বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দুই পদে নেতাদের লড়াই অনেকেই বিতর্কিত ও অছাত্র

রাবি রিপোর্টার : প্রায় চার বছর পর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন আগামী ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বহুল প্রত্যাশিত কাউন্সিল হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে। জমে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। এদিকে ছাত্রলীগের কাঙ্খিত সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে অধিষ্ঠিত হতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতারা। তবে এ পদের জন্য যারা দোঁড়-ঝাপে এগিয়ে আছেন তাদের অধিকাংশই বিতর্কিত এবং অছাত্র ও বহিষ্কৃত বলে অভিযোগ রয়েছে।  ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর  ৮ডিসেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ২৯ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের কাছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় ৭০জন প্রার্থীর জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়। সভাপতি প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান রাসেল, তন্ময় আনন্দ অভি, আতিকুর রহমান সুমন, দেলাওয়ার হোসেন ডিলস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, সাহানুর শাকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম, মেহেদী হাসান, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাক আসাদুল্লাহ-আল গালিব, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাকিম বিল্লাহ, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক অনিক সাহা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান মর্তুজা, বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিনারুল ইসলামসহ আরো অনেকে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাছকিন পারভেজ শাতিল, সাংগঠনিক সম্পাদক কাওসার আহমেদ কৌশিক, ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক টগর মো. সালেহ, ক্রীড়া সম্পাদক কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন, সদস্য সাকিবুল হাসান বাকি, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি মামুনুর রশিদ, আমীর আলী হল সভাপতি নাজমুল হাসান সজল, বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান (বিবাহিত), মতিহার হলের সভাপতি শরিৎ কাইউম তালুকদার, শাহ মাখদুম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিক সারওয়ার (সম্রাট সরকার), গিয়াস উদ্দিন, অনিক মাহমুদ বনিসহ আরা অনেকে।

গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদের জন্য ইতিমধ্যে লভিং-গ্রুপিং শুরু করেছেন প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী। এদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন, ফয়সাল আহমেদ রুনুু, মেহেদী হাসান রাসেল, গোলাম কিবরিয়া, মিনারুল ইসলাম, তাসকিন পরভেজ শাতিল, তন্ময় আনন্দ অভি, শাহানুর শাকিল, সাকিবুল হাসান বাকি, টগর মো: সালেহ, শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম, মোস্তাকিম বিল্লাহ। 

পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ফয়সাল আহমেদ রুনু কম্পিউটার সায়েন্স এ্যন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে থেকে পড়াশোনা শেষ করতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে অধ্যায়নরত করছেন বলে জানা যায়। তাছাড়া তিনি শিবির নেতা রাসেল এর পা কাটা মামলার দুই নম্বর আসামী। একইভাবে ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে শিবির নেতা রাসেলের পা কর্তনের অভিযোগ রয়েছে, ঐ মামলায় তিন নম্বর আসামী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অপহরণ, নিজ কর্মীকে ছুরিকাঘাতসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অপহরণের একটি মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি। বর্তমানে ঐ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বলে জানান এই ছাত্রলীগ নেতা। তন্ময় আনন্দ অভিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিস্কার করা হলেও সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন হাইকোর্টের মাধ্যমে তার বহিস্কারের উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন। 

আরেক ছাত্রলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম নিজ বিভাগ লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট থেকে ড্রপ-আউট হওয়ায় তার ছাত্রত্ব চলে গেলে সম্প্রতি বিভাগের পরীক্ষা বন্ধের হুমকি দেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়াও চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয় মোস্তাকিম বিল্লাহকে। তার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর প্রকাশ্যে গুলি ছোড়াও অভিযোগ রয়েছে। লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সাকিবুল হাসান বাকির বিরুদ্ধে সিট বানিজ্য ও নিজ দলের কর্মীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি তা অস্বীকার করেন।

এদিকে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিগত এবং বর্তমান কমিটিতে রাজশাহীর স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্বের প্রাধান্য রয়েছে। কখনো কখনো সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পদের একটি কিংবা দুইটি পদই দখলে রয়েছে রাজশাহীর স্থানীয় ছাত্রনেতাদের হাতে। এতে করে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটির একাধিক নেতাকর্মী। স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরে থেকে আসা নেতাদের মূল্যায়নের দাবিও জানিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এক সাংবাদিককে বলেন, “ছাত্রলীগের  নেতৃত্বে কোন অছাত্র ও বিতর্কিতদের স্থান দেয়া হবে না। আমরা সবধরনের চেষ্টা করব যাতে কোন বিতর্কিত ছাত্র কমিটিতে আসতে না পারে।” তিনি আরো বলেন, রাবিতে অধিকাংশই শিক্ষার্থী রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা। সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। সিনিয়র ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা এবং সব দিক বিবেচনা করে কমিটি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ২০ জুলাই মিজানুর রহমান রানাকে সভাপতি ও এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ