শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

করের আওতা বাড়াতে রাজধানীতে নতুন জরিপ দরকার -আব্দুর রাজ্জাক

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, করের আওতা বৃদ্ধি করতে রাজধানীতে নতুন করে জরিপ করা দরকার। এতে করে রাজস্ব আয় অনেক বাড়বে। এদিকে সপ্তাহব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় আয়কর মেলা শেষ হয়েছে। সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলায় মোট ২ হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮১১ টাকা কর আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গতকাল সোমবার রাজধানী আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত আয়কর মেলায় সমাপনী সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য টিপু মুনশি এমপি, বেগম আক্তার জাহান এমপি ও শওকত চৌধুরী এমপি।
ঢাকা নগরীতে কর আদায়ে জরিপ করা উচিত- এমন কথা উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখানে বসবাসকারী মানুষের মধ্য থেকে কি পরিমাণ আয়কর আসা উচিত ও বর্তমানে কি পরিমাণে কর আসছে- এ বিষয় নিয়ে জরিপ করা দরকার।
কর ফাঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশেই কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। আমাদের দেশে যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের কীভাবে করের আওতায় আনা যায় সে কৌশল বের করতে হবে। এটা পারলেই এনবিআর সফল হবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজস্ব আহরণে আয়কর মেলা বিরাট ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এটি বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে মোট জিডিপির মাত্র ১১ শতাংশ কর আদায় হয়। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায়ও কম। বর্তমান অবস্থায় ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ কর আদায় সম্ভব।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কর ছাড়া দেশের উন্নয়ন হবে না। এটিই সত্যি। দেশের উন্নয়নের ছোঁয়া কিভাবে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় আমাদেরকে সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
এর আগে ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল মেলা পরিদর্শন করেন। তারা মেলায় স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
আয়কর মেলার শেষ দিন গতকাল সোমবার মেলা প্রাঙ্গণে করাদাতাদের ঢল নামে। রাজধানীসহ দেশের ১৩টি জেলা, ৩১টি উপজেলাসহ (৮টি ভ্রাম্যমাণ) মোট ৪৪টি স্পটে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলায় মোট ২ হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮১১ টাকা কর আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা ২০১৫ সালের আয়কর মেলার চেয়ে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালে এই সময় ২ হাজার ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ ৮১৮ টাকা আয়কর আদায় হয়।
সাত দিনে মেলায় সেবা গ্রহণ করেছেন ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন, আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জন, নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৫৩ জন করদাতা।
এর মধ্যে ৭ম দিনে আয়কর মেলায় মোট কর আদায় হয়েছে ৪০১ কোটি ৯৫ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৪ টাকা। আয়কর রিটার্ণ দাখিল করেছেন ৪৪ হাজার ৬০৪ জন করদাতা। এ দিনে নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ৫ হাজার ৭২ জন ও সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৭৯ জন। এদিকে কর দেয়ার জন্য ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের উৎসাহিত করতে প্রতি বছর আয়কর মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৭ম বারের মতো আয়োজিত আয়কর মেলায় ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, ই-পেমেন্ট ও অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিলসহ কর সংক্রান্ত সব সেবা পাওয়া যায়।
‘সবাই মিলে দেবো কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ স্লোগানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের নিজস্ব ভবনে এই মেলার আয়োজন করা হয়। ৬২ হাজার বর্গফুটের বিশাল পরিসরে আয়োজিত এই মেলায় বুথ করা হয় ১০৯টি। করদাতাদের মেলায় আসার সুবিধার জন্য বিনা ভাড়ায় ৮টি সাটল বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বুথের সামনেই করদাতাদের উপচে পড়া ভিড়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও আয়কর রিটার্ন দাখিল করছেন করদাতারা। ফরম পূরণের জন্য করদাতাদের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ার-টেবিল খালি না থাকায় ফ্লোরে বসেই ফরম পূরণ করছেন অনেকে। মেলায় আগত করদাতাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা।
কাজের ব্যস্ততায় মেলায় আসতে পারেননি বনানীর আবু আলী। তাই মেলার শেষ দিনে সকাল সকাল এসেও দাঁড়াতে হয়েছে লাইনের শেষ মাথায়। তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) দিতে না পারলে হয়তো আর কবে দিতে পারবো বলতে পারিনা। শেষ দিনে মানুষের ভিড় থাকবে জেনেও কর দিতে এসেছি, এতেই ভালো লাগছে।’
মেলার আহবায়ক ও এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) আবদুর রাজ্জাক বলেন, সকাল থেকে করদাতারা রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। করদাতাদের সাহায্য-সহযোগিতায় আমাদের সহকর্মীরাও সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এবারের মেলায় মানুষের উপচে পড়া চাপ দেখে আমরা অভিভূত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ