বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের পরিণতি হবে ভয়াবহ

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার সাঁড়াশি অভিযানের পর বিএনপিকে দমনে নতুন ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, কোনো লাভ হবে না। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না, বিএনপিকে এভাবে দমন করা যাবে না। এই ভয়ঙ্কর পথ থেকে সরে আসুন। এই আগুন নিয়ে খেলবেন না। বার বার বলছি, ফিরে আসুন। অন্যথায় এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে গণতন্ত্রের ‘জানালা-দরজা’ খুলে দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের মহানগর কার্যালয়ে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মরহুম অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। গত ১৩ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
সংগঠনের চেয়ারম্যান কবির মুরাদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ, জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান ফরহাদ বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার পর পুলিশের শুরু হওয়া ‘সাঁড়াশি অভিযানের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিরোধী দলকে দমন করতে যে পন্থা তারা (সরকার) নিয়েছে- সাঁড়াশি অভিযান, এতে সাধারণ জনগণকে তারা আক্রমণ করছে, তাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নিয়েছে। ১৩ হাজার আটকের মধ্যে সন্দেভাজন জঙ্গি মাত্র ১৭৯ জন। আবারও না কি শুরু করতে যাচ্ছে- গল্প হলো আজকে। কাদেরকে দমন করতে চাচ্ছেন? বিরোধী দল বিএনপিকে। এতো নির্যাতন ৮ বছর ধরে তারা চালিয়েছেন, এই নির্যাতন করে বিএনপিকে আপনারা দমন করতে পারেননি, বিএনপির আদর্শকে দমন করতে পারেননি। সেজন্য আজকে আবার নতুন করে দমন করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।
গণতন্ত্রের ‘জানালা-দরজা’ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দিন, গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রকে প্রসারিত করুন, এমনিতেই সংকুচিত করে ফেলেছেন। গণতন্ত্রের জানালা-দরজা খুলে দেন,  জঙ্গিবাদ এমনিতেই পরাজিত হবে, গণতন্ত্রের কাছে জঙ্গিবাদ পরাজিত হবে। দেশে একদলীয় শাসন চলার অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখুন, পত্র-পত্রিকায় সবখানে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তার দিকে, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষ থাকা, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। তারা সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের আদর্শকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ মনে করে কাজ করছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সব জায়গায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে না, তাদেরকে তারা সরিয়ে দিচ্ছেন। জঙ্গিবাদের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই জঙ্গিবাদের উত্থান বহু আগে থেকে। এই জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের চরম পন্থা- এগুলোর উৎপাদন এই সরকারি দলই করেছিল। সেই ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলকে পুরোপুরি ধবংস করে দেওয়ার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রক্ষীবাহিনী তৈরি করেছিল, যে বাহিনী দিয়ে তারা দেশের হাজার হাজার বিরোধী মতালম্বী তরুণ-কিশোর-যুবকদের হত্যা করেছে। যারাই সেদিন বিরোধিতা করেছে, তাদের হত্যা করেছে, আজকের মতোই মামলা দিয়েছে অথবা পঙ্গু করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা এসে ‘একই কাজ’ শুরু করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এবার সংবিধান পরিবর্তন করে আইন-কানুনকে সামনে নিয়ে তারা আবার একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করছে। সরকারের বিরুদ্ধে ‘দমননীতির’ অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে শুধু বিএনপি নয়, ২০ দলীয় জোট নয়, ভিন্নমত পোষণকারী যেমন মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি করেন না, তাকে আজ ১৩ মাস কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। ইটিভির আবদুস সালাম, আমার দেশ পত্রিকার মাহমুদুর রহমানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নানসহ অনেকেই কারাগারে রয়েছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের আটকিয়ে রাখা হয়েছে।
ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যা মামলায় বিএনপির ঢাকা মহানগর নেতা এম এ কাইয়ুমের বিরেুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার উদ্যোগ চলার অভিযোগও করেন মির্জা ফখরুল। হত্যাকা-ের পরপরই বলা হল- এর সঙ্গে বিএনপি জড়িত। যার সঙ্গে বাস্তবতা ও সত্যের কোনো মিল নেই। কাইয়ুম সাহেব ও তার ভাইকে আসামী করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল বিষয়টাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। যারা অপরাধী তাদেরকে যেন খুঁজে পাওয়া না যায়, সেজন্য এই অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মনিরুজ্জামান মিঞার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জীবন ও কর্মের ওপর স্মরণিকা প্রকাশ করতে জিয়া পরিষদকে পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখানে একটি মতবাদ ও একটিমাত্র দলের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হচ্ছে। স্কুলে পাঠ্য পুস্তকের পরিবর্তন করা হচ্ছে। নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা বাদ দিয়ে ভিন্ন চিন্তাভাবনায় ভরপুর সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জাতীয় কনভেনশন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দু-একজন রাজনীতিবিদকে বলতে দেখা গেছে, এখনই জাতীয় কনভেনশন ডাকার মতো সময় হয়নি। প্রশ্ন জাগে তবে সে সময় কবে হবে। যখন কিছু করার থাকবে না তখন কি সেই কনভেনশনের সময় থাকবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ