ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

গুলশানের মত ঘটনা আবার ঘটতে পারে বলে ই-ইউ দূতের আশংকা

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদু বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘খুবই মারাত্মক’ উল্লেখ করে বলেছেন, গুলশান হামলার পরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এখনো কাটেনি। এমন হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে আরও ঘটতে পারে।
এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত মায়াদু বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে এই উদ্বেগের কারণে ঢাকায় তাদের মিশনে যেসব বিদেশী কর্মকর্তারা কাজ করেন তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যদের ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন, অন্যরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়েনের সদর দপ্তর থেকে এরই মধ্যে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ করবেন।
মি: মায়াদু বলেন, আমাদের কিছু সহকর্মী এরই মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকিরা এখনো অপেক্ষা করছে কি সিদ্ধান্ত আসে সেটি দেখার জন্য। আমি জানি অনেক বিদেশী মিশন তাদের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশ ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। আগস্টের মাঝামাঝি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো খুলতে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি ইউরোপেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তারা কি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন? এই প্রশ্নে মি: মায়াদু বলেন, অবশ্যই আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। জুলাই মাসের এক তারিখে ১৭জন বিদেশীকে চোখের সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এরপরে কেউ যদি বলে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি, তাহলে সেটি নিহত এবং তাদের পরিবারকে অপমান করার মতো।

গুলশানের রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশী হত্যার ঘটনায় বিদেশীদের মধ্যে প্রচণ্ড আতঙ্ক তৈরি হয়েছে
রাষ্ট্রদূতের বর্ণনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি ‘খুবই মারাত্মক’। তিনি বলেন, আমার ধারনা এখানে সব স্টেক হোল্ডারদের একই ধারনা। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। একই ধরনের ঘটনা ভিন্নভাবে আবারো ঘটতে পারে। সুতরাং এটা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়।
রাষ্ট্রদূত মায়াদু মনে করেন, বিদেশীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ইস্যুটি জুলাই মাসের ১ তারিখে তৈরি হয়নি। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গুলশানে ইটালিয় নাগরিক চেজারে তাভেলার হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে প্রথম উদ্বেগ তৈরি হয়। এরপর রংপুরে জাপানি উন্নয়ন কর্মী কোনিও হোশিকেও একইভাবে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, তখন যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, সেটি যথেষ্ট মনে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সম্ভাব্য বিপদের দিকে কোন মনোযোগ দেয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকারের কাছে তাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কী ধরনের নিরাপত্তা চান সেটিও সরকারের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে। মি: মায়াদুর বর্ণনায় এখন ঢাকার তথাকথিত কূটনৈতিক এলাকা অনেক সুরক্ষিত এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তাহলে কেন তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না? মি: মায়াদু বলেন অতিদ্রুত অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও নিরাপত্তা নিয়ে তাদের পুরোপুরি আস্থা ফিরে আসছে না।
মি: মায়াদু বলেন, আমরা শুধু কূটনৈতিক পাড়ার কথা বলছিনা। আমরা পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা প্রতিটি বাংলাদেশীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ গত দেড় বছরে সন্ত্রাসী হামলায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত পঞ্চাশ জন নিহত হয়েছে।
তিনি মন্তব্য করেন, সরকারকে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে এবং ঘটনার ভয়াবহতা স্বীকার করতে হবে। এটাকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ