শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রধানমন্ত্রী আজ অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় আবেগের এক অনন্য সাধারণ মিলনমেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব অভিহিত করা হয় একে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাঋদ্ধ প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইকেন্দ্রিক বার্ষিক এ বৃহত্তম সম্মিলনকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই কোথাও। কী আয়োজক কর্তৃপক্ষ, কী লেখক-পাঠক-প্রকাশক, কী প্রেসপাড়াÑ সর্বত্রই এর প্রভাব লক্ষণীয়। গত এক বছর যে চত্বরে মানুষ তেমন একটা মারায়নি, সে চত্বরই হয়ে উঠবে লোকারণ্য। হ্যাঁ, আজ সোমবার ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম বিকেলেই পর্দা উঠবে মাসব্যাপী এ বইমেলার। ঘোষিত সূচি অনুযায়ী, জাতীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘসময়ব্যাপ্ত এ মেলা উদ্বোধন করবেন।
সূত্র আরো জানিয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুল সংগীত পরিবেশন করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই দেয়া হবে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫। এবার দশটি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানসহ ১১জনকে এ পুরস্কার দেয়া হবে।  উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি থাকবেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) সভাপতি রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন ও সাধারণ সম্পাদক জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো প্রমুখ। উদ্বোধন মঞ্চে সৈয়দ শামসুল হক রচিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণ প্রকাশিত হবে।
আয়োজক সূত্র জানায়, মেলায় এবার পরিসর বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে স্টলের সংখ্যা। সাজ-সজ্জায়ও নতুনত্ব খুঁজে পাবেন বইপ্রেমীরা। বড় পরিসরে মেলা আয়োজনের কারণ হলো বাংলা একাডেমির হীরক জয়ন্তী উদযাপন। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঐতিহ্য ও গৌরবের হীরক জয়ন্তী পূর্ণ করেছে বাংলা একাডেমি। মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। এবারের গ্রন্থমেলার মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী’। এছাড়া এবারের ৪০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নটি বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী স্মারক হিসেবে ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউসের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে।
ভিভিআইপি নিরাপত্তার স্বার্থে গতকাল বিকেল থেকেই পুরো মেলা ও আশপাশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। গোটা মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে পুরো এলাকা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ডিউটি শুরু হয়েছে গত ২৬ জানুয়ারি থেকেই।
এদিকে, কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের কাছে তাদের সকল প্রস্তÍুতি সম্পন্ন হওয়ার দাবি করলেও বাস্তবে তা হয়নি। দিন-রাত কাজ করার পরও স্টল নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। যেসব স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে সেগুলোকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রতিবছরের মতো এবারো লেখক, পাঠক, প্রকাশক আর  বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণসহ মেলার বর্ধিতাংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। নিরাপত্তা শংকা কাটিয়ে তুলতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কমতি নেই। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুচ্ছপরিকল্পনা নিয়ে সোচ্চার থাকার কথা জানিয়েছেন। একই সাথে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশেষ করে সন্ধ্যার আগেই সর্বসাধারনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন। 
সূত্র জানায়, গত বছর আড়াই লাখ বর্গফুটের সামান্য কিছু বেশি আয়তনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই বছরে চার লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুটের পরিসরে মেলা আয়োজন করা হয়েছে। পরিসর বাড়ার পাশাপাশি মেলার সজা-সজ্জার পরিবর্তন আনা হয়েছে এবার। গত কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুকর্নার থাকলেও এবার তা মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত বছর ৩৫১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল মেলায়, তবে এবার সাড়ে চারশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠা অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের থাকছে ১৫টি প্যাভিলিয়ন। ৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবারও একাডেমির নজরুল মঞ্চে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। মেলার দুই অংশেই ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান দাবি করেন, গত বছরগুলোর সকল রেকর্ড এবার ভাঙ্গবে মেলা। পরিধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নতুনত্বের কারণেই এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা হবে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’। এবার নিরাপত্তার বিষয়টিকেই অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২ শতাধিক সিসি ক্যামরার মাধ্যমে পুরো বইমেলা পর্যবেক্ষণ করা হবে। মেলায় নতুনত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, মেলা এবার রাত ঠিক ৮টায় বন্ধ হবে। অন্য বছরগুলোতে দেখা যায়, রাত ৮টায় বলা হলেও বন্ধ হতে হতে ৯টা সাড়ে ৯টা বেজে যায়। এজন্য এবার রাত সাড়ে সাতটায় বন্ধ করার জন্য সাইরেন বাজবে। ৮টায় মেলা প্রাঙ্গণের সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হবে। তিনি জানান, মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
সূত্র জানায়, গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সজ্জিত করা হয়েছে। চত্বরগুলো নামাঙ্কিত থাকবে ভাষাশহীদ আবুল বরকত, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, সিরাজউদ্দীন হোসেন, ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, শিশুসাহিত্যিক সাজেদুল করিম, হাবীবুর রহমান, ফয়েজ আহমদ এবং রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই-এর নামে। এবার শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। মেলায় এবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে। মেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। এদিকে মেলা আগামীকাল মঙ্গলবার ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ