শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি অধ্যক্ষ ডা. মিজানুর রহমান

সুস্থ জাতি স্বনির্ভর দেশ গঠনের পূর্বশর্ত হলো সুস্থ মানসিকতা ও সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। জাতির জীবন ও জীবিকায় অর্থনৈতিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি সুস্থ মানবগোষ্ঠী। সুস্থ মানবগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন নির্ভেজাল খাদ্য, নীরোগ স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে জীবন যুদ্ধে নানা সংকটের মুখোমুখী হয়ে নানা সংকটের মোকাবিলা করতে জীবন যাপনের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণ, সাংস্কৃতিক গোলামী, নোংরামী, উত্তেজনা দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বদলে যাচ্ছে। 

উন্মাদনা, প্রতিহিংসা, অহংকার, লোভ, লালসা ইত্যাদি কারণে সমাজের একশ্রেনীর মানুষ অমানুষের আচরণ করছে। নৈতিক অবক্ষয়ের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে অস্থিতিশীলতা, বৈশ্বিক পরিবর্তনজনিত কারণে, কর্মক্ষম মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়ছে। পূর্বের তুলনায় রোগ ও রোগির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ্রামবাংলার বহু রোগির রোগ নিরাময়ে ছুটে আসেন শহরাঞ্চলে সরকারি হাসপাতালে। সেখানে অনেকাংশেই স্বাস্থ্য সেবা না পেয়ে রোগিরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে ছুটে যান বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিমালিকানা ক্লিনিক গুলোতে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগনির্ণয়ের জন্য ছাপানো কাগজে একগাদা টিকমার্ক দিয়ে তাদের পছন্দের ল্যাবে পরীক্ষা করার জন্য আদেশ করেন। এসব ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুণগতমান, অভিজ্ঞতা এবং তাদের লিখিত ওষুধগুলোর কোম্পানি ও ওষুধের গুণগতমান যাচাই-বাছাই এর নজরদারি নেই। এসব করে রোগিদের নানারকম হয়রানি এবং নানা ওযুহাতে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। রোগি সুস্থ হলো কিনা অথবা মারা গেল কিনা তার কোন তথ্য পরিসংখ্যান লিপিবদ্ধ হয় না। 

অবৈধ গর্ভপাত, বৈধ গর্ভপাত, উভয় ক্ষেত্রে কারণে অকারণে চলে সিজারিং ব্যবসা, এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, ইত্যাদি পরীক্ষায় চলে অমানবিক ব্যবসা। এরপর ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঐসব ক্লিনিকের চিকিৎসকদের নির্দেশিত কোম্পানির ওষুধ কিনতে বাধ্য করে। ভেজাল, মানহীন অথবা লাইসেন্স বাতিলকৃত ওষুধ কোম্পানির মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ প্রয়োগ করে চলে রোগি সেবা। ভুল চিকিৎসা ও মানহীন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করার ফলে রোগি সুস্থতার পরিবর্তে অসুস্থ হয়ে মারা যায় এমন খবর হাজার হাজার। 

সেই সাথে বিভাগ, জেলা, উপজেলায়, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অভিজাত এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজে উঠেছে হাজার হাজার ক্লিনিক ও হাসপাতালের কোন পরিসংখান নেই। গত ১০ বছরে এসব চিকিৎসালয়ে কোন শ্রেনীর চিকিৎসক রোগি চিকিৎসা করেন এবং তাদের গুণগত মান, অভিজ্ঞতাসহ তাদের লিখিত প্রেসক্রিপশন এর প্যাডে কি ধরনের পদবী ব্যবহার হয়। তার কোন নজরদারি নাই সরকারের। এসবের মধ্যে কিছু চিকিৎসালয়ে বহু ভুয়া চিকিৎসক রোগির চিকিৎসা দেয়ার খবর ও ভুল চিকিৎসায় রোগি মারা যাবার খবর দেশের অনেক দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও থেমে নেই ভুয়া চিকিৎসকদের দেশি-বিদেশি ডিগ্রীর প্রচার মাইকিং পোষ্টারিং। 

এশিয়া মহাদেশের মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকাধারী বাংলাদেশ ১৯৭১ খ্রিঃ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম ভুখন্ডের অধিকারী হয়েছে। ক্ষমতা আর মমতার পালাবাদলের ধারাবাহিকতায় হাজারো সমস্যার মোকাবিলা করে একবিংশ শতাব্দিতে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিগণিত হচ্ছে। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে সমদ্রসীমানার সম্প্রসারণ। যমুনা সেতু নির্মাণ, পদ্মা সেতু ৩৮% নির্মাণ কাজ, সমুদ্র বন্দর স্থাপন, বিদ্যুতায়ন, গ্যাসের সম্প্রসারণ, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য ও প্রযুক্তিতে  উৎকর্ষ সাধনসহ কৃষি, শিল্প বাণিজ্য, যোগাযোগ, যাতায়াত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাহিত্য, সংষ্কৃতি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন, যৌতুক প্রথারোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি, সেনিটেশনসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কারণে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দরিদ্র বাংলাদেশ মাত্র ৪৫ বছরের ব্যবধানে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

একটি দেশের জনসংখ্যা জন সম্পদ কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিশ্বের তুলনায় অগ্রসরমান উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য এক চরম সন্ধিক্ষণে। বিশ্বের  মানসিক রোগির সংখ্যা ৪০ কোটি, সেখানে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের পাঁচ কোটি লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত। বেকার যুব মহিলা সংখ্যা আড়াই কোটি, শিশু সংখ্যা ৩ কোটি। বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা দেড় কোটি, মারাত্মক মাদকাসক্ত ১৭ লাখ, তন্মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধী ১ কোটি ২০ লাখ, মাদকাসক্ত ৩৫ লাখ, এইডস রোগির সংখ্যা ৩০ হাজার, থেলাসেমিয়া ৪ লাখ, স্তন ক্যান্সার রোগির ১৩ হাজার, জরায়ু ক্যান্সার রোগির সংখ্যা ১৩ হাজার।  

বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ এর শিরোনাম সহ সারসংক্ষেপ পাঠকের অবগতির জন্য নিম্নে পেশ করা হলো। 

দৈনিক ইনকিলাব ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ খ্রিঃ প্রকাশিত “দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রামক রোগ” শিরোনামে বলা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর শতকরা ৬১ ভাগই হয়ে থাকে অসংক্রামক রোগ থেকে। এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোকের কমপক্ষে একটি এবং ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোকের দেহে একের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে। মানুষের মৃত্যুর ২৫টি বড় কারণের মধ্যে ১২টিই দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক ব্যাধিপ্রসূত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাঁপানি, ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া, হাইপারটেনশন, আইএসডি, আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড, এইডস ইত্যাদি অসংক্রামক ব্যাধি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। 

প্রতিবছর বিশ্বে গড়ে আনুমানিক ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় বিভিন্ন প্রকার হৃদযন্ত্রজনিত রোগে, ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার মৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার, ৭১ লাখ মৃত্যু হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে, ৪০ লাখ ৫৭ হাজার মৃত্যু হয় শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগে এবং ১১ লাখ ২৫ হাজার মৃত্যু হয় ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে। আর এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৭৩ শতাংশ। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ইমিনেন্স’এর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের  কারণে মৃত্যুর হার বর্তমানে ১২ শতাংশ। দেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ হাজার ৭৪ জন বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ৭১০ জন মারা যায়। দেশে ২০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৭ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর  সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ লাখই শিশু। দেশে শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ কখনও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করেনি। দেশে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া তথা রক্তশূন্যতায় ভুগছে। প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার শিশু বংশগত এ রোগটি নিয়ে জন্মাচ্ছে। 

সেইসাথে জনসখ্যার আধিক্য,  বায়ুদূষণ, যানজট, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ দূষণ অপুষ্টি, খাদ্যে ভেজাল, দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ড অপচিকিৎসা, বন্যা, খরা, নদীভাঙ্গন ইত্যাদি কারণে। জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। এসব বিষয়ে সাধারণ জনগণ সঠিক তথ্য জানতে পারলে এসব রোধে জনবিপ্লব সৃষ্টি হতে পারে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই এখন অর্কমণ্য অবস্থায় জীবন ধারন করছে। এসব অকর্মণ্য অসুস্থ মানুষের জীবন জীবিকা ও সেবাদানের জন্য কর্মক্ষম সুস্থ মানুষকে প্রচুর সময় দান করতে হয়। 

দৈনিক ইত্তেফাক ১০ এপ্রিল ২০১০ খ্রিঃ “পাঁচ কোটি লোক দেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত” শিরোনামের খবরে বলা হয়েছে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর “বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস” পালন শুরু হয়েছে। এই প্রতিবেদনে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যে চরম অবহেলিত তা বুঝা যায়। 

দৈনিক প্রথম আলো ১১ অক্টোবর ২০১৬ খ্রিঃ “মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দরকার” শিরোনামে বলা হয় ২০০৩-২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত একটি জরিপের আলোকে জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৮ বছরের উপরে ১৬ শতাংশ এবং ১৮ বছরের নিচে মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ মানসিক রোগের আক্রান্ত। দেশে প্রতি ১ লাখ লোকের জন্য মনোরোগির শয্যা রয়েছে মাত্র ৫৮ টি। 

দৈনিক পূর্বকোণ ১৩ অক্টোবর ২০১০ খ্রিঃ সংখ্যায় “মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও জনসচেতনতা” সম্পাদকীয় কলামে বলা হয়েছে দেশের প্রতি ১৫ লাখ মানসিক রোগীর জন্যে চিকিৎসক আছেন একজনের ও কম। সরকারি  হাসপাতালে এক লাখ ৭২ হাজার মানসিক রোগির বিপরীতে শযা আছে মাত্র একটি। বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার মতো ঘটনা বেড়ে চললেও সরকারি প্রতিরোধ উদ্যোগ নেই বললেই চলে। মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বাজেটও অপ্রতুল। মাত্র দশমিক ৪৪ শতাংশ। সোয়া পাঁচ কোটি মানসিক রোগির চিকিৎসার জন্যে এ বরাদ্দ নিশ্চয়ই  যুক্তিসংগত নয়। 

দৈনিক করতোয়া ১০ অক্টোবর ২০১৬ খ্রিঃ “মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নাকি টর্চার সেল ” শিরোনামে প্রকাশিত মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্যা  মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র এসব চিকিৎসা কেন্দ্রের। এর মধ্যে ১৮০টি প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) থেকে অনুমোদন নিয়েছে। অথচ প্রায় এক হাজার ২০০ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে যেগুলোর অনুমোদন নেই। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানই দেশের লাখ লাখ মাদকাসক্ত রোগীকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা দিচ্ছে। কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকাসহ সারা দেশে গড়ে উঠেছে মাদক নিরাময় কেন্দ্র নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এক শ্রেণির অসাধু প্রতিষ্ঠানে চলছে চিকিৎসা নামে রোগীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। গত দেড় বছরে ৯টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। 

দৈনিক আমার দেশ ২২ অক্টোবর ২০১১ খ্রিঃ “পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত” শিরোনামে বলা হয় একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, মনোচিকিৎসক মনোবিদ, কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ মঞ্জুরীকৃত ৫০৪ টি বদে বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩৬১ জন শূন্য রয়েছে ১৪৩ টি পদ। এই হাসপাতালটি পাবনা শহরে হেমায়েতপুর ইউনিয়নে ৬০ শয্যা নিয়ে ১৯৫৭ সালে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হয়। এর শয্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে  পাঁচশ’তে। দেশের প্রথম এবং একমাত্র এই হাসপাতালে মানসিক রোগের চিকিৎসায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত রোগি চিকিৎসার জন্য আসেন। 

দৈনিক ইত্তেফাক ২৫ এপ্রিল ২০১১ খ্রিঃ “চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে না পেয়ে অনেক অসহায় ও দরিদ্ররোগী ধুঁকে ধুঁকে মরছে” শিরোনামে বলা হয়  চিকিৎসাধীন রোগীর ওষুধ কেনা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকদের দেয়া ব্যবস্থাপত্র নিয়ে প্রতিদিন শত শত রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেলের রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর অতিরিক্ত চাপ ও  চিকিৎসা সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় সচ্ছল ব্যক্তিরা সেখানে চিকিৎসা নিতে যেতে চায় না।  

দৈনিক ডেসটিনি ১৭ অক্টোবর ২০১১ খ্রিঃ প্রকাশিত “মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে” শিরোনামে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক  ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বিম্ব মানসিক স্বাস্থ্যদিবস উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানেরও উদ্যোগ নিয়েছি। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান আরও কার্যকর করতে গাইডবুক প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, সরকার স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।

দৈনিক মুক্তকন্ঠ ০৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ খ্রিঃ “ মন ও মানসিক সমস্যা” শিরোনামে বলা হয় মনোর প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় আবার মন নিজে থেকেই এই সমস্যার সমাধান করে। মনের সমস্যা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যখন একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে তখন আামাদের মনে একটা ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এই ঝড় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা আকারে প্রকাশ পায়। এর কতগুলো সমস্যা এক সঙ্গে মিলে হয় একটি মানসিক রোগ।

দৈনিক প্রথম আলো ০৫ অক্টোবর ২০১৬ খ্রিঃ “সমস্যা জর্জরিত জাতীয় ক্যানসার হাসপাতাল” শিরোনামে বলা হয় রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর ৩০০ শয্যা সব সময় পূর্ণ থাকে। প্রতিদিন ১ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নেয় এই হাসপাতালে। কিন্ত হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ ৭৪টি যন্ত্র নষ্ট এর মধ্যে মেরামতের অযোগ্য যন্ত্র ৪৩ টি। রোগীদের এই হাসপাতালের বাহিরে পাঠাতে তৎপরতা রয়েছে। 

দৈনিক ডেসটিনি ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিঃ প্রকাশিত “ধূমপান ৩৪ ধরনের ক্যান্সার ৩০ প্রাণঘাতী রোগের কারণ” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় মানুষের দেহে ৩৪ ধরনের ক্যান্সারের সৃষ্টির মূল কারণ ধূমপান বা তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন। পৃথিবীতে প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স‹ মানুষের মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটে তামাক সেবনের ফলে। সেই হিসাবে তামাক পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫৪ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ধুমপানজনিত বিভিন্ন রোগে ৫৫ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে, যা হিসাব করলে প্রতি মিনিটে প্রায় ১১ জন। ধুমপানের  সঙ্গে ক্যান্সারের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে ৪৩% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করে। অর্থাৎ দেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটির বেশি। নারীদের মধ্যে এ হার ২৯% এবং পুরুষদের মধ্যে ৫৮%।

দৈনিক সমকাল ২৭ জুলাই ২০১১ খ্রিঃ “নারীর প্রাণঘাতী রোগ স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার” শিরোনামে প্রকাশিত এক সয়বাদে ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগে ও প্রসূতি বিভাগ পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় এদেশে নারীর ২২ থেকে ২৯ শতাংশই জরায়ূর মুখ ক্যান্সারে ভুগছেন। অন্যদিকে স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ১৩ হাজারের মতো। এর মধ্যে মারা যান পাঁচ হাজার। 

দৈনিক মানবকন্ঠ পত্রিকায় গত ১১ এপ্রিল ২০১৬ খ্রিঃ এক সংবাদের শিরোনামে বলা হয়। “মহাসংকটে জনস্বাস্থ্য” ওষুধ প্রস্তুত কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণায় জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ভোজাল ও নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন করছে নামি-দামি অনেক প্রতিষ্ঠানই । মরণব্যাধি ক্যান্সার নিয়েও প্রহসন করছে অনেক প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগস সহ অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে ক্যান্সারের ভেজাল ওষুধ। এক্সিম, মেডিকো, ডলফিনরা বানাচ্ছে নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক, ২০ কোম্পানির লাইসেন্স ও ১৪টির উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ  করেছে। জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সেই সাথে ২২টি কোম্পানির পেনিসিলিন ও সেফালোস্পেরিন গ্রুপের এন্টিবায়েটিক উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করার সুপারিশ করেছে। উক্ত কমিটি  উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিরাট বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশাঙ্কা করেছেন। 

দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর গত ৮আগষ্ট ২০১০ খ্রিঃ প্রকাশিত “চিকিৎসা নিয়ে বাণিজ্য করা সভ্য মানুষের কাজ নয়” শিরোনামে পরিবেশ ও বনপ্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের নবনির্মিত সম্প্রসারিত ভবনে নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ড, কেবিন এবং অপারেশন থিয়েটারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উক্ত শিরোনামের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন চিকিৎসা পেশা একটি মহান পেশা। বাণিজ্যিকী করণের হাত থেকে এই পেশাকে মুক্ত করে সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে চিকিৎসকরাই পারেন মূল ভূমিকা পালন করতে। বাংলাদেশ অত্যন্ত দরিদ্র একটি দেশ। এখানে স্বাস্থ্য সেবাকে এখনো সবার কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। তদুপরি গত কয়েক দশকে এই পেশাকে বাণিজ্যিকীকরণ করেছে একটি গোষ্ঠী। যা কোন কোন সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। এই নোংরা চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে এখনকার চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে।

দৈনিক সংগ্রাম ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ প্রকাশিত “চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা” শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে বলা হয় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পুরান ঢাকায় ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউটসহ চিকিৎসা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১২ জন কে মোট ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

সুচিকিৎসার পূর্বশর্ত হচ্ছে, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ। কিন্তু সেবা প্রদানকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যদি নানা অনিয়ম করে রোগ নির্ণয়ের রিপোর্টই ভুয়া দিয়ে থাকে, তাহলে রোগী সুচিকিৎসা পাবেন কী করে? ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিকে রোগীর ভুল চিকিৎসা হবার আশঙ্কাই থেকে যায় প্রায় শতভাগ। এতে রোগের জটিলতা যেমন বেড়ে যেতে পারে, তেমনই রোগী অপচিকিৎসায় মারাও যেতে পারেন। (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ