শ্রীপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত
শ্রীপুর (গাজীপুর) সংবাদদাতা: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অর্ধ লক্ষাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ। সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে স্থাপন করা হচ্ছে আবাসিক গ্যাস সংযোগ লাইন।
শিল্প কারখানার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতী ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক আচরণে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলার ১টি পৌরসভায় ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামে ইতোমধ্যেই অবৈধ গ্যাস সংযোগের পরিমান অর্ধলক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সংযোগ। প্রতি সংযোগ দিয়ে ১০ থেকে ১৫টি চুলায় রান্না হয়। শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া, চন্নাপাড়া, বেড়াইদেরচালা, বৈরাগীরচালা, ভাংনাহাটি, গিলারচালা, কেওয়া দক্ষিণ খন্ড, কড়ইতলি, দারোগারচালা, মাধখলা, দোখলা, মাষ্টারবাড়ী, মাওনা ও গাজীপুর ইউনিয়নের মাওনা, পাথারপাড়া, সিংদীঘি, সিংগারদীঘি, মাওনা বাজার এলাকা, নয়নপুর, ফরিদপুর, এমসি বাজার, জৈনা বাজার, রাজাবাড়ী, নুয়াগাঁও, সাটিয়াবাড়ী, রাজেন্দ্রপুর, ধলাদিয়া, রাজাবাড়ী বাজার, পাবুরিয়ারচালা, এসব এলাকায় অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি। অনুমোদিত শিল্প লাইন থেকে এসব অপরিকল্পিত অবৈধ সংযোগের কারণে শিল্প কারখানার সংযোগে প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছে বৈধ সংযোগ পাওয়া শিল্প মালিকরা। এদিকে সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা পুলিশ, কতিপয় নামধারী সাংবাদিক, তিতাস গ্যাসের অসাদু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠন করে শিল্প এলাকায় আবাসিক বাড়ীসমূহে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি সংযোগে ৪০-৫০ হাজার টাকা করে আদায় করে এসব সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারের পাওনা মোটা অংকের রাজস্বের টাকা চলে যাচ্ছে এই প্রভাবশালী মহলের পকেটে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিল্প কারখানার উৎপাদন।
নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অদক্ষ কারিগর ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে দেয়া হচ্ছে এসব সংযোগ। এতে দিন দিনই বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতী ভয়াবহ দুর্ঘটনা। নাম প্রকাশ না করে এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় সংঘবদ্ধ দালালচক্র, নামধারী সাংবাদিক তিতাস কর্মচারী ও পুলিশের যোগসাজসে দিচ্ছে এসব সংযোগ। অবৈধ সংযোগের খবর দিলেও কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে ৮/১০ কি: মি: গ্রামের ভেতর চলে গেছে এসব সংযোগ লাইন। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। প্রতিটি শাখা সড়কে চলাফেরা করলেই চোখে পড়ে রাস্তা কেটে গ্যাস নেয়ার ছবি। এলাকাবাসী জানায়, দালালরা বিভিন্ন মহলে নিয়মিত বখড়া দিয়েই চালাচ্ছে অবৈধ কাজ। গ্যাস সামগ্রী নির্বাচিত ও অনুমোদিত দোকান ছাড়া বিক্রি নিষেধ হলেও মাওনা, জৈনা বাজার, মাষ্টারবাড়ী, বাঘের বাজারের বিভিন্ন দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সামগ্রী।
এলাকাবাসী তিতাস গ্যাসের কর্তাদের না পেলেও ইউএনও/ওসিকে জানালেও কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহিত হয়নি। রাতদিন নিরাপদে নির্বিঘ্নে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেয়া হলেও তিতাস কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা নেই। ওসি পুলিশের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, খবর পেলেই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশকে টাকা না দিয়ে সংযোগ দিতে গিয়ে ইতিপুর্বেই বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে নিরীহ গ্রাহকদের নামে। তারা জানায়, পুলিশকে টাকা দিলে নিরাপদে লাইন সংযোগ দেয়া যায়। মামলারও কোন ঝুঁকি থাকে না। ইউএনও জানায়, তিতাস গ্যাস কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে অবিলম্বে কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে তিতাস গ্যাস এর গাজীপুর অঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যানেজার হুমায়ুন কবিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এক পর্যায়ে অবৈধ সংযোগগুলো বৈধ করা নেয়া হবে।