শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পাবলিক পরীক্ষায় সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা থাকবে না

স্টাফ রিপোর্টার : এখন থেকে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ‘সেরা ২০ বা ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ হিসেবে কোনো তালিকা করা হবে না। বিদ্যমান বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, এ ব্যাপারে আলোচনা করে এটি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গতকাল শনিবার মন্ত্রণালয়ে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য সৎ উদ্দেশে  ‘সেরা ২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ নির্বাচন চালু হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তালিকায় ওপরের দিকে থাকতে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক, অনৈতিক ও অসৎ পথ অবলম্বন করছে। তাই আজ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর শতকরা হার, শতকরা পাশের হার, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠানের গড় জিপিএ মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতিটি বোর্ডে সেরা ২০ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়। একই মানদ-ের ভিত্তিতে জেলাভিত্তিকও সেরা ১০টি করে প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়ে থাকে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) ও জেডিসিতে (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী বলেন, ভালো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করার বিষয়টি আমরা চালু করেছিলাম। আমরা মনে করেছিলাম এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। তারা আরো ভালো করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে এই প্রতিযোগিতায় কে উপরে থাকবে সেজন্য একটি অস্বাভাবিক পথ কিংবা অনৈতিক পথ গ্রহণ করার চেষ্টা কেউ কেউ করছেন। চাপ দিয়ে কেউ পরীক্ষার কেন্দ্র এখানে না করে ওখানে করার জন্য বলছেন। সমস্যার কথা বলছেন। তাদের অসুবিধা হচ্ছে মনে করে আমরা বদলে দিচ্ছি। কিন্তু আসলে দেখা যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য আছে। টপ টুয়েন্টিতে থাকার জন্য কোন কোন স্কুল এ ধরনের অসৎ পথ অবলম্বনের চেষ্টা করছে। তবে যারা এ ধরনের অসৎ পথ অবলম্বনের চেষ্টা করছেন তারা রেহাই পাবেন না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সমস্ত এনালাইসিস ও বিভিন্ন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, টপ টুয়েন্টিটা আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত আমরা আজকেই নিচ্ছি, আমরা ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছি। এখন থেকে টপ টুয়েন্টি, টপ টেন নামে কোন ব্যবস্থা থাকবে না।

যারা সত্যিকারভাবে ভালো করার চেষ্টা করছেন তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তাদের উৎসাহিত করার পথটি একেবারে বন্ধ করে দিচ্ছি না। আপনারা ভালো ফল করুন। আমরা এর স্বীকৃতি দিতে নিশ্চয়ই কোন না কোন পথ বের করবো।
শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যদি দু’একজনকে সেরা করি তবে কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে ইকুইটি ও ইনক্লুসিভনেস হয় না। এখন আমাদের চিন্তা করা উচিত যারা সবাই সেরা হয়। এজন্য সেরা তালিকা উঠিয়ে দেওয়া উচিত। তবে নতুন কোন উপায় বের করা যেতে পারে।
এমসিকিউ পদ্ধতি বাতিলের চিন্তা
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জিপিএ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, কিন্তু আমরা যদি জিপিএ-৫ পেতে এমন কোন পথ গ্রহণ করি যা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এবং যেটি সত্যিকার ফলাফল প্রকাশ না করে তবে তা আমাদের জন্য লাভজনক হবে না। এখন এমসিকিউ ( নৈর্ব্যক্তিক) পদ্ধতিতে ৪০ নম্বর পাওয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষকরা ছাত্রদের সঙ্গে লিঙ্ক করে থাকেন।
তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। বিষয়টি আলোচনা করছি। এমসিকিউ ব্যবস্থাটা কেউ নিজের সুবিধা মতো ব্যবহার করতে পারলে সলিড ৪০ নম্বর সে পেয়ে যাচ্ছে। তাই এমসিকিউ পদ্ধতিটি আমরা রাখবো কি রাখবো না- সে প্রশ্ন আমাদের মধ্যে উঠেছে। আমরা আলোচনা করছি। পরবর্তী সময়ে আমরা শিক্ষাবিদদের সঙ্গে, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করবো। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব।
কিছু শিক্ষক নিজেদের স্বার্থ হাসিলে অনৈতিক কাজ করছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন,পরীক্ষার আগে খাম খুলে প্রশ্ন বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, আবার উত্তরও চলে আসছে। শিক্ষার্থীদের তারা সে উত্তর বলে দিচ্ছেন। এটা আমরা ধরার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, নামিদামি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু কিছু শিক্ষক এসব কাজে যুক্ত রয়েছেন। আমতলীর একটি স্কুল ও বিএফ শাহীন স্কুল এ্যান্ড কলেজ হাতেনাতে ধরা হয়েছে। আরো নামিদামি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাম বলতে পারছি না, কারণ আমাদের হাতে প্রমাণ নেই।
হুঁশিয়ার করে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জড়িতদের বের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলে যাবেন, মামলা হবে, চাকরি তো যাবেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ