ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: প্রথা ও পদ্ধতি

অনলাইন ডেস্ক: আজ মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । মার্কিনীদের এই নির্বাচন সব সময় মঙ্গলবারেই অনুষ্ঠিত হয়।এটাও তাদের একটি নির্বাচনী প্রথা।প্রথা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরবর্তী মঙ্গলবার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

প্রতি চার বছর পরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের দ্বাদশ সংশোধনীতে এই বিষয়টি লিপিবদ্ধ করা আছে।

প্রার্থীর যোগ্যতা:

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথম শর্ত- প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। তাঁকে অন্তত ৩৫ বছর বয়সী হতে হবে। আর শর্ত নম্বর তিন প্রার্থীকে তাঁর জীবদ্দশায় অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হবে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া:

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত হন। এ জন্য আইওয়া রাজ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সমিতিতে নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়।

পরবর্তী ধাপে মূল নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া (ওয়াশিংটন নগরী) কোনো অঙ্গরাজ্যের অংশ নয়।

ইলেক্টোরাল প্রতিনিধি

ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দেওয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেক্টোরাল প্রতিনিধির জন্যও ভোট দেন। মূলত ভোটাররা ইলেক্টর নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। কারণ কাগজে-কলমে এ ইলেক্টরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোটের মাধ্যমেই ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্ধারণ করা হয়। এঁরা মনোনীত একজন প্রার্থীকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ কী

ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ সদস্য রয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কোন রাজ্য থেকে কতজন সদস্য হবেন, তা নির্ধারিত হয়।

বেশির ভাগ রাজ্যেই প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের যত বেশি ভোটই পান না কেন, তাতে কোনো লাভ হয় না। ধরা যাক ক্যালিফোর্নিয়ায় ৯৯ শতাংশ ভোটার হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছেন, তিনি ওই রাজ্যের পুরো ৫৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন। যদি তিনি ওই রাজ্যের ৫১ শতাংশ ভোটও পান, তবুও তিনি ৫৫টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন।

ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা হয়ে থাকে দলীয় ভিত্তিতে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর রানিং মেট আপনাআপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবে।

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি রাজ্যের প্রতি সদস্য এবং প্রতিটি রাজ্যের দুজন সিনেটরের জন্য একজন ইলেক্টর রয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হওয়ায় এখানে ৫৫ জন ইলেক্টর রয়েছেন। অন্য রাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাসে ৩৮ জন ইলেক্টর এবং নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় ২৯ জন করে ইলেক্টর রয়েছেন।

অন্যদিকে কম জনসংখ্যা অধ্যুষিত আলাস্কা, ডিলাওয়্যার, ভারমন্ট ও ওইয়োমিংয়ে মাত্র তিনজন করে ইলেক্টর রয়েছেন। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় তিনজন ইলেক্টর রয়েছেন।

ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যরাই ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।

সফল প্রার্থীকে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে অবশ্যই ২৭০টি ভোট পেতে হবে।

‘সুইং স্টেট’ বা ‘দোদুল্যমান রাজ্যের’ ভূমিকা

কোনো কোনো রাজ্য ঐতিহাসিকভাবে প্রতি নির্বাচনেই ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। অন্য রাজ্যগুলো রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে।

তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোটাররা নির্দিষ্ট কোনো দলকেই সমর্থন দেয় না। গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইলেক্টর রয়েছেন। এই রাজ্যগুলোকে সাধারণত সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে ধরা হয়। আর এই রাজ্যগুলোকেই নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

এই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো এবং এর ইলেক্টরদের সংখ্যা হচ্ছে- ফ্লোরিডা (২৯), পেনসিলভেনিয়া (২০) এবং ওহাইয়ো (১৮)টি।

এই অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ওহাইও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৪ সাল থেকে এই রাজ্যের ভোটেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে আসছে। ফলে ওহাইও রাজ্যের প্রতি জোর সব দলের প্রার্থীদের।

ভোটের দিনের হিসাবনিকাশ

আজকের (৮ নভেম্বর) নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫ জন সদস্যকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট দেবেন। এরা দুই বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।

এ ছাড়া ভোটাররা ১০০ সিনেটরের মধ্যে ৩৪ জনকে নির্বাচিত করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এঁরা ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। একই দিনে ভোটাররা ১২টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরকেও নির্বাচিত করবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ