শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বইপত্র

‘আমাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি’। লেখক: অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান। প্রকাশক: পিদিম প্রকাশন, ২২২, ফকিরাপুল, ৩য় তলা, মতিঝিল, ঢাকা-১১০০। প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০১৬। প্রচ্ছদ: মোজাম্মেল প্রধান। অনলাইন বুকশপ: rokomari.com পৃষ্ঠা-৩২, মূল্য: ৫০ টাকা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমানের সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থ- ‘আমাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি’। গ্রন্থটির কলেবর ক্ষুদ্র হলেও বিষয়বস্তু, উপস্থাপনা ও এর গুরুত্ব বিশেষ তাৎপর্যবহ। সংস্কৃতি সম্পর্কে আজকাল অনেকের মনেই নানা বিভ্রান্তিকর ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণভাবে নাচ-গান-বাদ্য ও নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানকে সংস্কৃতি বলে ধারণা করা হয়। মূলত ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি ইংরাজি Culture শব্দ থেকে এসেছে। Culture  শব্দের অর্থ- কর্ষণ বা পরিমার্জন। বাংলা ‘সংস্কৃতি’ শব্দেরও সাধারণ অর্থ এটাই। পরিশ্রুত জীবনবোধ, পরিমার্জিত জীবানাচার ও নান্দনিক অভিব্যক্তিই প্রকৃত সংস্কৃতি। সর্বোপরি, যে উন্নত মহৎ ও শীলিত জীবনচর্যা মানুষের মধ্যে মহত্তর উন্নততর অনুভূতি ও প্রেরণা সৃষ্টি করে, প্রকৃত অর্থে সেটাই যথার্থ সংস্কৃতি। কিন্তু বর্তমানে সংস্কৃতির নামে যেসব নাচ-গান, অশ্লীলতা, অমার্জিত ও অরুচিকর কর্মকা- বিস্তার লাভ করেছে, তা মূলত সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি। মানুষের মনে তা মহত্তর-উন্নততর প্রেরণা সৃষ্টির পরিবর্তে পশুপ্রবৃত্তির বিকাশ ঘটায়, অসুস্থ-বিকৃত মানসিকতার জন্ম দেয়। এরফলে সমাজে অবক্ষয় ও নৈতিকতাহীনতার প্রসার ঘটছে। এজন্য বলা যায়, সংস্কৃতির নামে বর্তমানে সমাজে যা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছে, মূলত তা অপসংস্কৃতি।  
সংস্কৃতি যে কোন সমাজের দর্পণ। সমাজ কতটা উন্নত, ভদ্র, সভ্য ও নৈতিকতাসম্পন্ন তা সে সমাজের সাংস্কৃতিক কর্মকা- দেখেই বিচার করা সম্ভব। অশ্লীল, অরুচিকর, অশালীন ও নীতিবিবর্জিত কোন কিছুই সমাজ ও মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে না। তাই সংস্কৃতির যথার্থ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী সুস্থ, রুচিকর, শীলিত, সুন্দর সংস্কৃতির চর্চা ও তার পরিবেশ তৈরি করা আজ সময়ের অপরিহার্য দাবী। সাথে সাথে সংস্কৃতির নামে অশ্লীল, অরুচিকর, অশালীন, নীতিবিবর্জিত, বিজাতীয় যে অপসংস্কৃতির কারণে সমাজের নীতি-নৈতিকতা ও সৃজনশীলতা বিধ্বস্ত-বিকৃত হয়ে পড়েছে, তার হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করাও আজ কর্তব্য হয়ে পড়েছে।
বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান তাঁর এ গ্রন্থে সংস্কৃতির সংজ্ঞা, যথার্থ সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির মূল উপাদান, বিবর্তন, এর লক্ষ্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রয়াস পেয়েছেন। সুস্থ সংস্কৃতি যে কোন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক দেশ ও জাতিরই স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয় বিদ্যমান। এ পরিচয়ের ভিত্তিতেই দেশের মর্যাদা নির্ণীত হয়। এ কারণে স্বসংস্কৃতির চর্চা, বিকাশ ও তার প্রতি আস্থাবান হয়ে বিজাতীয় অপসংস্কৃতি প্রতিরোধে দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হয়ে ওঠা প্রয়োজন। তাই সংক্ষিপ্ত হলেও এ গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ও বক্তব্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে  গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, বিজ্ঞ লেখক এ বিষয়ের উপর পরবর্তীতে বৃহদাকার গ্রন্থ রচনা করবেন। গ্রন্থটির ভাষা-বর্ণনা ও উপস্থাপনা চমৎকার । এর বহুল প্রচার কাম্য। Ñআহ্মাদুর রহমান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ