, হাসান বাগ, তালতলা, বাস্তুহারা, হরিণটানা, দেয়ানা ইত্যাদি। এই প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গ্যাস ও সার উৎপাদন করা হবে। তালুকদার আব্দুল খালেক ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর দখলদারদের হাত থেকে অবৈধ খালগুলো দখল মুক্ত করে।
শহর রক্ষা প্রকল্প : মহানগরীর কাস্টমঘাট থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ভৈরব নদের তীর সংস্কারের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে তিনশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রকল্পে অর্থ যোগান দেবে। গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কেসিসি ও দাতা সংস্থার সাথে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছর থেকে কাজ শুরু হবে। ১৯৯২-৯৩ সালে ভৈরব নদের তীরে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩১ মিটার শহররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের সম্পন্ন করা হয়।
কেসিসি’র মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আগামী বছরের শুরুতে নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন ও শহররক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তিনি আশাবাদী বর্ষা মওসুমে নগরবাসী পানিবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পাবে। দাতা সংস্থা আধুনিক উপকরণ সরবরাহ করছে। এর ফলে প্রতিমাসে ময়ূর নদীর খনন করা যাবে। ফলে দ্রুত পলি অপসারণ হবে। ক্ষুদের খাল খননের কাজ চলছে। অবৈধ দখলদারদের কারণে অধিকাংশ খালের ওপর স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ