বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

পুড়ছে কাঠ ॥ ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানুষের ওপর ॥ দেখার কেউ নেই

শালিখার হরিশপুরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। চলছে কাঠ পুড়ানোর মহোৎসব -সংগ্রাম

শালিখা (মাগুরা) সংবাদদাতা : শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের হরিশপুর বাজারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত হয়েছে চিত্রা ব্রিকস নামের একটি ইট ভাটা। ভাটাটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গড়ে উঠলেও প্রশাসনিকভাবে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। গত বছর কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ইট ভাটা প্রস্তুত ও ব্যবসা করার দায়ে (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালমা সেলিম ভাটাটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভাটার অবৈধ চিমনিসহ সকল যন্ত্র সামগ্রী ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন। ভাটাটি পুনরায় যাতে চালু না করা হয় তার জন্য মুচলেকা নেয়া হয়। এরপর কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও কিছু দিনপরই পুনরায় জোরেসরে শুরু হয়েছে ভাটাটির কাজ। একদিকে পরিবেশ বান্ধব চিমনি ছাড়ায় টিনের চিমনি ব্যবহার করে চলেছে। চলছে কাঠ পুড়ানো মহা উৎসব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়কের সরকারি গাছ  চোরায় পথে কিনে ভাটার মালিকেরা ভাটাটিতে ব্যবহার করছে। এছাড়াও সরকারের সামাজিক বনাঞ্চল থেকে যে সমস্ত গাছ রাতের আধারে হারিয়ে যায় সে সমস্ত গাছ দুর্বৃত্তরা খুব গোপনে ভাটায় মালিকের কাছে বিক্রি করে। গ্রাম অঞ্চলের রশালো খেজুর গাছগুলোও ভাটায় পুড়িয়ে চলেছে। যার ফলে বর্তমান দেশের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস, গুড় ও পাটালী পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। ভাটাটির উপদ্রব্যে ফসল উৎপাদন ও সাধারণ মানুষের বসবাস চরম ভাবে বিঘœত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ভাটার মালিক বিভিন্ন মহলে দেন দরবার করে ও ক্ষমতাসীন বড় বড় নেতাদের দোহায় দিয়ে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব এলাকার কৃষকরা জানান, গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে ইটের ধোয়া ও ধুলা বালি আমাদের ফসলী জমিতে এসে পড়ায় ফসল উৎপাদন ব্যপক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। লোকালয় দূষিত হয়ে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েক বছরে ভাটাটির কারণে পরিবেশের বিরূপ প্রভাবে এলাকার প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে চার পাশের নিরিহ অসহায় মানুষ। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে শ্বাস কষ্ট, মাথা ব্যথা, কাশি, যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ। আইন অনুযায়ী ঝিক ঝাক্কা ও হাওয়া ভাটা করার নিয়ম থাকলেও ভাটা মালিক আইনের  তোয়াক্কা না করে এক দিকে দেদার্ছে পোড়াচ্ছে কাঠ। অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব চিমনি ছাড়াই চলছে ভাটা। ১২ বছরের নিচেই কোন শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো নিষিদ্ধ থাকলেও ৭/৮ বছরের শিশু শ্রমিক দিয়েই এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ আইন রয়েছে ১২ বছর বয়সের কোন শিশু শ্রমিক ভাটায় কাজ করতে পারবেনা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভাটার মালিক যশোরের সাতক্ষীরা এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক এনে তারা ভাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আইন অনুযায়ী একটি ভাটা হতে গেলে প্রথমত ইউনিয়ন পরিষদের অনাপত্তি সনদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন, ফসলী জমি ও লোকালয় থেকে দূরে, মানসম্পন্ন চিমনি, আগুন জ্বালাতে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের অনুমোদপত্র, জ্বালানি হিসাবে কাঠ পোড়ানো যাবে না, পাথুরী কইলা ব্যবহার করতে হবে। অথচ এসব আইন ও নিয়মের  তোয়াক্কা না করে হরিশপুর ৬নং ওয়ার্ড মেম্বর জসিম উদ্দিন ও মোঃ শহিদুল ইসলাম নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়ায় সম্পন্ন অবৈধভাবে ইট ভাটা গড়ে তুলেছে। যেন দেখার কেউ নেই। এব্যাপারে ভাটার মালিক ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন ও শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তারা প্রথমে ক্ষমতার সীমাহীন দাপট দেখান। পরে বলেন, আমাদের ভাটা সম্পন্ন অবৈধভাবে চললেও আমাদের সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন মহলে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। আইন অনুযায়ী ভাটা করি আর নাই করি তাতে কিছু আসে যায় না। ফলে আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখেন না। ম্যানেজার আসলে আপনাদেরও ব্যবস্থা করা হবে। এব্যপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালমা সেলিমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাটাটি অবৈধভাবে গড়ে  তোলার অপরাধে গত বছর জরিমানা করা হয়েছিল। পরিবেশের ছাড় পত্রসহ জিকজাক ভাটা করবে মর্মে তাদের কাছ থেকে মুচলেকাও নেয়া হয়েছিল। বিষয়টি জেলা প্রশাসক  জানানো হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ