বঙ্গবন্ধুর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থাকলে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে বাংলাদেশের সমর্থন দেওয়া উচিত নয় ----ডা. জাফরুল্লাহ
স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধুর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থাকলে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে বাংলাদেশের সমর্থন দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে এবং নিপীড়কদের বিপক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশেরর মানুষের ওপর ’৭১ সালে যে রকম অত্যাচার করা হয়েছে কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বর্তমানে একই রকম অত্যাচার করা হচ্ছে বলে জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাব আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. এমাজ উদ্দিন আহমদ, গণস্বাস্থকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ, ড্যাব মহাসচিব ড. জাহিদ হোসেনসহ বক্তব্য রাখেন। ড্যাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক ভিসি ড. এম এ হাদীর ৯ম মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাব আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা সবাই পাকিস্তানকে জঙ্গির মূল ঘাঁটি বানাই। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে পাকিস্তানের চেয়ে ইন্ডিয়াতে সন্ত্রাসী-জঙ্গির ঘাঁটি বেশি। তিনি বলেন, এগুলো কোনটা মাওবাদী নামে। আবার কোনটা উলফার নামে। কিন্তু ভারত অনেক বিষয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ভারতে এখন গরুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু একজন ব্রাহ্মণ লেখকের লেখা ‘হোলি কাউ’ নামের বইয়ে পড়েছি, মোদির পূর্ব পুরুষ গো-মাংস খেতেন। এমনকি মোদিও লুকিয়ে লুকিয়ে হয়তো খেয়েছেন। তিনি এও বলেন, গৌতম বুদ্ধও গো-মাংস ভক্ষণ করেছেন। তিনি গরুর মাংসের পরিবর্তে শুকরের মাংস খেয়ে মারা গেছেন বলেও মন্তব্য করেন এই বুদ্ধিজীবী।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে বাংলাদেশের সমর্থনের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা থাকলেও কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন করা উচিত না। কারণ বঙ্গবন্ধু সব সময় বলে গেছেন আমরা সব সময় স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে রকম অত্যাচার করা হয়েছে; কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে তেমনি আচরণ করা হচ্ছে বলেও জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এম্বুলেন্স চাপায় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় ডাক্তারদের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ না করায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সেইসঙ্গে ডাক্তার হাদির মত একজন গুণী মানুষের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পিজি হাসপালে স্মরণ সভা না করারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে দেশ গুণিজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারে না তাদের জন্য অপমান অপেক্ষা করে। ডা. জাফরুল্লাহ সিলেটে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত খাদিজার চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে না হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরো চিকিৎসা খাত প্রাইভেটাইজেশনের দখলে চলে গেছে। ওষুধের দাম বেড়ে যাচ্ছে অথচ কেউ প্রতিবাদ করছে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের আগমনে যেসব চুক্তি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে দুই দেশের জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তাবায়ন হবে। তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এসেছেন। ভবিষ্যতে আরও অনেকে আসবেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ম্যাসেজ দিয়েছে। চীন জানিয়েছে বাংলাদেশের সমস্ত সংকটে পাশে থাকবে। এছাড়া দেশ যে অনির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে চলছে সেই বিষয়েও স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষে বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হওয়ার কারণে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করা হচ্ছে। এই সেতুর প্রাথমিক বাজেট ৭ হাজার কোটি টাকা থাকলেও পরবর্তীতে তা ৩২ হাজার কোটিতে উন্নীত হয়। এসব টাকা জনগণের পকেট থেকে যাবে। এই বাজেট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন ড. মোশাররফ।
বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে। যাতে আমরা কারো নিচে পড়ে না যাই। আমাদের কূটনীতি এবং সমুদ্রক্ষেত্রে জনশক্তি তৈরি করার ওপর জোর দেন এই প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে না পারলে দেশের সমূহ ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করেন এমাজউদ্দিনআহমেদ।