শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিলাল হোসাইন নূরীর ছড়া-কবিতার বই নতুন পৃথিবী

আবদুল হালীম খাঁ : তরুণ কবি বিলাল হোসাইন নূরীর তারুণ্য দীপ্ত শিশু-কিশোর কবিতা ছড়ার বই ‘নতুন পৃথিবী’ এক অনাবিল আনন্দের সংবাদ নিয়ে এসেছে কাব্যাঙ্গনে। তিন ফর্মার বইটি নানা স্বাদের নানা বিষয়ে কারুকার্যে শোভিত ত্রিশটি নিটোল ছড়া কবিতায় সমৃদ্ধ হয়েছে। প্রতিটি রচনার সাথে রয়েছে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো নানা রঙের সুদৃশ্য ছবি। ছড়াগুলো নিপুণ ছন্দ উপমা ও লাবণ্যে ঐশ্বর্যময় হয়ে উঠেছে। পড়া শুরু করলে শুধু ছোটদের নয়, বড়দেরকেও ছন্দের দোলনায় দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে যায় শেষ পর্যন্ত এক অনির্বাণ আকর্ষণে। বিলালের প্রতিটি ছড়াই উল্লেখ করার মতো :
মা যে আমার চাঁদের মতো
মেয়ে-
চোখের তারায়
স্বপ্ন আছে
ছেয়ে-।    [মা, পৃষ্ঠা-২২]

এ রকম নিটোল ছন্দে আঁকা তাঁর ঈদের ছবি :
ঈদ মানে তো
খুশির বাগান
ফুলপাখিদের মেলা,
আকাশ নামের
নীল সাগরে
নতুন চাঁদের ভেলা। (ঈদ, পৃষ্ঠা-৩০)
চরিত্রগত দিক থেকে ছড়া দু’শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এক. দুর্বোধ্য ও অর্থহীন ছড়া। যেমন- আগডুম বাগডুম ইত্যাদি। দুই. সুস্পষ্ট অর্থবোধক ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন ছড়া ও কিশোর কবিতা। যেমন: আমি হবো সকাল বেলার পাখি, বর্ষার ঝর ঝর ইত্যাদি।
বিলাল হোসেন নূরীর কবিতা :
কিশোর মানেই সাহস নদীর
উপচে পড়া ঢেউ-
কিশোর তরুণ যা পারে, তা
আর পারে না কেউ।
ভাঙতে পারে বাধার প্রাচীর
লৌহ শেকল, আর
সাত মহাদেশ, সাত সমুদ্দুর
পার হয়ে যায় পার।
[কিশোর, পৃষ্ঠা-৩৬]
বিলালের একেকটি ছড়া যেন একেকটি নতুন জগত। মনের ইচ্ছেটিকে নানাভাবে নানা বিষয়ের সাথে তুলে ধরেছেন :
নদী-
তোমার মতো সামনে চলার
সাহস পেতাম যদি- [নদী, পৃষ্ঠা-১৭]

সম্প্রতি আমাদের শিশু সাহিত্যের প্রতি অনেক নবীন প্রবীণ কবি সাহিত্যিক মনোযোগী হয়েছেন। লিখছেন ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। এটি অবশ্যই একটি সুসংবাদ। শিশু সাহিত্য হয়ে উঠেছে এক অপরূপ আনন্দের জগত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বিভ্রান্ত করার জন্যেও এক শ্রেণির লেখক তাদের ছড়া, কবিতা, গল্প-উপন্যাসে ভরে দিচ্ছেন বিষ! জাতীয় আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা থেকে ছোটদের বিচ্যুত করে অন্ধকারের দিকে টেনে নেয়ার আয়োজনও কম হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা খুব জরুরি।
ছোটদের মন-মস্তিষ্ক আদর্শের ছায়ায় সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্যে ভালো ছড়া কবিতা বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। প্রিয় নবী করীম (সা.) বলেছেন: তোমাদের সন্তানদের কবিতা শেখাও। তাহলে তাদের কথা মিষ্টি ও সুরেলা হবে।’
নূরী নতুন পৃথিবীতে শুধু কারুকার্যময় নিটোল ছড়াই লিখেননি এবং স্বদেশের রূপ সৌন্দর্য্যরে মনোমুগ্ধকর ছবিই আঁকেননি, স্বদেশের বেকার ভাসমান শ্রমজীবী মানুষের অভাব দুঃখ-কষ্টের কথা লিখতে ভোলেননি। তার ছড়ায় ওঠে এসেছে রিকশাচালকের কথা, ইট ভাঙ্গা শ্রমিকের কথা, কলকারখানার শ্রমিকদের কথা, যাদের ঘরবাড়ি নেই, গায়ে কাপড় নেই, পেটে ভাত নেই, সেই অসহায় মানুষের প্রতি কবির অপরীসীম দরদ। এদের নিয়ে কবি বিলাল হোসেন নূরী রচনা করেছেন ‘ছিন্নমুকুল’ কবিতা। কবিতাটি তার দরদি হৃদয়ের ছবি ফুটে উঠেছে :
রিকসা চালায় দুঃখী ছেলে
কিংবা ঠেলে ভ্যান-
এই শিশুদের ভাগ্যে তবু
ভাত জোটে না ক্যান?
[ছিন্নমুকুল, পৃষ্ঠা-৩৯]
যারা ছড়া কবিতা ভালোবাসেন  বিলাল হোসাইন নূরীর ‘নতুন পৃথিবী’ তাদের ভালো লাগবে এবং আদৃত হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ