মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

লাল গ্রহ মঙ্গল জয়

মাহমুদ শরীফ : এক.
৮ই মার্চ ২০১৪। রাত সোয়া ১২টা। নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘন্টা দেরিতে আকাশের শূন্যতায় উড়াল শুরু করলো মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের বিমান ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০। গন্তব্য ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে রাত শেষ হওয়ার পূর্বেই চীনের রাজধানী বেইজিং বিমান বন্দর। বিমানের পাইলট ক্রু ও যাত্রীরা বিদায় সম্ভাষন জানালো বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চোখ ধাঁধানো কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরকে। বিমান চলছে মোটামুটি মধ্যম গতিতে। ভূমি থেকে সাড়ে সাত হাজার ফুট উঁচুতে আকাশে প্রায় এক ঘন্টা পার করতে চলেছে বিমানটি। ইতিমধ্যেই হালকা নাস্তা পরিবেশন করে গেছে বিমানবালারা। ২৩৯ জন যাত্রী এবং বিমান কর্মীরা বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন। যাত্রীদের অনেকেই ঘুমে ঢুলছে। কেউ কেউ টিভিতে চোখ রেখে অনুষ্ঠান উপভোগে নিমজ্জিত। কয়েক মিনিট পর পর নিয়ম অনুযায়ী কুয়ালালামপুর বিমান বন্দর রাডারের মাধ্যমে বেতার বার্তা পাঠাচ্ছেন পাইলট জাহারি আহমেদ শাহ ও সহকারি পাইলট ফারিক আব্দুল হামিদ। রাডারের ২৬৫ নম্বর আধুনিক ল্যাবে কম্পিউটার স্ক্রীনের সামনে বসে সর্বক্ষণ বার্তাগুলো দেখে নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রকৌশলী আলী আহাদ।
 বিমান আকাশে উড়ার শুরু থেকেই তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন।  ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ এর তিন চাকা চীনের বেইজিং বিমান বন্দরের রানওয়ে না ছোঁয়া পর্যন্ত তিনি বসে থাকবেন নির্দিষ্ট কাজের জন্য। হঠাৎ কম্পিউটারের স্ক্রীনে রেড এলার্ট সংকেত দেখে চুমকে উঠলেন প্রকৌশলী আলী আহাদ। ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ এর সাথে তার সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাইলটদের পক্ষ থেকে পাঠানো কোন সংকেত নেই তার ইনবাকসে। তিনিও কোন মেসেজ সেন্ট করলে সেটা বার বার রিটার্ন আসছে। আলী আহাদ ভাবলেন, বিমানের ট্রান্সপন্ডারের  হয়তো সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি প্রথমে হালকা ভাবে নিলেও পরবর্তীতে শত চেষ্টা করেও তিনি যোগাযোগে ব্যর্থ হচ্ছেন। তৎক্ষণাৎ হেডফোনে বিষয়টি প্রকৌশলী আলী আহাদ অবগত করলেন উর্দ্ধতন অফিসার নিজাম আশফাককে। মুহূর্তের মধ্যেই সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লো সমগ্র বিমান বন্দরে। সকল আই টি কর্মকর্তারাও ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ এর সাথে প্রকৌশলী আলী আহাদ-এর মত ব্যর্থ, কোন প্রকার যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে পারলেন না কেউই। খবর পৌঁছে গেল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কাছে। এর পর যা হবার তাই হল, সারা বিশ্বের মিডিয়ায় প্রধান খবরের স্থানে বসে পড়লো ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ নিখোঁজ সংবাদ। তোলপাড় শুরু হলো সমগ্র বিশ্বজুড়ে। বিমান যাত্রী আর পাইলট-ক্রুদের বাড়ীতে কান্নার রোল বইছে। শুধু কয়েক ঘন্টা নয়, কেটে গেল কয়েকটি দিন-রাত। তিন সপ্তাহেও কোন খোঁজ হলোনা হারিয়ে যাওয়া জেট বিমান  ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ এর। অনুসন্ধানে লেগে গেছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। স্যাটেলাইট চিত্রের তথ্যানুযায়ী বার বার অনুসন্ধানেও ব্যর্থ সবাই। মাথা নিঁচু করে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বসে আছেন। কোন জবাব নেই যেন তাদের মুখে। বিশ্বজুড়ে বিমান নিখোঁজের বিষয়টি বিশ্লেষণ হতে লাগলো বিভিন্ন ভাবে। স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে পশ্চিমা শক্তিশালী দেশের পক্ষ থেকে বলা হলো- সন্ত্রাসবাদীরা বিমানটি ছিনতাই করেছে। লুকিয়ে রেখেছে আফগানিস্তান কিংবা ইরানের কোন বিমান ঘাঁটিতে। একটি রুশ দৈনিক তো সংবাদ প্রকাশ করে হৈচৈ ফেলে দিলো- ‘নিখোঁজ বিমান কান্দাহারে সব যাত্রীই বেঁচে আছেন‘ ! ‘সেকোভোস্কী কমসু মুলিতস‘  নামের দৈনিকটি তার খবরে বলেছে- তালিবানরা চীন ও আমেরিকা সরকারকে ভয় দেখানো কিংবা আলোচনার জন্য এই বিমান ছিনতাই করে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নামিয়েছে। ভেঙ্গে গেছে বিমানের পাখা.......।  কেউ বললো : ছিনতাই নয়, হয়তো কোথাও বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কোন কোন দেশ বিমানের ধ্বংসাবশেষ সাগরে ভাসছে বলেও কৃতিত্ব জাহির করতে কসরত চালালো। কিন্ত ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কেউই সঠিক সমাধান দিতে সমর্থ হলোনা। আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে তল্লাশি কার্যক্রম আরো জোরদার করা হলো। এগিয়ে এলো বিশ্বের ২৬টি  উন্নত প্রযুক্তির দাবিদার দেশ। দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের ২ লাখ ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে আকাশ ও জলপথে ১৩টি বিমান এবং ১১টি জাহাজ নিয়ে তল্লাশি চালানো হলেও কোন ক্লু পাওয়া গেল না। বিমান উদ্ধার কাজে বিশ্ব বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান তিন তিনটি ‘অরিয়ন‘ বিমানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, চীন ও  জাপান বিমান বাহিনী অংশ নিলে তাদেরও ব্যর্থতায় মাথা নিচু। প্রযুক্তিবিদরা স্যাটেলাইটের সর্বাধুনিক ওয়াই ফাই সুবিধাকে শেষ ভরসা হিসেবে ট্রাকিং করলেন। অবশ্য অষ্ট্রেলিয়ান জাহাজের সিগন্যাল ডিরেক্টরে তারা ভিন্ন ধরনের কিছু শব্দ তরঙ্গ শুনতে পাওয়া গেল। কিন্ত সেটাও ফ্লাইট - এম এইচ-৩৭০ এর কোন হদিস দিতে না পারায় তল্লাশি অনেকটা গুটিয়ে নেওয়া হলো। কোন দেশই তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে বিন্দুমাত্র প্রমাণ দিতে না পারায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিমান হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি আরো ধুম্রজালে আটকে গেল। বিমান উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাথা নিচু, মুখে যেন চুন কালি পড়লো তাদের।  (চলবে)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ