শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মাদক ও সন্ত্রাসের অশুভ পরিণতি

আশিকুল হামিদ : অত্যন্ত ভীতিকর হলেও এটা আর মোটেই নতুন খবর নয় যে, দেশে এখন বিভিন্ন নেশা সামগ্রীর ছড়াছড়ি চলছে। এসব কিনতে পাওয়া যাচ্ছে পানের দোকানেও। রাজধানীতে তো বটেই, প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহর থেকে গ্রামের হাট-বাজারে পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নেশার সামগ্রী। বাস্তবে নেশার বিস্তার ঘটে এসেছে স্বাধীনতার পর থেকেই। বাজারে এসেছে নতুন নতুন নামের সামগ্রী। গাঁজা ও ভাঙের মতো সুদূর অতীত থেকে চলে আসা সামগ্রীগুলো আজকাল বলতে গেলে অচল হয়ে পড়েছে। পরিবর্তে পালাক্রমে এসেছে নতুন নতুন সামগ্রী।
এই প্রক্রিয়ায় ভারতে তৈরি ফেন্সিডিলের পর প্রথমে শুনতে হয়েছে হেরোইনের নাম। এরও প্রধান সরবরাহ এসেছে ভারত থেকেই। তারপর বছর আট-নয় আগে হঠাৎ শোনা গেছে ইয়াবার নাম। নেশার জন্য শুধু নয়, শরীরের অন্য কিছু বিশেষ চাহিদা পূরণের জন্যও ইয়াবা নাকি তুলনাহীন! ইয়াবা তাই বাজার পেয়েছে রাতারাতি, ‘জনপ্রিয়’ও হয়ে উঠেছে! ইয়াবার চালান এবং এ সম্পর্কিত প্রচারণার সঙ্গে ‘ভাই’ ধরনের বিশিষ্ট কোনো কোনো ব্যবসায়ী এবং তার ভাতিজাদের নামও জড়িয়ে পড়েছিল। অভিযুক্তদের কেউ কখনো লাট সাহেবের মতো জেলখানায় থাকেন, কখনো আবার বেরিয়ে এসে মুক্ত হাওয়া সেবন করেন। সরকার, পুলিশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ সম্পর্কেও শোনা যায় মাঝেমধ্যেই। সম্ভবত সে কারণেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেন তারা। গ্রেফতারের নামে নাটকও নাকি তাদের উদ্যোগেই সাজানো হয়। এজন্যই কারো কখনো শাস্তি হয়েছে বলে শোনা যায় না।
বিষয়টি অনেক পুরনো এবং সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে বিশেষ করে ইয়াবার ব্যাপক চোরাচালানের পরিপ্রেক্ষিতে। ইদানীং ক’দিন পরপরই চোরাচালানের অবৈধ পথে দেশে আনা ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। সংখ্যা বা পরিমাণের দিক থেকে এসব চালান চমকে ওঠার মতো। এই তো কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তীরে ছোট একটি নৌকা থেকে কোস্ট গার্ড দুই লাখ পিস ইয়াবা আটক করেছে, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ের একটি বড় চালান হলেও এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। প্রতি মাসেই বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে আটক হচ্ছে লাখ লাখ ইয়াবার চালান। সব চালানই আসছে মিয়ানমার থেকে। এত অভিযান এবং ধরা পড়া সত্ত্বেও চোরাচালানীরা কিন্তু থেমে নেই। তারা বরং নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করে চলেছে। যেমন বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের বরাত দিয়ে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, এতদিন যেখানে সড়ক পথে চোরাচালান করা হতো এখন সেখানে করা হচ্ছে নৌপথে। নতুন নতুন রুট বেছে নিচ্ছে চোরাচালানীরা। তারা নতুন বিভিন্ন রুট আবিষ্কারও করছে। বড় কোনো জাহাজে পাঠানোর পরিবর্তে তারা পাঠাচ্ছে ইঞ্জিন চালিত ছোট ছোট নৌকায় এবং ট্রলারে করে, যাতে সহজে সীমান্তরক্ষীদের চোখে না পড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, নাফ নদীর তীরবর্তী কোনো একই বিশেষ স্থানে বারবার পাঠানোর পরিবর্তে সাবরাং, মোগপাড়া এবং শিকদারপাড়ার মতো বিভিন্ন এলাকায় তারা চালান পৌঁছে দিচ্ছে। বেশিরভাগ চালান আসছে নাফ নদী দিয়ে।
প্রসঙ্গক্রমে মিয়ানমার সরকারের নীতি ও ভূমিকাও তীব্রভাবেই সমালোচিত হচ্ছে। কারণ, বিজিবির সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রতিটি সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকেই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী চোরাচালান বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গিকার করেছে। দেশটির রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু চোরাচালান বন্ধ করা দূরে থাকুক, মিয়ানমার বরং ইয়াবার কারখানা স্থাপনের ব্যাপারেই অনেক বেশি উৎসাহ দেখিয়ে চলেছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নাফ নদীর অপর পাশে অবস্থিত মংদাও নামের একটি মাত্র শহরে অন্তত ৩৭টি ইয়াবার কারখানা স্থাপিত হয়েছে। কারখানাগুলোতে উৎপাদনও চলছে রাতদিন। বাংলাদেশে প্রধানত এসব কারখানায় তৈরি ইয়াবাই পাঠানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি সর্বশেষ খবরও উল্লেখ করা দরকার। সে খবরটি হলো, খোদ রাজধানী ঢাকার ভেতরেই নাকি ইয়াবার কারখানা স্থাপন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকি সকলে রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানা যাচ্ছে গণমাধ্যমের নানা খবরেও। যেমন ঢাকার একটি দৈনিকে ক’দিন আগে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ইয়াবার পাশাপাশি নারী চোরাচালানও লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। দৈনিকটির শিরোনাম ছিল, ‘যাচ্ছে নারী, আসছে ইয়াবা’। অর্থাৎ বিশেষ গোষ্ঠীটি বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার করছে এবং ওই নারীদের বিনিময়ে দেশে নিয়ে আসছে ইয়াবা। মার্কিন ডলার বা ব্রিটিশ পাউন্ড নয়, এখানে কেনা-বেচার জন্য বাংলাদেশের নারীরা মূল্য তথা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ এক অতি ভয়ংকর খবরই বটে। রিপোর্টে একজন ‘ভাতিজার’ নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত এই ‘ভাতিজা’ উত্তরা, রামপুরা, বনশ্রী, নিকেতন, বনানী, গুলশান, বারিধারা ও নিকুঞ্জসহ রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকায় তার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। হোটেল ছাড়াও অসংখ্য আবাসিক বাড়ি ভাড়া নিয়ে সে ব্যবসা চালাচ্ছে।
তার এ ব্যবসাতেও যুবতী নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশী-বিদেশী ‘গেস্ট’দের এই নারীরা প্রথমে ইয়াবা দিয়ে ‘আপ্যায়ন’ করছে। এরপর আসছে যৌন ব্যাভিচারের পালা। গোপনে ও প্রকাশ্যে ভিডিও করে এসব নারীকে রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করছে ওই ‘ভাতিজা’। যে নারীরা ইয়াবার টানে একবার ‘ভাতিজা’র শিকার হয়েছিল তাদের পক্ষে আর তার জাল থেকে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারা বরং সব জেনেও ‘ভাতিজা’র নির্দেশ পালন করছে বাধ্য হয়ে। না হলে বাবা-মা ও স্বজনদের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে ‘ভাতিজা’। এভাবে শত শত যুবতী নারী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যাদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিভিন্ন ভার্সিটির ছাত্রী। এদেরই অনেককে আবার ইয়াবা আমদানির জন্য পাচারও করা হচ্ছে। পুরো কাজটিতে অবশ্য ওই ‘ভাতিজা’ একাই জড়িত নেই, তার পেছনে রয়েছে অনেক রথি-মহারথি। 
বলা বাহুল্য, সবকিছুর জন্য দায়ী আসলে ইয়াবার নেশা। ইয়াবার এই মারণ নেশার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সমগ্র জাতি। রিকশাওয়ালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পর্যন্ত সবাই ইয়াবার কবলে পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। ছাত্রী এবং মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। তারাও ছেলেদের মতোই নেশা করছে। ইয়াবার দাম যেহেতু সাধারণ মানুষের নাগালের অনেক বাইরে সেহেতু টাকা যোগানোর জন্য নেশাখোররা চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর পথে পা বাড়িয়েছে। অনেকে এমনকি নিজেদেরই বাবা-মায়ের অর্থ ও সোনা-গহনা চুরি করছে। এভাবে বাংলাদেশের পুরো সমাজেই পচন ধরেছে। সমাজের এই ভয়াবহ পচনের ব্যাপারে দৃষ্টান্তও কম জানা যাচ্ছে না। দেশে অবিশ্বাস্য হারে ও গতিতে বেড়ে চলা হত্যাসহ নানামুখী ভয়ংকর অপরাধের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন। অপরাধের কারণ ও ধরনও বিস্ময়কর। সাম্প্রতিক কিছু অপরাধের ঘটনা উল্লেখ করা যাক। যেমন মাস দুই আগে রাজশাহীর নতুন বুধপাড়া এলাকায় মাত্র সাত বছরের পুত্রকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে তার মা। আবার চট্টগ্রামে ঘটেছে উল্টো রকমের ঘটনা। সেখানে ২১ বছর বয়সী একজন ছেলে তার মাকে হত্যার পর নিজে চেষ্টা করেছে আত্মহত্যা করার। ওদিকে ফরিদপুরে অতি তুচ্ছ কারণে বাবা-মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে ১৭ বছর বয়সী ছেলে। এ বছর এসএসসি পাস করা ওই ছেলে বাবা-মায়ের কাছে একটি মোটর সাইকেল কিনে দেয়ার আবদার করেছিল। কিন্তু বাবা রাজি হননি। সেই রাগে-দুঃখে ছেলে সারা ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল বাবা-মাকে হত্যা করা। এতে শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে মারা গেছেন বাবা। মায়ের অবস্থা ছিল আশংকাজক।
ওদিকে একই সময়ে কুড়িগ্রামের রৌমারিতে নিজের বাড়িতে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে স্বামী-স্ত্রীকে। সেখানে স্ত্রীকে গলা টিপে এবং স্বামীকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেছে দুর্বত্তরা। রংপুরে মাত্র দুই বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাদারিপুরের কালকিনীর এক গ্রামে একজন স্কুল ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক বখাটে যুবক। কারণ, তার প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেয়নি ওই স্কুল ছাত্রী। কিছুদিন আগে রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকেও একই প্রেমের কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে। মাদারিপুরের ঘাতক যুবক ছিল কলেজ ছাত্র আর সুরাইয়ার ঘাতক হিসেবে দেখা গেছে পোশাক তৈরির দোকানের এক দর্জিকে। সে অভিজাত স্কুলের ছাত্রীর কাছে প্রেমের প্রস্তাব রেখেছিল। রাজি না হওয়ায় মেয়েটির ওপর হামলা চালিয়ে বারবার ছুরিকাঘাত করেছে ওই দর্জি। সবই ঘটেছে দিনের বেলায়। পরিণামে মৃত্যু হয়েছে ওই ছাত্রীর। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। পুলিশ ঘাতক দর্জিকে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করেছে। ক’দিন আগে বরিশালে এক ডোবা থেকে একজন মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেও সম্ভবত একই প্রেমের কারণে প্রাণ হারিয়েছে।
অপরাধের বৈচিত্র্যও মানুষকে হতবাক করছে। যেমন রাজধানীর বনানী এলাকায় ভাড়া চাওয়ার কারণে একজন রিকশাচালকের পায়ে গুলী করেছে একজন যুবলীগ নেতা। গভীর রাতে ওই নেতা তার এক সঙ্গীকে নিয়ে রিকশায় চড়েছিল। ভাড়া না দিয়ে চলে যেতে থাকলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল রিকশাচালক। তারই জবাব দেয়া হয়েছে পিস্তলের গুলী দিয়ে! আরেক ঘটনায় এক যুবলীগ নেতাকে গুলী করে হত্যা করেছে তার প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। এটা ঘটেছে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায়। কারণ ছিল প্রভাব বিস্তার নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। মাত্র দু’ সপ্তাহের মধ্যে একদিকে সিলেটে কলেজ ছাত্রী খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে গুরুতররূপে আহত করেছে ছাত্রলীগের এক সন্ত্রাসী নেতা, অন্যদিকে রাজধানীর মিরপুরে দুই কলেজ ছাত্রীর ওপর হামলা চালিয়েছে বখাটেরা। একই দিন মুন্সিগঞ্জে হামলার শিকার হয়েছে একজন স্কুল ছাত্রী। 
এভাবেই লাফিয়ে বেড়ে চলেছে নানা ধরনের অপরাধ। আগে চুরি-ডাকাতি করতেও চোর-ডাকাতেরা দশবার চিন্তা করতো। এখন পিস্তল বা রিভলবারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তো বটেই, এমনকি ছুরি ও চাপাতি দিয়ে গলা কেটে ফেলতেও সামান্য দ্বিধা করা হচ্ছে না। ভয় তো পাচ্ছেই না খুনী ও সন্ত্রাসীরা। এমন ভয়ংকর অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী এবং মানবাধিকার কর্মীসহ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একদিকে আন্তর্জাতিকতার নামে টেলিভিশনের মাধ্যমে অপরাধমুখী বৈশ্বিক সংস্কৃতির এবং ইয়াবা ধরনের মারণ নেশার জোয়ার বইয়ে দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে প্রায় কোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই বিচার ও শাস্তি না হওয়ায় প্রশ্রয় পাচ্ছে অপরাধীরা। মানুষের, বিশেষ করে খুনী-সন্ত্রাসী এবং অপরাধীদের মনে এমন এক ধারণা বাসা বেঁধে বসেছে যেন কোনো অপরাধের জন্যই কাউকে শাস্তি পেতে হবে না। ভীতি ও উদ্বেগের কারণ হলো, বাস্তবেও খুব কম অপরাধীরই শাস্তি হচ্ছে। তারও আগে গ্রেফতার করা না করা নিয়ে চলছে টালবাহানা। এ ব্যাপারে অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় বড় ভূমিকা রাখছে। সে যদি ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে পুলিশ সহজে তার বিরুদ্ধে তৎপর হয় না। হলেও এবং লোক দেখানোর জন্য তাকে গ্রেফতার করলেও মামলা এমনভাবেই সাজানো হয় যাতে সে সহজেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। বেরিয়ে আসেও তারা। যেহেতু কোনো শাস্তি পেতে হয় না সে কারণে বাইরে এসেই তারা নতুন নতুন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে গ্রেফতার-জামিন এবং আবার অপরাধ ও গ্রেফতার-জামিনের ঘটনা চক্রাকারে ঘটতে থাকে। মূলত এজেন্যই অপরাধ কেবল বাড়ছেই। অপারাধের ধরনও কম ভীতিকর নয়। মা নিজের শিশুকে হত্যা করছে, ছেলে একটা মোটর সাইকেলের জন্য পিতা-মাতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করছে। ওদিকে প্রেমের নামেও চলছে ভয়ংকর হত্যাকান্ড। শিকার হচ্ছে এমনকি সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীরা পর্যন্ত।
বলা দরকার, কোনো সভ্য সমাজে এভাবে অপরাধ ছড়িয়ে পড়তে পারে না। অপরাধ ছড়িয়ে পড়তে দেয়াও হয় না। অন্যদিকে বাংলাদেশে সবই সম্ভব হচ্ছে প্রধানত সরকারের অবহেলার কারণে। সরকারের দায়িত্ব ছিল পুলিশ এবং আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত অন্য সব বাহিনীকে এমনভাবে তৎপর করে তোলা, যাতে কোনো অপরাধীই কারাগারের বাইরে না থাকতে পারে। রাজনৈতিক পরিচিতি এবং বিত্ত-বৈভবের বিষয়কেও আমলে না নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সবই ঘটছে উল্টো নিয়মে। এর ফলে পুরো সমাজেই পচন ধরেছে। এখনই যদি প্রতিহত না করা যায় তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে বর্তমান প্রজন্ম। আগামী প্রজন্মও তাদের অনুসরণ করবে। ফলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কোনো ক্ষেত্রেই তারা সামান্য অবদান রাখতে পারবে না। তেমন মেধা ও যোগ্যতাই থাকবে না তাদের। একই কারণে ইয়াবাসহ মাদক সামগ্রীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে দরকার সর্বাত্মক অভিযান চালানো। ইয়াবার চোরাচালান প্রতিহত করতে হবে যে কোনো পন্থায়। চাল-ডাল ধরনের পণ্যের মতো যেখানে-সেখানে ইয়াবা যাতে বিক্রি করা সম্ভব না হয় এবং ছাত্রছাত্রীসহ নেশাখোররারা যাতে সহজে কিনতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে সুচিন্তিতভাবে। নেশার ক্ষতি সম্পর্কে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালাতে হবে গণমাধ্যমে। ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গেও কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোাগের মাধ্যমে দেশ দুটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা ইয়াবা ও ফেন্সিডিল জাতীয় পণ্য উৎপাদনকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং নিষিদ্ধ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যাতে কোনো নেশার সামগ্রী ঢুকতে না পারে। অন্তরালের সকল ‘ভাই’ ও ‘ভাতিজা’কে গ্রেফতার এবং বিচারের ব্যাপারে তৎপর হতে হবে সততার সঙ্গে। বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত সম্পন্ন করে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে কেউ কোনো অপরাধের চিন্তাও করার সাহস না পায়। বলা দরকার, অনতিবিলম্বে দমনমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে ইয়াবা ও নারী পাচারের পাশাপাশি হত্যা ও অন্য কোনো অপরাধও বন্ধ হবে না বরং দিন দিন আরো বেড়ে যাবে। আর তেমন অবস্থা দেশ ও জাতির জন্য অশুভ পরিণতির কারণ হয়ে উঠবে। অমন পরিণতি অবশ্যই এড়ানো দরকার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ