বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আলেপ্পোর আড়াই লাখ মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে বাশার বাহিনী

২৫ অক্টোবর, দ্য ইকোনমিস্ট : সিরিয়ার আলেপ্পোয় বিদ্রোহী-অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে আড়াই লাখের বেশি মানুষের বাস। গোলাবারুদের ঝঞ্ঝার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তারা। গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বিদ্রোহীরা বলছে, নগরটাকে ধ্বংস আর সেখানকার মানুষকে শিকড়সুদ্ধ উপড়াতেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এই বিদগ্ধ নীতি বেছে নিয়েছেন। সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বাশারের অনুগত সেনারা। সেখানে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের বাস।
বাশারকে এতে অস্ত্র আর কৌশল দিয়ে সহায়তা করছে তার মিত্রদেশ রাশিয়া। সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নিজ নিজ নীতিতে নাছোড় থাকার কারণে তা সফল হয়নি। নগরের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টির মতো বিমান ও বোমা হামলা চলছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিদ্রোহীদের সর্বশেষ এই শক্তিশালী ঘাঁটি দখলে নিতে গত মাসের শেষ সপ্তাহে প্রতিদিন ২৫০টি পৃথক হামলা চালানো হয়েছে। শিয়া সম্প্রদায় প্রধান ইরাক, ইরান ও লেবানন-সমর্থিত সরকার গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বিভক্ত শহরটিতে আঘাত হানে। পরিস্থিতি এখন গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন পূর্ব আলেপ্পোর অল্প কয়েকজন শিশু বিশেষজ্ঞের একজন। নিজেকে তিনি ডা. হাতেম বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেক শিশু মারা গেছে। এখানে চিকিৎসক, খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতি রয়েছে। সবকিছুই এখন ভয়াবহ। মনে হচ্ছে যেন তারা বিশ্ব থেকে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে। সাদা হেলমেট পরা নাগরিক প্রতিরক্ষা গোষ্ঠীর একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আবারও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৪৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ হাজার ৬০০ জন। সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, পূর্বাঞ্চলে চিকিৎসাসেবা পাওয়া আহত ব্যক্তিদের অর্ধেকই শিশু।
সিরিয়ায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে রুশ সেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে বেশির ভাগই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর মতো শক্তিশালী এবং ব্যাপক প্রাণসংহারী।
হামলার সংক্ষিপ্ত বিরতির সময় ঘরবাড়ি ও আশ্রয়স্থল থেকে বেরিয়ে খাবার ও ওষুধ খুঁজে বেড়ায় যুদ্ধকবলিত লোকজন। কিন্তু বেশির ভাগ জিনিসই থাকে দুষ্প্রাপ্য। খাবারের দাম থাকে অতি চড়া। আলেপ্পোর একজন বাসিন্দা বলেন, ‘প্রতিদিন আমি যখন খাবারের খোঁজে বাসা থেকে বের হই, মনে হয় এটাই হয়তো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটা আমাদের দেখা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। নতুন অস্ত্রগুলো এমন যে আমাদের পায়ের নিচে মাটি কাঁপতে থাকে। মনে হয় যেন এটাই পৃথিবীর শেষ দিন। অনেকেই ভূগর্ভস্থ ঘরে আশ্রয় নেয়।’
কয়েক মাস ধরে আলেপ্পোর দিকে ধীরে ধীরে শক্ত থাবা বসানো হচ্ছে। খাবারের এত অভাব দেখা দিয়েছে যে অনেক মানুষ দিনে মাত্র একবার খেতে পারছে। হাসপাতালগুলোয় আহত ব্যক্তিদের উপচে পড়া ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপজ্জনকভাবে কমে আসছে ওষুধের সরবরাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মাত্র ৩৫ জন চিকিৎসক এবং ২৫টি মেডিকেলসুবিধা নিয়ে শহরটি সম্পূর্ণ ধ্বংসের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আলেপ্পোতে কোনো চিকিৎসাসহায়তাও পৌঁছাতে পারছে না।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বাশার অনেক বেশি নিশ্চিন্তে আছেন। গৃহযুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী তিনি। পুতিনের মতো শক্তিমান বন্ধু পাশে থাকলে এমন আশা তিনি করতেই পারেন। আর এই যুদ্ধের শুরুতে বাশারকে উৎখাতে ওবামা ও তাঁর পশ্চিমা সহযোগীরা যেভাবে কোমর কষে দাঁড়িয়েছিলেন, সে উদ্যমেও এখন ভাটা পড়েছে। কারণ ওই রাশিয়া। তার মতো সেয়ানের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে সাফল্য আসুক বা না আসুক, মাশুলটা যে বড্ড বেশি হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ